মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে হোয়াইট হাউস নতুন একটি পরিকল্পনার কথা বিবেচনা করছে। এই পরিকল্পনায় বিশ্বের অধিকাংশ দেশ থেকে উদ্বাস্তু প্রবেশ কঠোর ভাবে কর্তন করবে ও তাদের পুনর্বাসন কার্যকর ভাবে বন্ধ করবে।
এটা হবে কয়েক দশকের পুরনো কর্মসূচি বাতিল। এর আওতায় যুদ্ধ, নিপীড়ন ও দুর্ভিক্ষ থেকে রক্ষা পেতে হাজার হাজার লোককে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ ও বসবাসের অনুমতি দেয়া হত। বর্তমান ও সাবেক প্রশাসন কর্মকর্তারা এ কথা জানান। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে অনুষ্ঠিত বৈঠকগুলোতে একজন শীর্ষ প্রশাসন কর্মকর্তা এ কর্মসূচি সম্পূর্ণ বাতিলের প্রস্তাব করেন। তবে প্রেসিডেন্টকে জরুরি ক্ষেত্রে উদ্বাস্তুদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি প্রদানের ক্ষমতা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। শীর্ষ কর্মকর্তারা আরেকটি প্রস্তাবও বিবেচনা করছেন যা উদ্বাস্তুদের সংখ্যা অর্ধেক বা তারও বেশি কমিয়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার করবে।
তবে এক্ষেত্রে কয়েকটি হাতে গোনা দেশ বা বিশেষ মর্যাদা পাওয়া গ্রæপের লোকদের জন্যই শুধু প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত থাকবে। যেমন ইরাকি ও আফগানরা যারা আমেরিকান সৈন্য, ক‚টনীতিক এবং যারা বিদেশে গোয়েন্দা কর্মীদের সাথে কাজ করে।
উভয় প্রস্তাবই যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বের সর্বত্র থেকে উদ্বাস্তু গ্রহণকারী নেতার মর্যাদার অবসান করবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রে উদ্বাস্তু প্রবেশের সংখ্যার একটি সিলিং নির্ধারণ করবেন কিনা তা আলোচনার জন্য হোয়াইট হাউজ আগামীকাল মঙ্গলবার সিচুয়েশন রুমে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পরিকল্পনা করেছে। সেখানে এ বিষয়টি প্রধান হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রিফিউজি ইন্টারন্যাশনালের সভাপতি এরিক সোয়ার্জ বলেন, জ্ঞাত ইতিহাসে উদ্বাস্তুদের সংখ্যা যখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে সে সময় এসব দুর্বল লোকদের বসবাসের সুযোগ দিয়ে রক্ষার ব্যবস্থা না করে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের নেতৃত্ব পরিত্যাগ করছে। এর ফল হচ্ছে এই যে বিশ্ব অধিকতর কম সহানুভ‚তিশীল এবং ভবিষ্যত মানবিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আরো অযোগ্য হয়ে পড়ছে।
গত দুই বছর ধরে ট্রাম্পের শীর্ষ অভিবাসন উপদেষ্টা স্টিফেন মিলার উদ্বাস্তু সংখ্যা ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে হ্রাস করতে তার গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ব্যবহার করেছেন। তার এ বছরের পরিকল্পিত উদ্বাস্তুর সংখ্যা ৩০ হাজার। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যখন পদ ছাড়েন তখনকার চেয়ে এ সংখ্যা ৭০ শতাংশেরও বেশি কম।
এ পদক্ষেপ হচ্ছে আমেরিকায় প্রবেশ থেকে আশ্রয় প্রার্থীদের উপর অসংখ্য বিধিনিষেধ আরোপসহ বৈধ ও অবৈধ উভয় প্রকার অভিবাসী সংখ্যা হ্রাসে ট্রাম্পের ব্যাপক ভিত্তিক চেষ্টার অংশ। যারা উদ্বাস্তুদের মত নিপীড়ন থেকে রক্ষা পেতে মেক্সিকো বা কানাডা সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করছে।
ট্রাম্প মিলার এবং হোয়াইট হাউস থেকে যে সব লোকদের পররাষ্ট্র দফতর ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটিতে নিয়োগ দিয়েছেন তারা এই কর্মসূচিকে আরো সঙ্কুচিত করতে জোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন বলে একজন উর্ধতন কর্মকর্তা ও কয়েকজন সাবেক কর্মকর্তা জানান। এ ব্যাপারে হোয়াইট হাউস কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা মন্তব্য করেননি।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অভিবাসন দফতরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জন জাদরোজনি অভিবাসীদের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনার যুক্তি প্রদর্শন করেছেন। আর এ খবর প্রথমে ‘পলিটিকো’তে প্রকাশিত হয়েছিল। অন্যরা ইরাক ও আফগানিস্তানের মত দেশ বা সে সব দেশের মানুষের জন্য ছাড়ের প্রস্তাব করেছেন। যারা আমেরিকান সরকারের পক্ষে কাজ করে নিজেদের ও পরিবারের সদস্যদের ঝুঁকির মুখে ফেলেছেন। এই ছাড় উদ্বাস্তু কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের যুক্তরাষ্ট্রে আসার বিশেষ মর্যাদা লাভের যোগ্য করবে।
প্রশাসনের বাইরে ও ভিতরে প্রায় ৪০ বছরের পুরনো এই কর্মসূচির প্রবক্তারা আশঙ্কা করছেন যে এ পদক্ষেপ কার্যকর ভাবে কর্মসূচিকে ব্যাহত করবে। যার ফলে সামান্য সংখ্যক লোকদেরও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের সুবিধা পাওয়া অসম্ভব হবে। অ্যাডভোকেসি গ্রুপ বলে, এ কর্মসূচি উদ্বাস্তুদের সংখ্যা ক্রমেই সঙ্কুচিত করছে।
সাবেক লবিইস্ট ও প্রতিরক্ষা চুক্তি নির্বাহী মার্ক টি. এস্পার মোটে মাস দুয়েক হল প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। বছরে কত সংখ্যক অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেয়া হবে সেই বার্ষিক বিতর্কে এই নতুন পেন্টাগন প্রধান হচ্ছেন নতুন কন্ঠস্বর।
তবে তার পূর্বসূরী জিম ম্যাটিস উদ্বাস্তু সমস্যাটি মিশনারি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতেন। তাদের সংখ্যা বড় রকম কমানোর ব্যাপারে বাধা দিয়ে বলতেন যে বিশ্বব্যাপী আমেরিকার সামরিক স্বার্থে তাদের প্রয়োজন থাকতে পারে। সেখানে এস্পারের অবস্থান সম্পূর্ণ অজানা।
প্রতিরক্ষা বিভাগের সিনিয়র সামরিক নেতৃত্ব তার পূর্বসূরির দৃষ্টান্ত অনুসরণের জন্য এস্পারের উপর জরুরি চাপ সৃষ্টি করেছেন। তাকে উদ্বাস্তু কর্মসূচির পক্ষে কাজ করতে বলেছেন বলে পেন্টাগনের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান।
কিন্তু বর্তমান ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তারা বলেন, আগামী সপ্তাহে হোয়াইট হাউসের সভায় অধিক সংখ্যক উদ্বাস্তুর আমেরিকায় প্রবেশের পক্ষে তিনি লড়াই করবেন কিনা প্রতিরক্ষা মন্ত্রী তা প্রকাশ করেননি। একজন সাবেক জেনারেল এস্পারের অবস্থাকে গর্তে লুকানো শিয়ালের মত বলে আখ্যায়িত করেন।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, এ বছর উদ্বাস্তু কর্মসূচির জন্য তার সুপারিশ কী হবে সে ব্যাপারে এস্পার কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। এ অবস্থায় অবসরপ্রাপ্ত জেনারেলদের একটি শক্তিশালী গ্রুপ এবং মানবতাবাদীগণ ও মানবাধিকারবাদী গ্রুপগুলো ম্যাটিসের নীতি অনুসরণ করার জন্য এস্পারকে রাজি করানোর চেষ্টা করছেন। (আগামী সংখ্যায় শেষ হবে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন