সৈয়দ রশিদ আলম : সারা পৃথিবীতে পর্যটকরা যখন নতুন কোন দেশে যান তখন একাধিক দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করার সাথে সাথে ইতিহাস ও ঐতিহ্য খুঁজে বেড়ান। যে কারণে তারা স্থানীয় জাদুঘরে উপস্থিত হন। সেখানে গিয়ে তারা সেই দেশের সভ্যতার সাথে, প্রাচীন ইতিহাসের সাথে পরিচিত হন। বাংলাদেশে একাধিক আন্তর্জাতিক মানের জাদুঘর রয়েছে। সেখানে দেশের দর্শনার্থীদের সাথে সাথে বিদেশী পর্যটকরাও উপস্থিত হন। বাংলাদেশে বিভিন্ন বিষয়ের উপর একাধিক জাদুঘর গড়ে উঠেছে। কিন্তু বাংলাদেশে কোন মুদ্রা জাদুঘর ছিল না। বাংলাদেশ ব্যাংকে ক্ষুদ্র পরিসরে একটি মুদ্রা জাদুঘর ছিল। কিন্তু সেখানে সবার যাওয়াটা সহজ ছিল না।
২০১৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান একটি আন্তর্জাতিকমানের মুদ্রা জাদুঘর করার আগ্রহ প্রকাশ করলেন। বাংলাদেশের কয়েকজন মুদ্রা সংগ্রহক ড. আতিউর রহমানকে এ কাজে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিলেন এবং একটি প্রথম শ্রেণির মুদ্রা জাদুঘর করার পরামর্শ দিলেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে ৫ অক্টোবর ঢাকার মিরপুরে উদ্বোধন হল টাকা জাদুঘর। উদ্বোধন করলেন সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এই জাদুঘরের আড়াই হাজার আগের তৈরি করা পাঞ্চমার্ক যেমন প্রদর্শিত হচ্ছে তেমনি খলিফাদের তৈরি করা মুদ্রা, দিল্লীর সুলতানদের তৈরি করা মুদ্রা, বাংলার সুলতানদের তৈরি করা মুদ্রা, মোগল শাসকদের তৈরি করা মুদ্রা, হরিকেল মুদ্রাসহ সারা পৃথিবীর সকল স্বাধীন দেশের ব্যাংক নোট ও ধাতব মুদ্রা টাকা জাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে। একই সাথে পৃথিবীর সকল বিলুপ্ত দেশ, বিলুপ্ত জনপদ এর তৈরি করা ব্যাংক নোট, ধাতব মুদ্রা ও মুদ্রা তৈরি করার সকল উপকরণ টাকা জাদুঘরে প্রদর্শিত হচ্ছে।
টাকা জাদুঘর হচ্ছে দেশের প্রথম ডিজিটাল জাদুঘর। এই জাদুঘর পরিদর্শন করতে কোন প্রবেশ ফি দিতে হয় না। মাত্র পঞ্চাশ টাকার বিনিময়ে একটি এক লক্ষ টাকার স্মারক ব্যাংক নোটে আপনার ছবি অথবা আপনার প্রিয়জনের ছবি তুলে নিতে পারবেন। এখান থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি করা সকল স্মারক ব্যাংক নোট ও স্মারক ধাতব মুদ্রা ক্রয় করতে পারবেন। শনিবার থেকে বুধবার সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত টাকা জাদুঘর খোলা থাকে। বৃহস্পতিবার বন্ধের দিন। শুক্রবার বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত টাকা জাদুঘর খোলা থাকে। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে টাকা জাদুঘরের নিচতলায় একটি ফাস্টফুডের দোকান রয়েছে। যার নাম কয়েন ক্যাফে। এখানে স্বল্পমূল্যে সবরকম খাবার ও সবধরনের পানীয় বিক্রয় হয়। প্রতিদিন তিন থেকে চারশ দর্শনার্থী টাকা জাদুঘর পরিদর্শন করছেন।
টাকা জাদুঘরের অবস্থান, ঢাকার মিরপুর-২, বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমির দ্বিতীয় তলায়। ঢাকা শহর থেকে খুব সহজে এখানে আসতে পারবেন।
ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে যারা পরিচিত হতে চান, আগামী দিনের যারা মুদ্রা সংগ্রাহক হিসেবে নিজেকে গড়তে চান তাদের টাকা জাদুঘর পরিদর্শন করার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। এই টাকা জাদুঘরে প্রায় ৬০ জন দেশসেরা মুদ্রা সংগ্রাহক তাদের সংগ্রহ থেকে বিশ্বমানের ধাতব মুদ্রা ও ব্যাংক নোট টাকা জাদুঘরে উপহার দিয়েছেন। এদের মধ্যে কয়েকজন হলেন মো. হোসাইন চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার নুরুল ইসলাম, এসবি সালাম তুহিন, রবিউল ইসলাম, এমএ কাশেম, সৈয়দ রশিদ আলম, রায়হান আহমেদ, এডওয়ার্ড তরুণ রায়, ফরিদুল ইসলাম, আহসান জুয়েল জলসবয়, আলী রেজা করিম মার্শাল, মো. মোস্তাফা খান, মাহবুব হাসান, শাহাদাত হোসাইন। আন্তর্জাতিকমানের সারা পৃথিবীতে যে কয়টি মুদ্রা জাদুঘর রয়েছে এর মধ্যে বাংলাদেশের টাকা জাদুঘর বিশ্ববাসীর কাছে একটি আন্তর্জাতিকমানের মুদ্রা জাদুঘর হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এখানকার মুদ্রা উপস্থাপনা সর্বমহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।
ষ লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন