এস এম জোবায়ের : বড় পাহার ছোট পাহার, সবুজে ঘেরা পাহাড়। চার পাশে যে দিকে দৃৃষ্টি যায় সে দিকেই মায়াবী পাহাড়ের হাত ছানি। পাহাড়গুলো গাছের সবুজ হালকা অন্ধকারে ঢাকা আর পুরোটাই আলোর পরশ ভুলানো। লাল মাটির পাহাড়ের দৃঢ়তা এখানে আকাশের কোমলতাকে ছুয়ে যায়। বিশাল পাহাড়ি এলাকার নাম একটাই লালমাই পাহাড়। এ পাহাড়ের পাদদেশে জ্ঞানের আলো নিয়ে বীরদর্পে দাঁড়িয়ে আছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ২৮ মে ২০১৬ ছিল দশম কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। দশ বছর পেছনে ফেলে ১১ বছরে পা দিয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। দিবসটির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবারের সদস্যও চোখে মুখে এক ধরনের প্রাপ্তির ছাপ।
সেই বৃটিশ আমল থেকে কুমিল্লার আপামর মানুষের প্রত্যাশা ছিল এই মাটিতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার। ১৯৬২ সালে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার সিন্ধান্ত হলেও সেই সিদ্ধান্তে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। দীর্ঘ ৪৪ বছর পর ২০০৬ সালে দেশের ২৬তম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৭ সালের ২৮ মে ৩০০ শিক্ষার্থী ও ১৫ জন শিক্ষক নিয়ে এ বিদ্যাপীঠ আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। প্রথমে চারটি অনুষদের অধীনে গনিত, ইংরেজী,অর্থনীতি লোকপ্রশাসন, হিসাব বিজ্ঞান ব্যবস্থাপনা, মার্কেটিং এই সাতটি বিভাগ নিয়ে যাত্র শুরু হয়। পরবর্তীতে কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি, বাংলা, নৃবিজ্ঞান, পদার্থ, রাসায়ন, পরিসংখ্যান, প্রতœতত্ত¡ ফিনান্স এন্ড ব্যাংকিংও ফার্মেসি, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, আইন বিভাগ চালু হয়। ১৯টি বিভাগ ও ৫০০০ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের প্রাণ জুড়ে আছে। শিক্ষক আছেন ১৬০ জন। দশটি ব্যাচের মধ্যে প্রথম চারটি ব্যাচ ¯œাতক শেষ করে দেশ ও দেশের বাহিরে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত আছে। শিক্ষার্থীদের জন্য চারটি হল রয়েছে। ছাত্রদের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, কাজী নজরুর ইসলাম হল, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হল ও ছাত্রীদের জন্য নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরাণী হল। আপাতত ৫০ একর জমির উপর এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, ‘প্রস্তাবিত ২০১৬-১৯ সালের প্রকল্পে ৫০ একর ভূমি, ১০ তলা বিশিষ্ট একটি ছাত্রী হল, একটি ছাত্র হল, একটি অডিটরিয়াম, ১০ তলা বিশিষ্ট একটি একাডেমিক ভবন, ডিন কমপ্লেক্স, পরো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য পানির ট্যাংক, মেইন গেইট পুনর্নির্মাণের জন্য ইউজিসিতে আবেদন করেছি।’
বয়সে নবীন এই বিশ্ববিদ্যালয় ভৌগোলিকভাবে বেশ গুরুত্ব বহন করে। বর্তমান সময়ে সকল সেবার জন্য শিক্ষার্থীদের যোগ্য করে তুলতে শিক্ষার মহৎ কাজ করছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। পাহাড়ের চূড়ায় প্রতিষ্ঠিত একাডেমিক ভবনগুলো শিক্ষার গর্বে সমাসীন। এখানে পাহাড়িয়া সবুজের মাঝে জ্ঞানের চাষ হয়।
জ্ঞানের সিঁড়ি বেয়ে ধাপে ধাপে যেমন জ্ঞান অর্জন করতে হয় তেমনি শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জনের জন্য পাহাড়ের উপরের ভবনগুলোতে সিঁড়ি মাড়িয়ে উপরে উঠতে হয়। অনেক সময় ক্লান্ত উপরে উঠতে শ্রান্ত হয় শিক্ষার্থীরা তবে তারা জ্ঞান অর্জনে থামবার নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়টি আবাসন সংকট, শ্রেণিকক্ষ সংকট, থাকলেও পিছিয়ে নেই শিক্ষা, সংস্কৃতি, জ্ঞান চর্চায়। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাহিরের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিনারেও সাংস্কৃতিক কাজে অংশ নিচ্ছেন স্বতস্ফুর্তভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের গানের সংগঠন ‘প্রতিবর্তনে’র সভাপতি অনুপম দাশ বাঁধন বলেন, ‘নবীন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়। অনেক কিছুই নেই আমাদের। এখন পর্যন্ত আমার সংগঠনের বসার রুম নেই। তবু নানা সংকটের মধ্যে আমরা সম্ভাবনা দেখতে পাই। আমরা তো বসে নেই পারফর্ম করছি নিয়মিত।’
পাহাড়ের চূড়া থেকে পাদদেশ পর্যন্ত সবুজ বনজ নানা উদ্ভিদ। আছে নাম না জানা বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের গাছ যা প্রাকৃতিক সুন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী গৌতম বল্লভ অধিকারী বলেন, ‘প্রাকৃতিকভাবেই আমাদের ক্যাম্পাসটি অনেক সুন্দর। তবে ক্যাম্পাসের রাস্তার চারপাশ, একাডেমিক ভবনসহ অন্যান্য স্থানগুলোকে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য প্রশাসন কাজ করলে আরও ভাল লাগবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের সদ্য ¯œাতকোত্তর সম্পন্ন বিদায়ী শিক্ষার্থী জালাল আহমেদ বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়টি আমাকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে তৈরি করেছে।’
‘আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নেয়ার। সরকার সংশ্লিষ্ট মহলে আমাদের প্রতিনিয়ত যোগাযোগ আছে। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলের সহযোগিতায় এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয়কে ভাল একটি পর্যায়ে নেয়া যাবে বলে আশা ব্যক্ত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আলী আশরাফ।
জন্মের দিনে নানা রঙে সেজেছিল আলোর ঘর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যায়। সকালের র্যালির মাধ্যমে শুরু হয়েছিল দিবসটির উদযাপনের কার্যক্রম। পরে কেক কাটা, শান্তির প্রতীক পায়রা উড়ানো ও বৃক্ষ রোপণ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটোগ্রাফিক সোসাইটির ব্যতিক্রমধর্মী ফটো এক্সিভিশন ফটো প্রেমিদের মধ্যে নিয়ে আসে ভিন্ন আনন্দের মাত্রা। বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গানের সংগঠন প্রতিবর্তন ও প্লাটফর্মের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা সবার মধ্যে নিয়ে আসে প্রাপ্তির স্বাদ। সন্ধ্যার পর ব্যান্ড দল শিরোনাহীনের গানে আর নাচের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় দিবসটি উদযাপন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন