মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪৩০, ০৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

মুক্তাঙ্গন

তুরস্কের ক্যারিশম্যাটিক নেতা এরদোগান

| প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মিজানুর রহমান : জীবন-জীবিকার তাগিদে ইস্তাম্বুলের রাস্তায় রাস্তায় যিনি লেবু, তিল ও রুটি বিক্রি করতেন তিনিই আজ তুরস্কের তার আগের সকল শাসকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে আসীন হয়েছেন। তিনি হলেন বর্তমান সময়ের আলোচিত রাষ্ট্রনায়ক এরদোগান। ১৯৫৪ সালে তুরস্কের কাসিমপাসায় জন্মগ্রহণ করেন এই ক্ষণজন্মা নায়ক। শৈশব কেটেছে কৃষ্ণসাগরের পাড়ে, অতিসাধারণভাবে। ১৩ বছর বয়সে আসেন ইস্তাম্বুলে। কিন্তু তিনি জীবনযুদ্ধে থেমে যাননি। চলেছেন অপ্রতিরুদ্ধ গতিতে। তিনি উচ্চশিক্ষা নিলেন ব্যবসায় প্রশাসনে। ইসলাম প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে যোগ দেন ইসলামী আন্দোলনে। তিনি দ্বীন প্রতিষ্ঠাকে জীবনোদ্দেশ্য হিসাবেই গ্রহণ করেন। খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠায় অগ্রসেনানির ভূমিকা গ্রহণ করেন। ফলে তার জীবনের গতিধারা পাল্টাতে শুরু করে। অনেক বাধা-প্রতিবন্ধকতা তাকে অতিক্রম করতে হয়। এক সময়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তার ব্যক্তিত্ব, প্রজ্ঞা, মেধা, যোগ্যতা, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব ও দূরদর্শিতার কারণে ক্রমেই মহীরূহে পরিণত হন, যা গোটা বিশ্বকেই তাক লাগিয়ে দিয়েছে। তিনি অবতীর্ণ হন নির্বাচন যুদ্ধে। আসে এক সময়োচিত ও বিরোচিত বিজয়। ১৯৯৪ সালে তিনি ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচিত হন। আবির্ভূত হন এক ত্বরিতকর্মা ও সব্যসাচী মেয়র হিসাবে। তখন ইস্তাম্বুল নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিল। নগরবাসীর জীবনযাত্রার মান ছিল খুবই নিম্নমানের। কিন্তু এরদোগানের সোনার কাঠি-রূপোর কাঠির জাদুকরী ছোঁয়ায় সবকিছু পাল্টাতে শুরু করে। দেড় কোটি মানুষের শহর ইস্তাম্বুলে তখন তিনি যানজট, বিশুদ্ধ পানীয় জলের সংকট ও বায়ুদূষণ রোধ করে নগরের চেহারা পাল্টে দেন। নাগরিক সেবার পরিসর বৃদ্ধি করা হয়। ইস্তাম্বুল পরিণত হয় এক সর্বাধুনিক মহানগরীতে।
শুরু হয় এরদোগানের জীবনের স্মরণীয় অধ্যায়। তার দীর্ঘদিনের মিত্র আব্দুল্লাহ গুল ও অন্যদের সঙ্গে মিলে ২০০১ সালে একেপি পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। অতি অল্পসময়ের মধ্যেই নতুন প্রতিষ্ঠিত দলটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। দেশের মানুষ একে পার্টিকে মনে প্রাণে গ্রহণ করে নেয়। ২০০২ সাল থেকে দলটি প্রতিটি নির্বাচনে জয়লাভ করে আসছে।
একে পার্টি ২০০২ সালে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে প্রথমবার ক্ষমতাসীন হয়। ২০০২ সালে একে পার্টি আসন পেয়েছিল ৩৬৩টি, ২০০৭ সালে ৩৪১, ২০১১ সালে ৩২৭ এবং ২০১৫ সালের জুন মাসের নির্বাচনে ২৫৮টি আসন। জুন মাসের নির্বাচনে সরকারের গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসন না পাওয়ায় কোয়ালিশন সরকার গঠন করতে ব্যর্থ হওয়ায় নভেম্বরে নতুন নির্বাচনের আবশ্যকতা দেখা দেয়। সেখানেও ৫২ শতাংশ ভোট পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় একে পার্টি।
দৈনিক হুররিয়াত এবং আল জাজিরার দেয়া তথ্য মতে, তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থান চেষ্টার সময় প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানকে হত্যা করার জন্য তিনটি সামরিক হেলিকপ্টার পাঠানো হয়েছিল। তিনি তখন তুরস্কের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মারমারায় অবকাশ যাপন করছিলেন। সেখানেই তাকে হত্যা কিংবা বন্দি করার জন্য পাঠানো হয়েছিল হেলিকপ্টারগুলো।
ব্যর্থ অভ্যুত্থানের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে হুরিয়াতের খবরে বলা হয়, আর্মির ফার্স্ট কমান্ডার উমিত দান্দার শুক্রবার দিবাগত রাতে (অভ্যুত্থানের এক ঘণ্টা আগে) এরদোগানের সাথে যোগাযোগ করে অভ্যুত্থান শুরু হওয়ার বিষয়টি জানাতে পেরেছিলেন। এই খবর পেয়েই এরদোগান হোটেল ত্যাগ করেছিলেন। বিদ্রোহী সৈন্যরা যখন সেখানে পৌঁছে, তার আগেই তিনি সরে পড়ে জনগণকে রাস্তায় নেমে আসার আহŸান জানিয়েছিলেন মুঠোফোনের মাধ্যমে এক ভিডিও বার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রেরণের দ্বারা।
এখন তিনি তুরস্কের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্যারিশম্যাটিক নেতা। পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। ৬২ বছর বয়সী এই মানুষটি এবার তুরস্কের রাষ্ট্রক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে আরও একধাপ এগিয়ে গেছেন। বিশ্ব মিডিয়া যাকে নিয়ে এখন ব্যস্ত এবং যে কারণে ব্যস্ত তিনি হলেন সেই এরদোগান এবং কারণটি হলো ১৬ এপ্রিলের গণভোট।
এতে ৫১.৩ শতাংশ ‘হ্যাঁ’ ভোট পেয়ে কার্যত আরও ১২ বছর প্রেসিডেন্টের আসন পাকা করে নিয়েছেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। অনেকের ধারণা, এর ফলে তুরস্কে একনায়কতন্ত্র শক্তিশালী হতে যাচ্ছে। মূলত তারা গণতান্ত্রীকভাবে বিজয়ী হওয়াকে বাঁকা চোখে দেখছেন। গণভোটের উদ্দেশ্য ছিল সংবিধানে মোট ১৮টি সংশোধনী আনার প্রস্তাব পাস করা। এরদোগানের বিজয়ের ফলে প্রায় ৭০টি আইনে পরিবর্তন আসতে পারে। তন্মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সংশোধনী প্রস্তাব হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বিলুপ্ত করে দেয়া হবে। প্রেসিডেন্ট মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও ভাইস-প্রেসিডেন্ট (নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যার উল্লেখ নেই) নিয়োগ দেবেন।
তুরস্কের গ্রামীণ জনগোষ্ঠী এবং ধর্মপরায়ণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে তার সুদৃঢ় সমর্থন রয়েছে, যারা তার শাসনে উন্নতি লাভ করেছেন।
দ্যা ওয়াশিংটন ইন্সটিটিউটের তুরস্ক বিষয়ক গবেষক সোনার ক্যাগাপ্তে বলেন, ‘এরদোগানের অর্থনৈতিক রেকর্ড এবং কর্তৃত্ববাদী মজলুম হিসেবে তার ইমেজই তাকে প্রেসিডেন্ট পদে জয় এনে দেবে।’ আর সেটাই প্রমাণিত হল এই গণভোটে।
ষ লেখক : এমফিল গবেষক, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
Laltu ২৬ এপ্রিল, ২০১৭, ৩:৪৬ এএম says : 0
He is the real leader of the world
Total Reply(1)
??? ????? ২৬ এপ্রিল, ২০১৭, ১:২৫ পিএম says : 4
Really! Today's world has learnt near of him...
২৬ জুন, ২০১৭, ২:০৫ পিএম says : 0
একটি তথ্যবহুল নিবন্দপ্রকাশ করার জন্য ধন্যবাদ
Total Reply(0)
Golam Ajom ১৩ নভেম্বর, ২০২০, ৮:৩৩ পিএম says : 0
Absolutely he is real leader of Muslim country
Total Reply(0)
Golam Ajom ১৩ নভেম্বর, ২০২০, ৮:৩৪ পিএম says : 0
Absolutely he is real leader of Muslim country
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন