পাকিস্তান ক্রিকেটের বিশ্বকাপ জয়ী সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আজ আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে এক নতুন ইনিংস শুরু করতে যাচ্ছেন। পারস্য উপসাগরে ইরানের সঙ্গে সৃষ্ট উত্তেজনা নিরসনে নতুন মিশন শুরু করছেন তিনি। এ উদ্দেশে আজ রোববার তার ইরানের উদ্দেশে উড়াল দেয়ার কথা। গত মাসে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে তাকে এই মধ্যস্থতার জন্য আমন্ত্রণ জানান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। সেখান থেকেই তিনি প্রাথমিকভাবে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সঙ্গে। তবে আজ রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে সেই মিশন শুরু হচ্ছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ডন।
সউদী আরবের সঙ্গে ইরানের উত্তেজনা অনেক পুরনো।
কিন্তু তা আরো তীব্র হয়েছে গত মাসে। এ সময়ে ইয়েমেন থেকে হুতি বিদ্রোহীরা সউদী আরবের সবচেয়ে বড় তেলক্ষেত্রে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এ হামলার জন্য হুতিরা দায় স্বীকার করলেও সউদী আরব, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা অনেক দেশ মনে করে, এর সঙ্গে জড়িত ইরান। ফলে ইরানের সঙ্গে সউদী আরবের দা-কুমড়ো সম্পর্ক দাঁড়ায়। যুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এরই মধ্যে বসে জাতিসংঘের অধিবেশন। সেখানে মধ্যস্থতা করার জন্য ইমরানকে দায়িত্ব দেন ট্রাম্প।
সেই মিশন নিয়ে ইরানে গিয়ে তিনি সাক্ষাত করবেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি ও প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সঙ্গে। এসব বৈঠকে ইমরান খান পারস্য উপসাগরের শান্তি ও নিরাপত্তার ইস্যুগুলোতে গুরুত্ব দেবেন। এ ছাড়া তিনি দ্বিপক্ষীয় বিষয়ও তুলে ধরবেন। কাশ্মীরের পরিস্থিতির মতো আঞ্চলিক বিষয়গুলো উঠে আসবে তার আলোচনায়। শনিবার রাতেই তার তেহরানের উদ্দেশে যাত্রা করার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তা পরিবর্তন করে রোববার সকালে যাত্রা করার কথা বলা হয়। তিনি সউদী আরব যেতে করতে পারেন বলে বলা হয়েছিল। কিন্তু তা হচ্ছে না। তার পরিবর্তে তিনি একই দিনে অর্থাৎ রোববারই দেশে ফিরে আসবেন। এর কারণ, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সোমবার সউদী আরব যাচ্ছেন। তাকে অভ্যর্থনা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে রিয়াদ। ফলে ইমরান খান পরের সপ্তাহে কোনো এক সময়ে রিয়াদ সফরে যাবেন। একটি সূত্র বলেছেন, তার এই সফর হতে পারে মঙ্গলবার।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুযায়ী ইমরান খান তার তেহরান সফরকে নিয়েছেন আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তাকে সামনে এগিয়ে নেয়ার পদক্ষেপ হিসেবে। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা নিউ ইয়র্ক টাইমস ও আরো কিছু মিডিয়া বিষয়ক সংগঠন আগেভাগে দাবি করেছে, ইরানের সঙ্গে সউদী আরবের যুদ্ধ এড়াতে মধ্যস্থতা করার জন্য ইমরান খানকে অনুরোধ করেছেন সউদী আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। ওদিকে ২৪ শে সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে সংবাদ সম্মেলন করেন ইমরান খান। সেখানে তিনি বলেন, উপসাগরীয় অঞ্চলে উত্তেজনা নিরসনে তার সহযোগিতা চেয়েছেন ট্রাম্প। তার পরে তিনি ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতও করেছেন।
ইমরান খানের এ উদ্যোগের প্রশংসা করেছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাতে বলা হয়েছে, সউদী আরব ও ইরান উভয়েই পাকিস্তানের ভ্রাতৃসুলভ দেশ। তাদের মধ্যে একটি সম্ভাব্য আলোচনার উদ্যোগ হলো ইমরান খানের আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা। তবে সউদী আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ মধ্যস্থতা করার জন্য ইমরানকে অনুরোধ করেছেন বলে যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে ওই বিবৃতিতে তা অস্বীকার করা হয়েছে।
এরই মধ্যে ইরান বার বার বলেছে তারা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে প্রস্তুত। মধ্যস্থতার জন্য তারা উন্মুক্ত। সউদী আরবের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা চায়। ইমরান খানের মধ্যস্থতার বিষয়ে টিআরটি’কে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভাদ জারিফ বলেছেন, আমরা কোনো মধ্যস্থতাকে কখনোই প্রত্যাখ্যান করি না। আমরা এ জন্য সব সময় উন্মুক্ত। এই আলোচনাকে তিনি সমস্যা সমাধানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। এর ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের কোনো পছন্দনীয় ইস্যু নেই। তবে একে অন্যের সঙ্গে কথা বলতে চাই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন