ঝিনাইদহ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার ইবনে শাঈখের বিরুদ্ধে কাজ না করেই কোটি কোটি টাকার বিল উত্তোলনের খবরে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এ সংক্রান্ত খবর ফাঁস হয়ে পড়লে জুনের আগে কাজ সম্পন্ন দেখিয়ে বিল তুলে নেওয়া প্রকল্পগুলো এখন নিজের টাকায় শুরু করেছেন। ঝিনাইদহ শহরের চাকলাপাড়া ডরমেটরি ভবন, নন হেজেটেড ডরমেটরি ভবন, জেলা জজের বাসা, সাবডিভিশন অফিস ও গণপূর্তের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর বাসাসহ বিভিন্ন অফিস তড়িঘড়ি করে রংচং শুরু করেছেন। অথচ কাজ দেখিয়ে জুনের আগেই তিনি ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার বিল তুলে নিয়েছিলেন। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ গণপূর্ত বিভাগে গত ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ই-জিপি টেন্ডারের মাধ্যমে দরপত্র আহবান করা হয়। কিন্তু বিধি ভঙ্গ করে মেন্যুয়ালি নেটিফিকেশন অফ এওয়ার্ড (নোয়া) দেওয়া হয়েছে। যা পিপি’র বিধি বহির্ভুত। প্রশ্ন উঠেছে ই-জিপি টেন্ডার আহবান করলে একজন ঠিকাদার অর্ধশত কাজ কি ভাবে পায়। এ ভাবে তিনি ২/৩টি লাইসেন্সের বিপরীতে শত শত কাজ দিয়ে কোনটি কাজ না করে আবার আংশিক কাজ করে ৯ কোটি টাকার বেশি টাকা লোপাট করেছেন। অভিযোগ উঠেছে মেসার্স তরিকুল ইসলাম, জেএস কনষ্ট্রাকশ, নির্কনা এন্টারপ্রাইজ ও মল্লিক এন্টারপ্রাইজের নামে নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার ইবনে শাঈখ নিজেই এক কোটি টাকার ভুয়া বিল ভাউচার তৈরী করে তুলে নিয়েছেন, যা নিরপেক্ষ তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে।
সরেজমিন দেখা গেছে, কোটচাঁদপুর ফায়ার স্টেশণের ভবন মেরামত ও বৈদুতিক কাজ ধরা হয় আড়াই লাখ টাকা। কিন্তু সেখানে রং করা হয়েছে বলে সেখানকার স্টেশন অফিসার আব্দুর রাজ্জাক জানান। কাজ না করে অথবা আংশিক কাজ করে বিল তুলে নেওয়া কাজের মধ্যে রয়েছে, গনপুর্তের নির্বার্হী প্রকৌশলীর পরিদর্শন বাংলো মেরামত, বৈদ্যুতিক মেরামতের কাজ, নন গেজেটেড ডরমেটরি ভবনের বৈদ্যুতিক কাজ, কোটচাঁদপুর ফায়ার স্টেশন মেরামত, ঝিনাইদহ সদরের ১০০০ বর্গফুট ডি-টাইপ কোয়াটারের বৈদ্যুতিক মেরামত, জেলা সদরের ১২৫০ বর্গফুট ই-টাইপ কোয়াটারের বৈদ্যুতিক কাজ, একই টাইপের কোয়াটারের মেরামত কাজ, গেজেটেড ডরমেটরি ভবনের বৈদ্যুতিক কাজ, গনপুর্তের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের ৬টি ভবনের মেরামত কাজ, একই ভবনের বৈদ্যুতিক কাজ, ১০০০ বর্গফুট ডি-টাইপ কোয়াটারের মেরামত কাজ, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর/২০১৯ পর্যন্ত সরকারী স্থাপনায় অত্যাবশ্যকীয় বৈদ্যুতিক মেরামত কাজ, জুলাই থেকে সেপ্টম্বর/২০১৮ সরকারী স্থাপনায় অত্যাবশ্যকীয় বৈদ্যুতিক মেরামত কাজ, এপ্রিল থেকে জুন/২০১৯ সরকারী স্থাপনায় অত্যাবশ্যকীয় বৈদ্যুতিক মেরামত কাজ, গনপুর্তের উপবিভাগীয় প্রকৌশলীর বাসা মেরামত, একই বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর সীমানা প্রাচীর উচুকরণ, নির্বাহী প্রকৌশলীর বাসা সংলগ্ন গাড়ির গ্যারেজ ও গার্ডসেড নির্মান, নন গেজেটেড ডরমেটরি ভবনের মেরামত কাজ, বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর সীমানা প্রাচীর উচুকরণ, জানুয়ারী তেকে মার্চ পর্যন্ত সরকারী স্থাপনায় অত্যাবশ্যকীয় বৈদ্যুতিক মেরামত কাজ, ঝিনাইদহ সদরের ১০০০ বর্গফুট ডি-টাইপ কোয়াটারের মেরামত কাজ, ১০০০ বর্গফুট ডি-টাইপ কোয়াটারের বৈদ্যুতিক মেরামত কাজ, গনপুর্তের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের ৬টি ভবনের মেরামত কাজ, গনপুর্তের নির্বাহী প্রকৌশলীর বাংলোর বৈদ্যুতিক মেরামত কাজ, নির্বাহী প্রকৌশলীর বাসার মেরামত কাজ, জুলাই থেকে সেপ্টম্বর/২০১৮ পর্যন্ত সরকারী স্থাপনায় অত্যাবশ্যকীয় বৈদ্যুতিক মেরামত কাজ, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারী স্থাপনায় অত্যাবশ্যকীয় বৈদ্যুতিক মেরামত কাজ, জানুয়ারী তেকে মার্চ ২০১৯ সরকারী স্থাপনায় অত্যাবশ্যকীয় স্যানিটারি মেরামত কাজ, এপ্রিল থেকে জুন/২০১৯ পর্যন্ত সরকারী স্থাপনায় অত্যাবশ্যকীয় স্যানিটারি মেরামত কাজ, পুরানো ডিসি কোর্টে অবস্থিত সরকারী অফিসের মেরামত কাজ, কালীগঞ্জ ফায়ারস্টেশনের মেরামত কাজ, গনপুর্তের নির্বাহী প্রকৌশলীর বাসার মেরামত কাজ, জেলা জজের বাসার প্রধান ফটকের গেইট পরিবর্তন, সদর থানার অভ্যন্তরে বেতার ভবনে বৈদ্যুতিক কাজ, ঝিনাইদহ জেলা মৃত্তিকা গবেষনা ইন্সষ্টিটিউটে বৈদ্যুতিক কাজ, ঝিনাইদহ পুরানো ডিসি কোর্টে অবস্থিত সরকারী অফিস সমুহের মেরামত কাজ, কোটচাঁদপুরের ফায়ার স্টেশন ভবন মেরামত কাজ, কালীগঞ্জ ফায়ার স্টেশনের বৈদ্যুতিক কাজ, ঝিনাইদহ পুরানো ডিসি কোর্টে অবস্থিত সরকারী অফিস সমুহের বৈদ্যুতিক কাজ ও ঝিনাইদহ জেলা মৃত্তিকা গবেষনা ইন্সষ্টিটিউটের মেরামত কাজ। দেখা গেছে একই কাজ দুইবার করে দেখানো হয়েছে। কয়েকজন ঠিকাদার অভিযোগ করেছেন, বড় বড় কাজে নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার ইবনে শাঈখকে ১০% করে ঘুষ না দিলে তিনি বিলে সাক্ষর করেন না। এ কারণে কয়েকজন ঠিকাদারের সাথে তার বনিবনা হচ্ছে না। ফলে কাজ না করে ও কমিশন বানিজ্যের কোটি কোটি টাকা ঘুষের তথ্য ফাঁস হয়ে পড়েছে। ঘুষের টাকা না পেয়ে উল্টো ঠিকাদারের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করেছেন এমন নজীরও রয়েছে। এ সব বিষয়ে গনপুর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার ইবনে শাঈখ বলেন, আমি কোন ঘুষ দুর্নীতির সাথে জড়িন নয়। কাজ বুঝে নেওয়ার কারণে ঠিকাদাররা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ছড়াচ্ছে। তিনি বলেন অজান্তে কেও দুর্নীতিতে জড়ালে তার বিরুদ্ধে আমি কঠোর ব্যবস্থা নেব।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন