মুসলিম শরিফে বর্ণিত, হযরত হুযাইফ বিন উসাইদ আল গিফারি (রা.) বলেন, আমরা যখন কোন বিষয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনায় রত ছিলাম তখন রাসুল (সা:) আমাদের নিকট আগমন করলেন এবং বললেন তোমরা কি বিষয়ে আলোচনা করছো। তারা জবাবে বলল, আমরা কেয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করছি। রাসুল (সা:) তখন বলেন, কেয়ামত ততক্ষণ পর্যন্ত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না এই আলামতগুলো দেখতে পাবে। সেগুলো হলো: (১) দুখান বা ধোয়ার উদগীরণ হবে (২) দাজ্জালের আবির্ভাব (৩) দাব্বাতু মিনাল আরদ (৪) পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়া (৫) ঈসা ইবনে মারইয়ামের অবতরণ (৬) ইয়াজুজ মাজুজের প্রকাশ (৭) পরপর তিনটি চন্দ্রগ্রহণ পৃথিবীর পশ্চিম অংশে ও পূর্ব অংশে আর (৮) আরব উপদ্বীপে (৯) ইয়ামেনের ভূমি থেকে আগুন বের হবে। যা মানুষকে তাড়িয়ে নিয়ে একত্রিত করবে। (১০) পশ্চিম দিক থেকে সূর্যের উদয় ও পূর্বদিকে অস্তগমন হবে।
কেয়ামতের ছোট ছোট আলামতগুলোর অন্যতম হলো-
১। এমন কিছু ঘটনা ঘটবে যা পূর্বে কখনো ঘটেনি এবং ঘটার কোন ধারণাই ছিল না ২। অমুসলিমদের হাতে প্রচুর পরিমাণে খনিজ সম্পদ আহরিত হবে ৩। মানুষ তার বাসস্থানকে শিল্প কারুকার্জ দিয়ে সুশোভিত করাকে গুরুত্ব দিবে ৪। জমিনের অংশ সমূহ নিকটবর্তী হয়ে যাবে ৫। শিক্ষায় বিপ্লব ঘটে যাবে কিন্তু দ্বীনি শিক্ষা সম্পর্কে অজ্ঞ থেকে যাবে ৬। মহিলারা অশ্লীলতায় ডুবে যাবে। মহিলাদের সৌন্দর্য চর্চা কেন্দ্রের ব্যাপক বিস্তার ঘটবে ৭। মহিলারা পুরুষের আকৃতি ধারণ করবে আর পুরুষ মহিলার আকৃতি ধারণ করবে ৮। কিছু মুসলমান মদ পান করবে অন্য নামে ৯। মানুষের মধ্যে সুদের ব্যাপক বিস্তার হয়ে যাবে ১০। অভিনন্দন ও অভিবাদন মানুষের কাছে অভিশাপ হয়ে যাবে ১১। জমিনের বিভিন্ন অংশে ব্যাপক বিধ্বংসী ভূমিকম্প সংঘটিত হবে ১২। হঠাৎ মৃতের সংখ্যা বেড়ে যাবে আর হত্যা গুম বৃদ্ধি পাবে ১৩। মানুষ কথায় সুন্দর হবে, আর কাজে অসুন্দর হবে ১৪। কন্যা সন্তানরা তার মায়ের শাসনে থাকবে এবং মায়ের অনুকরণীয় হবে ১৫। বেপর্দা ব্যক্তিরাই সমাজের নেতৃত্ব দিবে ১৬। সমাজের নিকৃষ্ট এবং রাখাল শ্রেণীর লোকেরা সুউচ্চ প্রাসাদ নিমার্ণ করবে। ১৮। মানুষ তার সন্তানের চাইতে কুকুর লালন পালনকে বেশি প্রাধান্য দিবে ১৭। জগতের লোকেরা সুউচ্চ টাওয়ার নির্মাণে একে অপরে প্রতিযোগতিা করবে ১৯। নারীরা চুলের খোপা মাথার ওপরে এমনভাবে বাঁধবে যেন উটের পিঠের উঁচু জায়গার মতো দেখাবে ২০। দুনিয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা অতিদ্রুত ও সহজ হয়ে যাবে ২১। কাল বা সময় তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে যাবে ২২। দাসী ও সমাজের নিকৃষ্ট মেয়েরা যে সন্তান জন্ম দেবে সে সমাজের অন্যতম নেতা হবে ২৩। অবৈধ জারজ সন্তানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে ২৪। সমাজে সম্মানিত কুলীন ভদ্রলোকগুলো কোণঠাসা হয়ে যাবে আর নিকৃষ্ট অসম্মানী লোকগুলো বেপরোয়া সাহসী হবে ২৫। বড়কে সম্মান করবে না। ছোটকে ম্নেহ করবে না ২৬। সমাজে নেতা নেতৃত্ব বেড়ে যাবে বিশ্বস্ততা কমে যাবে ২৭। উলঙ্গ আর বেহায়াপনার প্রতিযোগিতায় নারীরা ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত হবে ২৮। জেনা ব্যাভিচার আর মদপান বেড়ে যাবে ২৯। প্রকৃত আত্মীয়দের ছেড়ে বন্ধু-বান্ধবদের আতিথেয়তা বেড়ে যাবে ৩০। সমাজে ফাসাদ দুর্নীতি ব্যাপক আকার ধারণ করবে।
কেয়ামতের বড় আলামত সমূহের অন্যতম হলো:-
১। দুখান-যার অর্থ ধোয়া বা ছাই-এই ধুয়া শেষ যুগে আসবে যা আবহাওয়াকে গভীরভাবে দূষিত করবে। যার প্রভাবে মুমিনগণ সর্দি ও কাশিতে ভুগবে। আর কাফেরগণ নেশাগ্রস্ত হয়ে তার নাক, কান ও পশ্চাদ দিয়ে বের হবে। এর প্রভাব ৪০ দিন-রাত পর্যন্ত স্থায়ী হবে। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে বলেছেন, অতএব আপনি সেই দিনের অপেক্ষা করুন যখন আকাশ ধুয়ায় ছেয়ে যাবে যা মানুষকে ঘিরে ফেলবে, এটা যন্তণাদায়ক শাস্তি। (সুরা দুখান আয়াত-১০-১১)। রাসুল (সা:) দুখান সম্পর্কে বলেন, এটা হলো এমন এক ধুয়া যা পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত আচ্ছন্ন করে ফেলবে যার স্থিতিকাল হবে ৪০ দিন-রাত।
২। দাজ্জালের আবির্ভাবঃ- সহি বুখারি ও মুসলিম শরিফের বর্ণনায় তার প্রকার সময় স্থিতি ও শেষ সম্পর্কে বর্ণনা করে বলা হয়েছে। দাজ্জালের পরিচয় সম্পর্কে হজরত আনাস (রা.) বর্ণিত রাসুল (স:) বলেন: দাজ্জালের চক্ষুসমূহ হবে টেঁরা দুই চোখের মাঝখানে আরবিতে কাফের লেখা থাকবে যা সকল শিক্ষিত অশিক্ষিত মুসলমানগণ পড়তে পারবে। আর তার শরীর হবে মোটা তার কাছে আগুন থাকবে পানিরূপে আর পানি থাকবে আগুনরূপে। (চলবে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন