শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

দেশীয় মাছের আকাল

গোপালগঞ্জে জেলে পরিবারের দুর্দিন

স্টাফ রিপোর্টার, গোপালগঞ্জ থেকে : | প্রকাশের সময় : ২৫ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ভরা বর্ষা মৌসুমেও গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার বিলাঞ্চলে দেশি প্রজাতির মাছের দেখা নেই। খাল-বিল ও পুকুরে বর্ষা মৌসুমে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় দেশি মাছ শূন্য হয়ে পড়েছে এসব এলাকা।

এছাড়া নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের অবাধ ব্যবহার, মাছের অভয়াশ্রম ধ্বংস, শুষ্ক মৌসুমে শ্যালো মেশিনের সাহায্যে পানি সেচে মাছ ধরার অবাধ প্রবণতা, কৃষি জমিতে মাত্রারিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ, প্রজনন মৌসুমে পোনা মাছ নিধন এবং মৎস্য আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় এ উপজেলার মৎস্য সম্পদ দিন দিন বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।

এ কারণে মৎস্যজীবি ও আড়তদারদের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে। মাছ শূন্য হওয়ায় অধিকাংশ জেলে পরিবার কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। আবার অনেকে পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। জেলেদের টাকা দাদন দিয়ে লোকসানের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় আড়তদাররা।
বিল অধ্যুষিত কাশিয়ানী উপজেলা মৎস্য ভান্ডার হিসেবে বেশ পরিচিত। এখানকার মানুষের প্রধান পেশা কৃষি হলেও জনসংখ্যার একটি বড় অংশ মৎস্য সম্পদের উপর নির্ভরশীল। সরকারি হিসাব মতে কাশিয়ানী উপজেলায় ২ হাজার ৩৯০ জন জেলে এই পেশার সাথে জড়িত রয়েছেন। কিন্তু বেসরকারি হিসেবে প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ এ পেশার সাথে জড়িত রয়েছেন।

সরেজমিন উপজেলার কয়েকটি হাট-বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশী মাছের পরিবর্তে পুকুরে চাষ করা রুই, কাতলা, সিলভার কার্প, বিদেশি মাগুর, ঝাটকা ইলিশ, পাঙ্গাস, বিদেশি কৈ ও তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন ধরণের মাছ বিক্রি হচ্ছে। মাঝে মধ্যে বাজারে দেশি মাছের দেখা মিললেও দাম অনেকটা নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।

এদিকে, বর্ষা মৌসুমকে ঘিরে স্থানীয় আড়তদাররা জেলেদের লাখ লাখ টাকা দাদন দিয়েছেন। কিন্তু এ বছর পানির অভাবে মাছশূন্য হয়ে পড়ায় আড়তদার ও জেলেদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম হতাশা।
কাশিয়ানী উপজেলার সিঙ্গা গ্রামের কৃষক রমেশ মন্ডল বলেন, এক সময় এ অঞ্চলের নদী-নালা, খাল-বিল ও পুকুর-ডোবায় নানা প্রজাতির প্রচুর দেশিয় মাছ পাওয়া যেতো। কিন্তু এ বছর বর্ষা মৌসুমে খাল-বিল ও পুকুরে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় দেশি মাছের দেখা নেই। তাই দেশি মাছ শূন্য হয়ে পড়েছে কাশিয়ানীর হাট-বাজারগুলো।

কাশিয়ানী উপজেলার রামদিয়া গ্রামের জেলে স্বপন মোল্লা বলেন, মাছ না পাওয়ায় আমরা খুব কষ্টে আছি। সংসার চালাতে খুব হিমশিম খেতে হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে ছেলে-মেয়ে নিয়ে কিভাবে চলবো সেই দুচিন্তায় আছি।
আড়তদার কৃষ্ণ বিশ্বাস জানান, লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে আশায় বুক বেঁধে আছি। প্রতি বছর বর্ষার শুরুতেই আড়তে প্রচুর মাছ আসে। এবারও সেই আশায় ছিলাম। কিন্তু এ বছর মাছের দেখা নেই। তাই ব্যবসা নিয়ে চরম শঙ্কায় আছি।’

কাশিয়ানী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহ জাহান সিরাজ দেশি মাছ সঙ্কটের কথা স্বীকার করে বলেন, জমিতে মাত্রারিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ, শুষ্ক মৌসুমে খাল-বিল, পুকুর ভরাট ও সেচে মাছ ধরার প্রবণতা, নির্বিচারে ছোট মাছ নিধনসহ নানা কারণে দেশি প্রজাতির মাছ বিপন্ন হয়ে যাচ্ছে। এ বছর বর্ষা মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টি নেই। এ কারণে বর্ষার ভরা মৌসুমেও বাজারে দেশি প্রজাতির মাছের আমদানী নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন