শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে গত ক’বছর যাবত পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় নদী-নালা-খাল-বিল ও জলাশয়ে প্রাকৃতিক মাছের চলছে তীব্র আকাল। বংশবিস্তারেও ঘটেছে মারাত্মক বিপর্যয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় একদিকে যেমন নদী-নালা-খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়ায় যেমন প্রাকৃতিক মৎস্যসম্পদ ধ্বংস হয়ে গেছে, তেমনি ঘটেছে পরিবেশ বিপর্যয়। এরফলে শত শত জেলে বেকার হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
অপরদিকে ঝিনাইগাতীর বিভিন্ন বিল সেঁচে অবাধে ধরা হচ্ছে মাছ। এতেও ছোট-বড় মাছের বংশবিস্তার, জলজ উদ্ভিদ এবং জীববৈচিত্র্য বিপন্ন হচ্ছে মারাত্মকভাবে। বিল সেঁচে মাছ ধরা নিষিদ্ধ হলেও এখানে বিল সেঁচে মাছ ধরা হচ্ছে দেদার। জনগণ জানেই না যে, বিল সেঁচে মাছ ধরা নিষিদ্ধ! উল্লেখ্য , মে-জুন মাসেই সাধারণত বেশিরভাগ মাছ ডিম ছাড়ে। আর এই ডিমগুলো ফুটে জুলাই-আগস্ট মাসে। পোনা মাছ আকারে তা এই সময়টায় বড় হয়।
এছাড়াও উচ্চ তাপমাত্রার কারণে অনেক মাছের ডিম শুকিয়ে গেছে মাছের পেটেই। জুলাই এর শেষের দিকে সামান্য বৃষ্টিতে পানি এলেও প্রাকৃতিক মাছ কৈ, মাগুর, সিং, টেংড়া, পুটি, দারকিনা, মলা, চেলা, ঢেলা, চিংড়ি ইত্যাদি ছোট মাছ ছাড়াও প্রাকৃতিক বড় বড় মাছ পাওয়া যেত। তবে কালে ভদ্রে এখনো কিছু কিছু প্রকৃতিক মাছ পাওয়া যায়। এবার তাও দেখা যাচ্ছে না। বলতে গেলে এসব মাছের পোনা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। অথচ সেই আদিকাল থেকেই ঝিনাইগাতীর নদী-নালা-খাল-বিলে পর্যাপ্ত প্রকৃতিক মাছ পাওয়া যেত। যা এখানকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য স্থানেও চলে যেত।
তাছাড়া নিচু জমিতে চাষাবাদের সময় রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহারও মাছ ধ্বংসের অন্যতম কারণ বলে মনে করা হয়। তার মাঝে আবার কারেন্ট জালের ব্যাপকতায় খাল-বিল-নদীতে মাছের রেণু ধরা পড়ায় প্রাকৃতিক প্রজননও প্রচন্ডভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। জেলার ঝিনাইগাতীর প্রবীণ ব্যক্তি ডা. আব্দুল বারী. সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ ওয়াহেদ প্রমুখ গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ এই প্রতিবেদককে জানান, মাত্র ১০/১২ বছর আগেও ধলী, গজারমারী, নিশ্চিন্দা বেঙ কোড়া, ইত্যাদি বিলে ১০/১৫ কেজি ওজনের শোল, গজার, বোয়াল, আইর, চিতল ইত্যাদি মাছ পাওয়া যেত। অথচ এসব কথা নতুন প্রজন্মের কাছে এখন শুধুই মনে হবে কল্পকাহিনী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন