কাজী সিরাজুল ইসলাম
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম মাধ্যম গার্মেন্ট শিল্প। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকে সুসংহতকরণের ক্ষেত্রে গার্মেন্ট শিল্প দীর্ঘ কয়েক দশক যাবৎ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। এ দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রান গার্মেন্ট শিল্প। অবশ্য দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে চিংড়ি শিল্প, চা শিল্প এবং চামড়া শিল্প বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে চলেছে। অতীতের যে কোনো সময় অপেক্ষা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে। বিশ্ব ব্যবস্থায় বাংলাদেশ যতগুলো বিষয়ে বিশেষভাবে আলোচিত এবং পরিচিত তার মধ্যে অন্যতম গার্মেন্ট শিল্প। বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের মান কেবল শ্রেষ্ঠ তা নয় এদেশের তৈরি পোশাকের কদর বহুগুণ আর তাই অপরাপর গার্মেন্ট সামগ্রী উৎপাদনকারী দেশগুলো বাংলাদেশের উৎপাদনকৃত গার্মেন্ট সামগ্রী হতে পিছিয়ে আছে। বাংলাদেশের বাস্তবতায় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং অর্থনীতিকে সুদৃঢ়করণের ক্ষেত্রে গার্মেন্ট শিল্প বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।
সম্ভাবনাময় গার্মেন্ট শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিকরা মাঝেমধ্যে নিজেদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে বিক্ষোভ মিছিলসহ সভা-সমাবেশ করে থাকে। একশ্রেণির শ্রমিক নামধারীরা কথায় কথায় গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ নানামুখী অপতৎপরতায় জড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পের চলমান উত্থান এবং আন্তর্জাতিক বাজারে এদেশের গার্মেন্ট সামগ্রীর চাহিদার কারণে এদেশের গার্মেন্ট শিল্পের বিরুদ্ধে নানামুখী চক্রান্ত এবং ষড়যন্ত্র থেমে নেই। আর সে কারণে মহলবিশেষ বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পের বিরুদ্ধে চক্রান্ত এবং ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। অগ্রসরমান গার্মেন্ট শিল্পের ক্রমবর্ধমান এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে জিএসপি সুবিধা ফিরে পাওয়ার বিকল্প নেই। বাংলাদেশের বাস্তবতায় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী গার্মেন্টে জিএসপি সুবিধা অবিলম্বে ফিরে না পেলে এ শিল্প সমস্যায় জড়িয়ে পড়বে।
গার্মেন্ট শিল্পে কথায় কথায় শুরু হয় আন্দোলন। যার ফলে গার্মেন্ট শিল্প তার উৎপাদনের গতিশীলতা হারিয়ে ফেলছে। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মালিকদের যেমন চিন্তা করতে হবে, শ্রমিক ব্যতীত তারা তাদের কারখানা চালিয়ে রাখতে পারবেন না, তেমনি শ্রমিকদেরও চিন্তা করতে হবে মালিক ব্যতীত তারাও বেকারত্বের মধ্যে পড়ে যাবে। নিজ নিজ অবস্থান থেকে সরে এসে যদি উভয় পক্ষ অন্যের অবস্থানে দাঁড়িয়ে বিষয়গুলো নিয়ে ভাবে তাহলে সমাধান সহজ হয়।
সাধারণ মানুষ চায় মালিক, শ্রমিক ও সরকার সম্মিলিতভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বর্তমান সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করা। যাতে ভবিষ্যতে এই শিল্প আরো শ্রীবৃদ্ধি ঘটে এবং দেশের অর্থনীতিকে আরো গতিশীল করে গড়ে তুলতে পারে। একইভাবে সরকারের উচিত কঠিনভাবে সেসব সন্ত্রাসীদেরকে দমন করা, যারা আন্দোলনের নামে সম্পদের ক্ষতি করছে। কারণ কোনো শ্রমিক তার মালিকের কারখানা ধ্বংস করে দিয়ে বেতন বৃদ্ধির দাবি করতে পারে না। সুতরাং যারা অরাজকতা সৃষ্টি করছে তাদেরকে চিহ্নিত করে দমন করা প্রয়োজন।
অনেকেই আমাদের গার্মেন্ট শিল্পকে ‘নীল’ ও ‘পাট’-এ পরিণত করতে চায়। আমাদের গার্মেন্ট শিল্প আজ ষড়যন্ত্রের শিকার। বৈদেশিক প্রতিযোগিতা আমাদের যে গার্মেন্ট ধ্বংস করতে পারেনি, সে গার্মেন্ট শিল্পকে আজ সংঘাত-সংঘর্ষ বাঁধিয়ে, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে, বিদেশে বদনাম রটিয়ে এবং মার্কেট নষ্ট করে ধ্বংস করতে চায়। তাই সবাইকে সাবধান হতে হবে। আমাদের দেশের সার্থেই গার্মেন্ট শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
ষ লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য ফরিদপুর-১, নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান, প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড, চেয়ারম্যান আমিন জুয়েলার্স
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন