চলতি আগস্ট মাসে একে একে চারটি পশ্চিমা লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশের সংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগরে যদি এসব লঘুচাপ সৃষ্টি হতো তাহলে ভাদ্র মাসের ‘স্বাভাবিক’ বর্ষণের সম্ভাবনা ছিল। যা এখন অনুপস্থিত। পশ্চিমা লঘুচাপ শুষে নিচ্ছে উত্তর বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ-অভিমুখী মেঘমালা। বৃষ্টিপাতের আবহ রোধ করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষ করে এ বছরের ‘এল নিনো’ অবস্থার প্রভাবে আবহাওয়া এলোমেলো আচরণ করছে। গতকাল বৃহস্পতিবার উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এবং গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও এর সংলগ্ন উত্তর ওডিশায় আবারো একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবে মানুষের বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধির প্রকোপ বাড়ছে। এরফলে সার্বিকভাবে দেশের উৎপাদনশীলতা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষয়ক্ষতি ঘটছে বলে গতকাল চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে বিশেষজ্ঞগণ অভিমত দিয়েছেন।
মধ্য-ভাদ্রে এসেও অনাবৃষ্টি, খরা ও অসময়ের তাপদাহে সারাদেশে অস্থির হয়ে উঠেছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। সেই সাথে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও লোডশেডিংয়ের কারণে জনদুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। গতকাল দেশের অধিকাংশ জেলায় তাপমাত্রার পারদ ছিল ৩৪ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও ঊর্ধ্বে। সারাদিনে মাত্র ৩ মিলিমিটার পিনপিনে বৃষ্টিপাতের মধ্যে রাজশাহীতে ছিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬.২ ডিগ্রি সে.। ঢাকার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫.৬ এবং সর্বনিম্ন ২৮.১ ডিগ্রি সে.। তবে ঢাকায় বাস্তব তাপানুভ‚তি ৪০ ডিগ্রির ঊর্ধ্বে। আজও দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এমনটি বলা হয় আবহাওয়া পূর্বাভাসে।
টানা খরতপ্ত আবহাওয়ায় প্রায় সর্বত্র মৌসুমী রোগ-ব্যাধির প্রকোপ রয়েছে। দেখা দিচ্ছে নতুন নতুন ভাইরাস জ্বর, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, বাতজনিত রোগ।
গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর ও খুলনা বিভাগ ছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশালসহ দেশের অন্যত্র তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি। দিনাজপুরে ১৩৮, রংপুরে ৪৩, সৈয়দপুরে ৯১, খুলনায় ২৫, সাতক্ষীরায় ১৮, নিকলিতে ৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়।
আজ (শুক্রবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানা গেছে, দেশের কিছু কিছু অথবা দুয়েক জায়গায় বিক্ষিপ্ত হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা এবং এরপরের ৫ দিনে আবহাওয়ায় পরিবর্তন হতে পারে।
বর্ষার মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর কম সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল থেকে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে।
অর্থনৈতিক ও সামজিক ক্ষতি
জলবায়ু পরিবর্তনের আঘাত আসছে মানুষের স্বাস্থ্যেও ওপর। এরফলে বিভিন্নভাবে ক্ষতির শিকার মানুষ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে লক্ষ্য করা গেছে, আগের তুলনায় চর্মরোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বিভিন্ন দেশে দ্রæত আবহাওয়া পরিবর্তন ঘটছে। সেখানে বৃদ্ধি পাচ্ছে ত্বকের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গতকাল বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চর্মরোগ শীর্ষক সেমিনারে আলোচকগণ একথা বলেন।
তারা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিগুলির অন্যতম হলো দাবদাহ, পাহাড়ি এলাকায় অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ও উপক‚লীয় এলাকায় বন্যা। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে এসব প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। এ কারণে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এ ক্ষতি লাঘবের জন্য আমাদের অভ্যাস ও জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে হবে। পরিবেশ-প্রকৃতি, বনজ সম্পদ, জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা করা প্রয়োজন। সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম।
চমেক হাসপাতালের চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগের প্রধান ডা. মোহাম্মদ রফিকুল মাওলার সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক একেএম রফিক আহমেদ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন