বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুক্তাঙ্গন

সময় এসেছে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার

| প্রকাশের সময় : ১৯ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোহাম্মদ ইয়ামিন খান : পৃথিবীব্যাপী সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু হচ্ছে জঙ্গিবাদ। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া এখন সরব জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। পৃথিবীব্যাপী চলছে এখন জঙ্গি হামলা আর জঙ্গিদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযান। কোনোভাবেই যেন জঙ্গি উত্থান রোধ করা যাচ্ছে না বরং দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের প্রিয় জন্মভ‚মি বাংলাদেশ জঙ্গিবাদে আক্রান্ত। সা¤্রাজ্যবাদী পরাশক্তি এবং একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ধর্মের নামে সহিংসতা ঘটিয়ে চলেছে তাতে এদেশ ইরাক, সিরিয়া ও আফগানিস্তানের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। জঙ্গি ইস্যুকে ব্যবহার করে তারা একটার পর একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ধ্বংস করে দিচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে যে ভয়াবহ জঙ্গি হামলাগুলো হয়েছে এমন পৈশাচিক তাÐব এদেশে আগে ঘটেনি। একই ধরনের হামলা বেশ কয়েক বছর থেকেই হয়ে আসছিল ইরাক, সিরিয়া ও আফগানিস্তানে। সেই দেশগুলো ধীরে ধীরে যুদ্ধ পরিস্থিতির শিকার হয়ে ধ্বংস হয়ে গেছে। আমাদের দেশে গত বছর গুলশানের হলি আর্টিজন এবং শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে জঙ্গি হামলা আমাদের দেশ এবং প্রিয়ধর্ম ইসলামের বিরুদ্ধে অশনিসংকেত ছাড়া আর কিছুই নয়।
সম্প্রতি চট্টগ্রামের সীতাকুÐ, সিলেট এবং মৌলভীবাজারে জঙ্গি আস্তানায় পুলিশ-র‌্যাব-সোয়াত-সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযান, আত্মঘাতী হামলায় শিশুসহ ৪ জঙ্গির দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রেরই অংশ। বিশ্বময় জঙ্গিদের কর্মকাÐের কারণে বিশ্ববাসীর মনে ইসলাম সম্পর্কে খারাপ ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। শত শত ইসলামবিদ্বেষীরা ক্রমাগত অপপ্রচার চালিয়েও যে ক্ষতি করতে পারেনি সেখানে জঙ্গিবাদীরা চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে, জবাই করে মানুষ হত্যা করে ইসলামের বহু ক্ষতিসাধন করেছে। জঙ্গি তৎপরতার কারণে আজ ইসলামের বদনাম হচ্ছে। ধর্মের অপব্যবহারের কারণে কিছু মানুষ আল্লাহ-রাসূলকে পাওয়ার জন্য আর পরকালে জান্নাতে যাওয়ার জন্য কোরআনের কিছু আয়াত আর রাসূলের কিছু জীবনী নকল করে জঙ্গিবাদের পথে পা বাড়ায়। আর এই সুযোগে সা¤্রাজ্যবাদী পরাশক্তিগুলো জঙ্গি নির্মূলের নামে ইসলামকে টার্গেট করে ইরাক-সিরিয়া-লিবিয়া-আফগানিস্তান-ইয়েমেনসহ এক একটা মুসলিম দেশ ধ্বংস করে দিচ্ছে, বিরাণ করে দিচ্ছে একেকটি জনপদ।
বিদ্যমান বিশ্বপরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে দেখলে মনে হয়, মানবজাতি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এগিয়ে চলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়াসহ বিশ্বের পরাশক্তিগুলো কমবেশি ৬৮ হাজার পারমাণবিক বোমা মজুদ রেখেছে মানবজাতিকে বিনাশ করে দেয়ার জন্য। তাছাড়া তৈরি করা হয়েছে হাইড্রোজেন বোমা আর কেয়ামত বোমা। আমরা জানি, দুই দুটি বিশ্বযুদ্ধে ১৪ কোটি মানুষ হতাহত হয়েছে। হিরোশিমা আর নাগাসাকির দাগ এখনো শুকায়নি। পরাশক্তিগুলো আজ যা করছে তাতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে বলে অনেক সামরিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকগণ মনে করছেন। এ অবস্থায় কারো খামখেয়ালিপনার কারণেই পারমাণবিক যুদ্ধ লেগে যেতে পারে ফলে সমস্ত মানবজাতি বিনাশ হয়ে যাবে।
একদিকে জঙ্গিবাদী তৎপরতা আর সা¤্রাজ্যবাদীদের ষড়যন্ত্র আমাদের প্রিয় জন্মভ‚মি বাংলাদেশকে ইরাক-সিরিয়া-আফগানিস্তান বানাতে উঠে-পড়ে লেগেছে। স্বাধীনতার ৪৬ বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও আজো আমরা ১৬ কোটি মানুষ ধর্মীয়গতভাবে নানা ফেরকা-মাজহাব, বিভিন্ন তরিকায়, রাজনৈতিকভাবে শত শত দল-পথ-মতে বিভক্ত। আজো এদেশে স্বার্থের রাজনীতি, দোষারোপের রাজনীতি এবং গণতন্ত্রের নামে দলাদলি ও হানাহানির ঐক্যবিনাশী জাতিবিনাশী অপরাজনীতি চলছে। আমাদের আলেম সমাজ, পীর সাহেবরাও বিভক্ত।
আমাদের এই প্রিয় জন্মভ‚মি বাংলাদেশ, এই এক টুকরা মাটি; এদেশের মাটিতে আমরা সেজদা করি, এদেশে আমাদের পূর্বপুরুষদের অস্তিমজ্জা মিশে আছে। লাঙল নিয়ে আমরা এদেশের মাটির বুক চিড়ে ফসল ফলাই এরপর আমরা ক্ষুধা নিবারণ করি। আজ সা¤্রাজ্যবাদী পরাশক্তিসমূহ এদেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। কিন্তু এভাবে হানাহানি করতে করতে ইরাক-সিরিয়ার মতো এদেশকে ধ্বংস করে দিতে পারি না। এদেশ যদি ইরাক-সিরিয়া-আফগানিস্তান হয় তাহলে আমাদের কারো পায়ের নিচে মাটি থাকবে না। আমরা ১৬ কোটি বাঙালি এসব বিভক্তির প্রাচীরগুলো ভেঙে দেশপ্রেম আর ঈমানি চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ইস্পাতকঠিন ঐক্যবদ্ধ হতে পারি, যদি ইসলামের প্রকৃত আদর্শ ধারণ করে জঙ্গিবাদ, অপরাজনীতিসহ যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে ‘এক জাতি একদেশ ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ’ হতে পারি তাহলে কোনো শয়তানি শক্তি আমার প্রিয় জন্মভ‚মির উপর একটা আঁচড়ও দিতে পারবে না।
তাই মানুষকে বোঝাতে হবে কখন জিহাদ আর কখন কিতাল করতে হয়। আল্লাহর রাসূল (স.) একেধারে নবী, রাষ্ট্রনায়ক, বিচারক আর সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন। রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তে তিনি রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য যুদ্ধ করেছেন। আর জঙ্গিরা যা করছে তা ভুল। ইসলামের সঠিক আদর্শ দিয়ে যদি জঙ্গিবাদকে ভুল প্রমাণ করা যায় তাহলে কোনো মানুষ উগ্রপন্থা বা জঙ্গিবাদের দিকে ধাবিত হবে না।
ষ লেখক : ২নং, হাবেলী গোপালপুর, ফরিদপুর থেকে

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন