জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের আসন রংপুর-৩ এ উপনির্বাচনে নিরুত্তাপ ভোটগ্রহণ চলছে।
এরশাদের আসনটি জাপাকে ছেড়ে দিল আওয়ামী লীগ। প্রায় সাড়ে চার লাখ ভোটারের এই আসনে আজ শনিবার সকাল ৯টায় শুরু হয় ভোটগ্রহণ; তা বিকাল ৫টা পর্যন্ত একটানা চলবে।
শহর এলাকা নিয়ে গঠিত এই আসনের ১৭৫টি কেন্দ্রের সবকটিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ হচ্ছে। ফলে ফলাফল দ্রুত আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী সরে দাঁড়ানোর পর অনেকটা নিরুত্তাপ ভোটের চিত্র। জাতীয় পার্টি, বিএনপি, খেলাফত মজলিশ, গণফ্রন্ট ও স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়ে মোট ছয়জন রয়েছেন লড়াইয়ে।
তবে সকালে ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারদের অনুপস্থিতি এই উপনির্বাচন নিয়ে স্থানীয়দের অনাগ্রহ ফুটিয়ে তুলেছে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জি এম সাহতাব উদ্দিন বলেন, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর ভোটের সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। ইতোমধ্যে সাড়ে তিন হাজার আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য মাঠে রয়েছেন। ভোটারররা নির্বিঘ্নে ভোট দিয়ে বাসায় ফিরবেন। ইভিএমে ভোট হওয়ায় স্বল্প সময়ে ফলাফল ঘোষণাও সম্ভব হবে।
তিনি জানান, প্রযুক্তিনির্ভর এ ভোটে কোনো ধরনের জটিলতা যাতে না হয়, সেজন্য আইটি টিমকেও প্রস্তত রাখা হয়েছে।
উপ নির্বাচন হলেও ইভিএমে ভোটারদের আগ্রহী করতে তুলতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও মক ভোটিং করা হয়েছে।
গত ১৪ জুলাই বিরোধীদলীয় নেতা এরশাদের মৃত্যুর পর ১৬ জুলাই আসনটি শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয়। নির্বাচন কমিশন ১ সেপ্টেম্বর আসনটিতে নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করে।
রংপুর সেনানিবাস, রংপুর সদর উপজেলা এবং রংপুর সিটি করপোরেশনের ৩৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৮টি ওয়ার্ড ছাড়া বাকি সবগুলো নিয়ে এই আসনটিতে এবারও ১৭৫টি কেন্দ্র রয়েছে।
ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে ১৭৫ জন প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, এক হাজার ২৩ এবং দুই হাজার ৪৬ জন পোলিং অফিসারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
‘ঝুঁকিপূর্ণ ৪৯টি কেন্দ্রসহ’ মোট ১৭৫টি ভোট কেন্দ্রের এক হাজার ২৩টি গোপনকক্ষে চার লাখ ৪১ হাজার ২২৪ জন ভোটারের ভোট দানের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাদের মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ২০ হাজার ৮২৩ এবং নারী ২ লাখ ২০ হাজার ৪০১জন।
৬ প্রার্থী
ছয় প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে এরশাদপুত্র জাতীয় পার্টির প্রার্থী রাহগির আলমাহি সাদ এরশাদ।
জাতীয় পার্টির মনোনয়ন না পেয়ে এরশাদের ভাতিজা সাবেক সংসদ সদস্য হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মোটরগাড়ি (কার) প্রতীকে লড়ছেন।
ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জিয়ার মন্ত্রিসভার সদস্য মশিউর রহমান যাদু মিয়ার বড় মেয়ে রিটা রহমান; এনপিপির শফিউল আলম (আম), খেলাফত মজলিসের তৌহিদুর রহমান মন্ডল (দেওয়াল ঘড়ি) এবং গণফ্রন্টের কাজী মো. শহীদুল্লাহ বায়েজীদ (মাছ) প্রতীকে নির্বাচন করছেন।
৪ প্রার্থীরই ভোট নেই
উপ-নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ৬ প্রার্থীর মধ্যে ৪ জনই নির্বাচনী এলাকার ভোটার নয়। এ কারণে তারা ভোটও দিতে পারবেন না।
রংপুরের আঞ্চলিক নির্বাচনী কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার জিএম সাহাতাব উদ্দিন জানান, কোনো প্রার্থী এই এলাকার ভোটার না হলে ভোট দিতে পারবেন না। তবে প্রার্থী ভোট কেন্দ্র পরিদর্শন করতে পারবে।
এরশাদপুত্র রাহগীর আল মাহি সাদ স্থানীয় ভোটার না হওয়ায় প্রার্থী হয়েও লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না।
এছাড়া ভোট দিতে পারবেন না বিএনপি প্রার্থী রিটা রহমান (ধানের শীষ), গণফ্রন্টের কাজী মো. শহীদুল্লাহ বায়েজিদ (মাছ) ও এনপিপির শফিউল আলম (আম)।
তবে নির্বাচনী এলাকার ভোটার হিসেবে এরশাদের ভাতিজা স্বতন্ত্র প্রার্থী হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ (মোটরগাড়ি-কার) ও খেলাফত মজলিসের তৌহিদুর রহমান মন্ডল (দেওয়াল ঘড়ি) ভোট দিতে পারবেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে ভোটার যে কোনো এলাকার হলে চলবে। স্থানীয় নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার হওয়া বাধ্যতামূলক।
৩০ ডিসেম্বর এ আসনেই ইভিএমে ভোট হয়েছিল; তাতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ তাকে আসনটি ছেড়ে দিয়েছিল।
এবার আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও বিএনপিসহ অনেকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর উপনির্বাচনকে ঘিরে এক ধরনের আগ্রহ তৈরি হয়েছিল ভোটারদের মধ্যে। কিন্তু প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সরে যাওয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোটের আশাও কমে যায়।
দলের স্থানীয় কর্মী-সমর্থকদের বিরোধিতার মধ্যেই নৌকার প্রার্থী রেজাউল করিম রাজু ১৬ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে বলেন, দলের স্বার্থে নিজেকে ‘বিসর্জন’ দিলেন তিনি।
স্থানীয় ভোটারদের অধিকাংশই মনে করেন, এরশাদের ভাতিজা শাহরিয়ার আসিফ ও বিএনপির রিটা রহমান ভোটে থাকলেও সাদের জয়ে বাধা হয়ে উঠতে পারবেন না। যার কারণে ভোট নিয়ে আগ্রহ কমেছে ভোটারদের, উপস্থিতিও তুলনামূলক কম হতে পারে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা জি এম সাহাতাব উদ্দিন জানান, চার স্তরের নিরাপত্তার বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র্যাব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য রয়েছে নির্বাচনী এলাকায়।
এরমধ্যে পুলিশ-আনসার সদস্য থাকবে ৩ হাজার, ১৮ প্লাটুন বিজিবি ও র্যাবের ২০ ইউনিট রয়েছে।
এছাড়া ১৮ জন নির্বাহী হাকিম আর চারজন বিচারিক হাকিম থাকছে। যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হলে তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন