শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

গার্মেন্ট শিল্প ধ্বংসের আগেই রক্ষার উদ্যোগ নেয়া জরুরি

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ও অগ্রগতির বিষয়টি এখন আর অস্বীকার করা যায় না। সমহারে না হোক, অসমহারে হলেও উন্নতি হচ্ছে। সরকারের দাবী মোতাবেক জিডিপি প্রবৃদ্ধির উল্লম্ফন ঘটেছে। সরকারের অগ্রাধকিার ভিত্তিক বিভিন্ন প্রকল্প ও অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। কোটিপতির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সাধারণ মানুষের কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও তার সম্ভাবনা না থাকা সত্তে¡ও অন্তত সচ্ছন্দে চলার জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যে যার অবস্থান থেকে অর্থনৈতিক ও জীবনমানের উন্নতি ঘটানোর জন্য ছুটে চলেছে। দেশে এক ধরনের অর্থনৈতিক চাঞ্চল্য রয়েছে। তবে এই চাঞ্চল্য অনেকটা একপেশে। জনগণের বিরাট একটা অংশ যোজন- যোজন দূরত্বে পড়ে থাকলেও একটি শ্রেণী সুপারসনিক গতিতে এগিয়ে চলেছে। তাদের যেমন অর্থকড়ির অভাব নেই, তেমনি অর্থের বিশাল প্রবাহ তাদের কোষাগারমুখী হয়ে পড়েছে। দেশের সচেতন মানুষসহ সাধারণ মানুষও অর্থনীতির এই বৈষম্যের কথা জানে। তবে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির চকচকে চিত্র দেখে বিশ্বের অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশগুলো এখন বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করছে। এই গত কয়েক বছর আগেও পোশাক খাতকে বিশ্বের অন্যতম ‘এক্সপোর্ট পাওয়ার হাউস’ এবং ‘হট বেড’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এর কারণ এই শিল্প থেকেই রপ্তানির শতকরা ৮৩ ভাগ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। বিশ্বের নামী-দামী পোশাক প্রতিষ্ঠান-ওয়ালমার্ট, লিভাইস, টমি হিলফিগার, কেলভিন ক্লেইন, গ্যাপ, এইচ অ্যান্ড এম, প্রাইমার্ক বাংলাদেশ থেকে তাদের পোশাক কিনে। ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ লেখা ট্যাগ ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ অন্যান্য দেশের নাগরিকদের কাছে প্রিয় ব্র্যান্ড। তাদের কাছে বাংলাদেশের পোশাক ‘অ্যামেজিং ফ্যাশন অ্যামেজিং প্রাইস’ বা অসাধারণ পোশাক, সাশ্রয়ী মূল্য’ হিসেবে পরিচিত। এসব তথ্য তুলে ধরার কারণ হচ্ছে, বিশ্ব অর্থনীতিতে এক সময়ের অচ্ছুৎ বাংলাদেশকে গার্মেন্ট শিল্প কোন অবস্থানে নিয়ে গেছে এবং কিভাবে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ বাংলাদেশ নামটি তাদের শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছে, তা বোঝানোর জন্য। দুঃখের বিষয়, অর্থনীতি এবং রপ্তানি বাণিজ্যের প্রধানতম এই খাতটি এখন ক্রমেই ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। একের পর এক পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। একটি পরিসংখ্যান দিলেই খাতটি ধ্বংসের আলামত স্পষ্ট হয়ে উঠবে। পোশাক শিল্পের সংগঠন বিজিএমইএ-এর গবেষণা সেলের তথ্যানুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ১২০০টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। নিকট ভবিষ্যতে আরও কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেকার হয়েছে হাজার হাজার শ্রমিক। সামনে আরও বেকার হবে। এ পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়, দেশের প্রধানতম রফতানি খাতটি ধীরে ধীরে করুণ পরিস্থিতির দিকে ধাবিত। এক সময়ের প্রধান অর্থকরী ফসল পাট যেভাবে ধীরে ধীরে ধ্বংস হয়ে এখন তলানিতে পড়ে আছে। গার্মেন্ট শিল্পও এখন সেদিকেই যাচ্ছে।
দুই.
এক সময় পাটের জন্য বিশ্বে বাংলাদেশ ‘প্রাচ্যের ডান্ডি’ হিসেবে পরিচিত ছিল। পাটকে বলা হতো ‘গোল্ডেন ফাইবার’ বা সোনালী আঁশ। কালক্রমে নানা সমস্যা ও ষড়যন্ত্রের কবলে পড়ে পাটশিল্প মৃতপ্রায়। সোনালী আঁশ এখন সোনালী অতীত। এই শিল্পকে আমরা ধরে রাখতে পারিনি। এই ব্যর্থতা আমাদের। অন্যদিকে উদ্যোক্তাদের নিরলস পরিশ্রম এবং শ্রমিকদের শ্রমে-ঘামে তৈরি পোশাক শিল্প এখন ‘গোল্ডেন ফ্যাব্রিক’-এ পরিণত হয়েছে। সস্তায় পোশাক কেনার জন্য বাংলাদেশ বিশ্বের নামী-দামী ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ‘হট স্পট’ হিসেবে গণ্য করলেও তা নিয়ে শুরু হয়েছে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র। কিছুদিন আগে শীর্ষ স্থানীয় এক গার্মেন্ট শিল্প গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কথায় কথায় বলেছিলেন, ‘এখন এই ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্প টিকে থাকুক, তা দেশী-বিদেশী প্রভাবশালী একটি গোষ্ঠী চাচ্ছে না। কমপ্লায়েন্সের নামে নানা ছুঁতোয়, আমাদের ত্যক্ত-বিরক্ত করে তুলেছে। এক ধরনের মানসিক নির্যাতন ও হয়রানি শুরু করে। তারা এমন পন্থা অবলম্বন করে, যেন বিরক্ত হয়ে আমরা নিজেরাই এ ব্যবসা ছেড়ে দিই। তাদের লক্ষ্যই হচ্ছে, আমাদের বড় বড় প্রতিষ্ঠান যেগুলো বেশির ভাগ অর্ডার বিশ্বে সরবরাহ এবং মূল পাইপ লাইন হিসেবে কাজ করে তাদেরকে এ ব্যবসা থেকে বিতাড়িত করতে পারলেই বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পে ধস নামবে।’ তিনি বলেন, ‘সুপরিকল্পিতভাবেই কাজটি করা হচ্ছে। ছোট ছোট ফ্যাক্টরিকে তারা খুব একটা টার্গেট করছে না। তারা ভাল করেই জানে, বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দিতে পারলে ছোট প্রতিষ্ঠান দিয়ে এ খাত টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।’ তার এ কথা থেকে এ বিষয়টিই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, গার্মেন্ট শিল্পকে যদি এখনই স্থিতিশীল না রাখা যায়, তবে অদূর ভবিষ্যতে এর অবস্থা পাট শিল্পের মতো হয়ে পড়বে। পুরোপুরি ধ্বংস না হলেও ছোট ছোট কারখানা নিয়ে নিভু নিভু অবস্থায় টিকে থাকবে। দেশী-বিদেশী প্রভাবশালী ষড়যন্ত্রকারীদের লক্ষ্যও তাই। তারা যে একটু একটু করে সফল হচ্ছে না, তা নয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, অর্থনীতির লাইফ লাইনে পরিণত হওয়া এই শিল্প যদি বাংলাদেশে বিকশিত না হতো, তাহলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কি হতো? উত্তরটি এভাবে দেয়া যায়, তৈরি পোশাক রপ্তানি না হলে ৪০ লাখ দক্ষ শ্রমিক সৃষ্টি হতো না। তাদের সাথে জড়িয়ে থাকা প্রায় তিন কোটি লোকের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং গার্মেন্টস কারখানাকে ঘিরে এর উপকরণ তৈরির কারখানাও সৃষ্টি হতো না। সমস্ত শিল্পখাতে শতকরা ৪৫ ভাগ কর্মসংস্থান কম হতো। প্রতি বছর গড়ে ১৯ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা থেকে দেশ বঞ্চিত হতো এবং ২০২০ সাল নাগাদ এই আয় তিন গুণ হওয়ার যে সম্ভাবনা, তা চিন্তার বাইরেই থেকে যেত। অর্থনীতির এই যে অফুরন্ত একটি ভান্ডার বা খাত তা যদি ধ্বংস হয়ে যায়, তবে দেশের অর্থনীতি, বেকারত্ব এবং আর্থসামাজিক অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা কি সরকার একবার চিন্তা করছে? সরকার মনে করছে, তার নেয়া বিভিন্ন মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন হলে অর্থনীতি বিরাট আকার ধারণ করবে। তা করবে, তবে রপ্তানি খাতের সবচেয়ে বড় শিল্পটি যদি একেবারে ধসে যায়, তবে অর্থনীতির পাল্লার একটি দিক যে নিচে নেমে যাবে, এ বিষয়টি বিবেচনা করছে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, গার্মেন্টস শিল্পকে ধ্বংস বা রুগ্ন শিল্পে পরিণত করা নিয়ে বহুদিন ধরেই ষড়যন্ত্র চলছে। শুরুতে প্রতিদ্ব›দ্বী দেশগুলো এদশের এজেন্টদের মাধ্যমে শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি ও নাশকতার মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়ে এ খাতকে অস্থিতিশীল করে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করে বলে অভিযোগ উঠতে থাকে। এ অভিযোগ যে ভিত্তিহীন নয়, তা বিভিন্ন সময়ে বিশেষজ্ঞদের মতামতে প্রকাশিত হয়েছে। মূলত গার্মেন্টস শিল্পের অশনি সংকেত দেখা দেয় রানা প্লাজা ধসের মধ্য দিয়ে। তখন বিশ্বব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। এক রানা প্লাজার কারণে গোটা পোশাক শিল্প যেন মহাসগরে পড়ে যায়। এ উছিলায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার (জিএসপি) সুবিধা স্থগিত করে দেয়। পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সুর মিলিয়ে কর্মপরিবেশ ও শ্রমিক নিরাপত্তার অপ্রতুলতার বিষয়টি সামনে রেখে জিএসপি সুবিধা বাতিলের হুমকি দেয়। তারা নানা শর্ত দিতে থাকে। বিদেশি ক্রেতা জোট অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্স দেশে এসে খবরদারি শুরু করে। নানা শর্তে কারখানা মালিকদের নাভিশ্বাস তুলে দেয়। এর প্রতিক্রিয়ায় ছোট ও মাঝারি মানের শত শত গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। খরচ কুলিয়ে উঠতে না পারায় এখন অনেক বড় বড় কারখানা শ্রমিক ছাঁটাই করছে। এর প্রতিবাদের শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনে নামে। এসব আলামত যে এই শিল্পটিকে ধ্বংস করে দেয়ার তা বুঝতে বাকি থাকে না। সরকারের এদিকে দৃষ্টি আছে বলে মনে হয় না। সরকার তার মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়ন নিয়ে ব্যস্ত। অর্থনীতির প্রতিষ্ঠিত একটি খাত যে ধ্বংসের দিকে, তা আমলেই নিচ্ছে না।
তিন.
বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পের শুরুটা সুষম ও পরিকল্পিত ছিল না। বুনো লতা-পাতা ও বৃক্ষরাজির মতোই এর বিস্তার হয়েছে। সংকীর্ণ গলির বাসাবাড়ি ও বিভিন্ন এলাকায় ফ্লোর ভাড়া করে গ্রামের বেকার অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত অদক্ষ ছেলে-মেয়েদের নিয়ে এ শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। একজন একজন করে ছেলে-মেয়েকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ শ্রমিক হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। নতুন আরও শ্রমিক এ শিল্পে যুক্ত হচ্ছে। এ শিল্পের বিস্তার না ঘটলে এসব ছেলে-মেয়ের বেশিরভাগ স্বাবলম্বী হওয়ার পরিবর্তে হয়ত বাসা-বাড়িতে এক ধরনের দাসত্ব বরণ করে চলতে হতো। অর্থাৎ গার্মেন্ট শিল্প অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত যুবকশ্রেণীকে দাসত্বের পথ থেকে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখিয়েছে। আশির দশকের শেষের দিকে বিটিভিতে প্রচারিত হুমায়ূন আহমেদের একটি ধারাবাহিক নাটকে কাজের মহিলা চরিত্রে মরহুমা অভিনেত্রী রহিমা খাতুনের মুখের একটি সংলাপ তখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। কাজের মহিলা গৃহকর্ত্রীর উপর বিরক্ত হয়ে বলেছিল, ‘এত ক্যাচক্যাচ কইরেন না। বেশি ক্যাচক্যাচ করলে গার্মেন্টে চইলা যামু। সেখানে সূঁই দিয়ে একটি টাগ দিলেই অনেক টেকা পাওয়া যায়।’ গার্মেন্ট শিল্পের এই বিকাশ এবং সম্ভাবনার কথা তখন অনেক নাটকেই উঠে আসে। এই শিল্প এখন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মহীরুহ হয়ে উঠেছে। এর ছায়াতলে যেমন লাখ লাখ বেকার আশ্রয় নিয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছে, তেমনি অর্থনীতির চাকা দ্রুত থেকে দ্রুততর হচ্ছে। এই চাকা থামিয়ে দেয়ার জন্য এখন দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারী সক্রিয়। বিশেষ করে প্রতিযোগী দেশগুলোর দিকে বিশেষজ্ঞরা আঙ্গুল নির্দেশ করছেন। এদেশে তাদের এজেন্টরা গার্মেন্ট খাতে শ্রমিক অসন্তোষ ও নাশকতার মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী ভারতকে বাজার দখলের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়ার জন্য ষড়যন্ত্রকারীরা বেশি তৎপর। প্রতিষ্ঠিত এক গার্মেন্ট ব্যবসায়ী কথা প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশের গার্মেন্ট বাজার যদি ধ্বংস হয়ে যায়, সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে ভারত। বাংলাদেশে অনুকূল পরিবেশ না থাকলে ক্রেতারা ভারতের দিকে চলে যাবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বাজার টার্গেট করে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে ইপিজেড গড়ে তোলা হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিযোগী ও প্রভাবশালী দেশগুলোর চর্তুমুখী শর্ত ও ষড়যন্ত্রের প্রচণ্ড চাপে রয়েছে বাংলাদেশ। এ ধরনের চাপ প্রতিযোগী দেশগুলোতে নেই। বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতের কর্মপরিবেশ ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রভাবশালী দেশগুলো যেভাবে মাথা ঘামাচ্ছে, সেভাবে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনামকে নিয়ে ঘামাচ্ছে না। তাদের পরিবেশ যে আমাদের চেয়ে অতি উন্নত, তা নয়। এ থেকেই বোঝা যায়, বাংলাদেশের বাজার নষ্ট করার জন্য প্রতিযোগী দেশগুলো নানাভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং এর অনুঘটক হিসেবে প্রভাবশালী দেশগুলোর জিএসপি সুবিধা স্থগিত ও বাতিল করার হুমকি কাজ করছে।
চার.
বেসরকারিভাবে একটি সমৃদ্ধশালী অর্থনৈতিক খাত গড়ে তোলা এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শীর্ষস্থানে নিয়ে যাওয়া সহজ কাজ নয়। এর পেছনে উদ্যোক্তাদের হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ এবং নিরলস শ্রম ও সময় ব্যয় করতে হয়। বাংলাদেশের উজ্জ্বলতম তৈরি পোশাক খাত আজ যে অবস্থানে পৌঁছেছে তা নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এ খাত ধ্বংস হয়ে গেলে বাংলাদেশের কী অপূরণীয় ক্ষতি হবে, তা অনুমান করা কঠিন নয়। অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার অন্যতম এই চালিকাশক্তিকে রক্ষা করতে সরকার-মালিক-শ্রমিক সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার বিকল্প নেই। অর্থনীতিকে কিভাবে রাজনীতির বাইরে রাখা যায় এ নিয়ে সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা জরুরী। বলার অপেক্ষার রাখে না, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যে অর্থনৈতিক অগ্রগতি, গার্মেন্ট খাত ধ্বংস হয়ে যাওয়ার মতো ক্ষতি এই অগ্রযাত্রাকে শুধু থমকেই দেবে না, এর ভারও বহন করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। গার্মেন্টস শিল্প একটি আন্তর্জাতিক ব্যবসা। এখানে প্রতিযোগিতা করেই টিকে থাকতে হবে। প্রতিযোগী দেশগুলো আমাদেরকে পেছনে ফেলতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে গার্মেন্টস শিল্প উদ্যোক্তাদেরও যথাযথ প্রস্তুতি এবং সুষম পরিকল্পনার মাধ্যমে ক্রেতাদের ধরে রাখার কৌশল অবলম্বন করতে হবে। ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে অভিযোগ করলেই হবে না, ষড়যন্ত্রের পথ কিভাবে বন্ধ এবং ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহত করা যায়, এ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বিরাজমান সমস্যা সমাধান ও উন্নয়নে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। গার্মেন্টস খাতকে টেকসই করে গড়ে তুলতে আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন এবং অবকাঠামো সুবিধাসহ কারখানা স্থানান্তরের জন্য গার্মেন্টস পল্লী গড়ে তোলা সময়ের দাবী। এ ব্যাপারে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দিয়ে এ খাতে নতুন বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে হবে। মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে সমঝোতামূলক সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য নির্দিষ্ট ফোরাম থাকা জরুরী। ফোরাম না থাকায় দাবী জানানোর প্রয়োজন হলে তারা রাস্তায় নেমে আন্দোলন ও ভাঙচুর শুরু করে। এ সুযোগে ষড়যন্ত্রকারীরা নাশকতার মাধ্যমে কারখানার ক্ষতিসাধন এমনকি ধ্বংস করে দেয়। ইতোমধ্যে মালিক ও শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে উভয় পক্ষের প্রতিনিধি নিয়ে একটি কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর ফলে মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে এবং ষড়যন্ত্রকারীরাও সুবিধা করতে পারবে না। এ সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী এবং দ্রুত তা বাস্তবায়ন করা জরুরী। বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘বাংলাদেশের ধারাবাহিক উন্নতি রুখতে রপ্তানি খাত নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। তবে বাংলাদেশের গতিপথ কেউ রুখতে পারবে না।’ আমরাও মনে করি, বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত গর্মেন্টস নিয়ে যে ষড়যন্ত্র চলছে, তা ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দিতে হবে।
darpan.journalist@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন