হেলেনা জাহাঙ্গীর : রাজধানী থেকে ক্রমান্বয়ে উধাও হয়ে যাচ্ছে গাছপালা সবুজের সমারোহ। যার অনিবার্য পরিণতি হিসেবে কংক্রিটের এই নগরীর তাপমাত্রা বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। আশপাশের এলাকার চেয়ে রাজধানীর তাপমাত্রা গড়ে ৫ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি হওয়ায় গ্রীষ্মকালে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। এই দুর্বিষহ অবস্থা থেকে রাজধানী ঢাকাকে রক্ষা করতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মেয়র আনিসুল হক নাগরিকদের ব্যাপকভাবে গাছ লাগানোর তাগিদ দিয়েছেন।
সম্প্রতি আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের এক অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের হাতে চার হাজার চারা গাছ তুলে দিয়েছেন তিনি। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মেয়র বলেছেন বাংলাদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালিত জরিপে বলা হয়েছে, ঢাকার আশপাশে গাজীপুর, সাভার, টঙ্গীতে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকলে ঢাকার তাপমাত্রা থাকে ৩৫ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর ফলে শিশুদের ফুসফুস নষ্ট হচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিণতিতে ২৫ শতাংশ শিশুর ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় ৮ থেকে ১০ লাখ গাছ লাগানো হলে এ এলাকার তাপমাত্রা হ্রাসে তা অবদান রাখবে। গত বছর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে উত্তরায় ৩১ হাজার ৯৫৬টি গাছ লাগানো হয়েছে। এ বছর ১০ লাখের মতো গাছ লাগানোর কথা ভাবা হচ্ছে। সবুজ ঢাকা গড়ার লক্ষ্য নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় গাছ লাগানোর যে কর্মসূচি সিটি মেয়র গ্রহণ করেছেন তা প্রশংসার দাবিদার। আমরা আশা করব ঢাকা উত্তর সিটির মতো দক্ষিণ সিটিতেও ব্যাপকভাবে গাছ লাগানোর কার্যক্রম শুরু হবে। গাছ লাগাতে নাগরিকরা যাতে উৎসাহিত হয় সে ব্যাপারেও উদ্যোগী ভূমিকা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের কাজে লাগানোর কথা ভাবতে হবে। শিশু-কিশোরদের মধ্যে গাছগাছালি বা সবুজের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করতে পারলে রাজধানীর ইট কংক্রিট-সর্বস্ব চেহারার ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব হবে। ঢাকা উত্তর সিটির বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি আন্দোলনে পরিণত হোক, এর আমেজ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ুক আমরা এমনটিই দেখতে চাই।
বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকায় রয়েছে নানামাত্রিক নাগরিক দুর্ভোগ। ধুলো-ময়লার স্তূপে টেকা দায়। চারদিকে অপরিচ্ছন্নতা ও পরিকল্পহীনতার ছাপ। এরমধ্যে বিশুদ্ধ বাতাসে শ্বাস নেয়ার অবস্থাও যেন নেই।এ কারণেই সবুজ ঢাকা গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। ঢাকার দূষিত বাতাসের কারণে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষজন। বিশেষ করে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।
উত্তরা এলাকায় এরই মধ্যে অসংখ্য গাছ লাগানো হয়েছে। এই উদ্যোগকে আরো এগিয়ে নিতে হবে। অনুষ্ঠানে মেয়র যেমনটি বলেছেন, ‘সবাই মিলে চেষ্টা করলে প্রতিদিন এক যোগে কয়েক হাজার গাছ রোপণ করা যায়। আর মেয়র চেষ্টা করলে হয়তো ১০টা। এখানে তোমরা যতজন আছো বাড়িতে গিয়ে সবাই অন্তত একটি করে চারা রোপন করবে। তাহলে এই শহর পরিবর্তন হবেই।’
পরিশেষে বলছি, রাজধানী শহরে যারা বাস করছেন তাকে রক্ষার দায়িত্বও তাদের। সবাই সচেতন হয়ে যদি পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসি তাহলে সবার জন্যই মঙ্গল। সবুজ ঢাকা প্রকল্প অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও সময়োপযোগী প্রকল্প। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকলে ঢাকাকে সবুজ নগরীতে রূপ দেয়া কোনো কঠিন কাজ হবে না।
রাস্তার আশপাশে, পার্কের খালি জায়গায়, ফ্লাইওভারের নিচে ও বাড়ির ছাদে সফলভাবে গাছপালা লাগাতে পারলে ও পরিকল্পিত বাগান করা গেলে আগামী ৩ বছরের মধ্যে ঢাকা শহরে বিভিন্ন পরিবহন ও শিল্পকারখানা থেকে নিঃসৃত কার্বনের পরিমাণ সহনীয় মাত্রায় আনা সম্ভব হবে। এতে কার্বন ডাইঅক্সইডের ফলে সৃষ্ট তাপমাত্রা কমে আসবে। ফলে মানুষও সুস্থ পরিবেশে দীর্ঘ বেঁচে থাকতে পারবে।
ষ লেখক : চেয়ারম্যান, জয়যাত্রা ফাউেন্ডশন
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন