শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

বিনোদন প্রতিদিন

হাইব্রিড অভিনেত্রীদের অপকর্মের খেসারত আর কত দিতে হইবে!

প্রকাশের সময় : ১৮ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:৩৬ এএম, ১৮ জুন, ২০১৬

ডিলান হাসানঃ বর্তমান প্রজন্মের অভিনেত্রীদের মধ্যে যাহারা মডেলিংয়ের চমক দেখাইয়া অভিনয় নামক অত্যন্ত জটিল ও কুটিল একটি মাধ্যমে আসিয়োছেন, তাহারা যেন রাতারাতি নিজেদের মস্ত বড় অভিনেত্রী ভাবিতে শুরু করিয়াছেন। এক শ্রেণীর নির্মাতা ও চ্যানেলের লোকজনও এই সকল হাইব্রিড অভিনেত্রীদের লইয়া অতিশয় আহলাদে আটখানা হইয়া উঠেন। ভাবটি এমন দেখাইতে চেষ্টা করেন, উহাদের ছাড়া ইহ জগতে আর কোনো বড় অভিনয় শিল্পী নাই। উহাদের লইয়া নাটক বিনির্মিত না হইলে নাটক নির্মাণই অনর্থক হইয়া পড়িবে। চ্যানেলের অনুষ্ঠান বিভাগ ও মার্কেটিং বিভাগের সহিত জড়িত একশ্রেণীর ব্যক্তি যাহাদের নাটক সম্পর্কে জ্ঞান খুবই সীমিত, তাহারা কেবল ঐ সকল হাইব্রিড অভিনেত্রীদের দ্বারা ঘুর্ণিপাকে পড়িয়া প্রবল দুর্বল হইয়া উহাদের লইয়া নাটক নির্মাণ করিতে নির্মাতাদের এক প্রকার নির্দেশ দিয়া থাকেন। নাটকের চরিত্রের সহিত উহাদের কোনো মিল রহিল কি রহিল না, উহা বিবেচনা করিবার মতো জ্ঞানটুকুও ঐ সকল চ্যানেলীয় ব্যক্তিদের রহিয়াছে কিনা সন্দেহ। নাটক সম্পর্কে চ্যানেলের এই শ্রেণীর অজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি যেহেতু নাটক চালাইবার একচ্ছত্র অধিকার লইয়া বসিয়াছেন, তখন নির্মাতাদেরও তাহাদের কথার বাহিরে যাইবার জো নাই। উহাদের কথার বাহিরে গেলে নাটক প্রচার হইবে না। কাজেই নাটক বানাইতে হইলে তাহাদের কথা শুনিতে হইবে। আবার ইহার বাহিরেও একশ্রেণীর চাটুকার নির্মাতা রহিয়াছেন, যাহারা শুধু চ্যানেলের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চাটুকারিতাই করিয়া থাকেন না, হাইব্রিড অভিনেত্রীদেরও চাটুকারিতা করিয়া থাকেন। তাহাদের চাটুকারিতাই এই সকল অভিনেত্রীদের মনে এই ভাবের উদয় হইয়া উঠে যে উহারা বিশ্বের সেরা কিছু হইয়া উঠিয়াছেন। ফলে উহারা দিগবিদিক জ্ঞানশূন্য হইয়া যাহা খুশি তাহা আচরণ করিয়া থাকেন। তাহাদের শিডিউল পাইতে নির্মাতাদের দরদর করিয়া ঘামিতে হয়। শত বিন্দু ঘাম ঝরাইয়া যখন শিডিউল পান, তখন দেখা যায়, পূর্ব নির্ধারিত শূটিংয়ের শিডিউল মোতাবেক শিডিউল পান নাই। অভিনেত্রী ঘাপলা করিয়া দিয়াছে। তখন শুরু হয় হইচই। এ ধরনের ঘটনা এখন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হইয়াছে। সম্প্রতি তপু খান নামক এক নির্মাতা হাইব্রিড অভিনেত্রী শখের শিডিউল ফাঁসাইবার অভিযোগ আনিয়া সংবাদ সম্মেলনই করিয়া বসিলেন। তিনি সবিস্তারে বলিলেন তাহার লাখ টাকা ক্ষতি সাধিত হইয়াছে। হইবারই কথা। শিডিউল অনুযায়ী যদি শিল্পীর শূটিং না করা যায়, তাহা হইলে ক্ষতি সাধিত না হইয়া পারে না। তপু খান সংবাদ সম্মেলন করিয়া শখের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনিয়াছেন, তাহা নতুন নয়। তাহারও আগে অনেককে শখ একইভাবে ফাঁসাইয়াছেন। উহার মতো মডেলিংয়ের ঝলক দেখাইয়া যাহারা অভিনয়ে নাম লিখাইয়াই বড় অভিনেত্রী হইয়া উঠিয়াছেন বলিয়া নিজেদের মনে করিতে থাকেন, উহাদের মতো এমন হাইব্রিড অভিনেত্রীদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ অহরহই উঠিতে দেখা যায়। উহারা যে ‘হাইব্রিড’ উহাতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নাই। ‘হাইব্রিড’ এ কারণেই যে উহারা অভিনয়ের জটিল অংক সূত্রে প্রবেশ করা দূরে থাক প্রথম পাঠটুকু সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা উহাদের নাই। উহারা মনে করিয়া বসিয়া আছে, মডেলিংয়ের চমক দেখাইলেই হইল, অভিনয়ের চমক দেখাইবার প্রয়োজনীয়তা নাই। যাহাই হউক, উহা একটি লম্ব-চওড়া আলোচনা। সহজে শেষ হইবে না। পরবর্তীতে আলোচনার জন্য তুলিয়া রাখিলাম। প্রসঙ্গে ফিরিয়া আসি। শখ নামক হাইব্রিড অভিনেত্রীটির বদনাম বোধকরি কাহারো অজানা নাই। মিডিয়ার শুরুতেই এমন আকাম করিয়া বসিয়াছিলেন যে, চারিদিকে ছিঃ ছিঃ রব উঠিয়াছিল। কী এক অশ্লীল ভিডিওতে তাহার উত্তেজক পারফরমেন্স চারদিকে ছড়াইয়া পড়িয়াছিল। পত্র-পত্রিকায়ও এন্তার সংবাদ প্রকাশিত হইয়াছিল। মিডিয়ায় আসিবার পূর্ব মুহুর্তে যে নিজেকে বিলাইয়া দিয়া এইরূপ অপকর্ম করিতে পারে, তাহার উদ্দেশ্য আর যাহাই হোক একজন শিল্পী হইয়া উঠিবার বাসনা যে নয়, তা বোধ করি ব্যাখ্যা করিয়া বলিবার অবকাশ নাই। অর্থ কামাই করিবার সুতীব্র অভিলাষই যে তাহার একমাত্র লক্ষ্য, তাহা সুনিশ্চিতভাবেই ঠাহর করা যায়। শুধুমাত্র রং এবং ঢং করিয়া কিছু লোকের দৃষ্টি আকষর্ণ করিবার নিমিত্তে উহারা ধরাকে সড়া জ্ঞান করিয়া চলিয়াছে। এই ধরনের হাইব্রিড অভিনেত্রীরা আবার কিছু লোকের প্রশ্রয় পাইয়া নির্মাতাদের যেমন ভোগান্তির চরমে লইয়া যান, তেমনি সিনিয়র অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সহিতও বেত্তমিজি করিয়া থাকে। অনেক সিনিয়র শিল্পীরাও উহা মানিয়া লইতেছেন। কেহ মানিতে না পারিয়া এর সহিত ওর সহিত বলিয়া বেড়ান। কেহ দুঃখ করিয়া দীর্ঘ শ্বাস ছাড়িয়া পুরণো দিনের আদব-কায়দার কথা স্মরণ করেন। এই ধরনের হাইব্রিড অভিনেত্রীদের জন্য টেলিভিশন মিডিয়ার ভাব ও মর্যাদা বিনষ্ট হইয়া শনির দশায় উপনীত হইতেছে বলিয়া অনেকে মনে করেন। শখ যে তপু খানের সিডিউল ঘাপলা করিলেন, তার প্রতিবাদ করা ন্যায়সঙ্গত বলিয়াই প্রতীয়মাণ হইতেছে। তবে এ নিয়ে সিনিয়র থেকে শুরু করে জুনিয়র অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কেউ কেউ শখের পক্ষ লইয়া পাল্টা যুক্তি দাঁড় করাইতে চেষ্টা করিতেছেন যে, নির্মাতারা যখন শেষ মুহুর্তে শিল্পীদের সিডিউল বাতিল করেন, তখন তো আমরা কেউ সংবাদ সম্মেলন করিয়া অভিযোগ করেন না। যুক্তি আছে বটে! তবে শিল্পীদের আগে এই বোঝা বুঝিতে হইবে, মিডিয়া বা শিল্প মাধ্যম নির্মাতা নির্ভর নাকি শিল্পী নির্ভর। শিল্পী কি নিজে নিজেই সৃষ্ট হইয়া উঠেন, নাকি নির্মাতা সৃষ্টি করিয়া থাকেন। নির্মাতাকে ‘ক্যাপ্টেন অব্য দ্য শিপ’ বা গুরু বলিয়া মানা হয় কিনা। যাহা হউক, এসব চিন্তা ও নীতি-নৈতিকতা যেসব শিল্পীর মধ্যে রহিয়াছে বোধ করি, তাহারা শুধুমাত্র নিজের ‘জাত’ বিচার করিয়া কাহারো অন্যায় আচরণের পক্ষাবলম্বন করা মোটেও সমীচিন বলিয়া গণ্য হইতেছে না। নির্মাতাদেরও ভুল হইতে পারে, উহারা সাধু-সন্যাসী নন। তবে কোনো নির্মাতাই একান্ত সমস্যার মুখোমুখি না হইলে কোনো শিল্পীর সিডিউল বাতিল করিবার নজির সৃষ্টি করেন না। আমরা যারা মিডিয়ায় রাডার-এর ভূমিকা পালন করিয়া থাকি, তাহারা বিষয়টি ভালভাবেই অবগত রহিয়াছি। কাজেই, শিল্পীদের বুঝিতে হইবে উহারা যেমন খুশি তেমন করিতে পারেন না। যাহারা প্রকৃতই অভিনেত্রী বা অভিনেতা উহারা সত্যসত্যই পেশাদার হইয়া উঠেন। কর্ম ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ধড়িবাজি বা প্রতারণাপূর্ণ আচরণ থেকে নিজেদের নিবৃত্ত করিযা রাখেন। এই কথাও উল্লেখ করিবার প্রয়োজন মনে করিতেছি যে, যেসব হাইব্রিড অভিনেত্রী বা অভিনেতা রহিয়াছেন, তাহারা যে ভাল অভিনেতা-অভিনেত্রী হইয়া উঠিতে পারিবেন না, এমন কথা কেহ হলফ করিয়া বলিতে পারিবে না। তবে হাইব্রিড অপবাদ গুচাইতে উহাদেরকে শিল্পী হইবার দিকে মনোযোগী হইয়া উঠা এবং নিজস্ব চেষ্টা থাকিতে হইবে। তাহা না হইলে মিডিয়ায় উহাদের অস্তিত্ব টিকিয়া রাখা মুশকিল হইবে এবং শনির দশা কোনো কালেই কাটাইয়া উঠিতে পারিবে না।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Mohammad Farhad ১৮ জুন, ২০১৬, ১২:২৩ পিএম says : 0
Aapni jotharthoy boliacen Mr Reporter, aamio aaponaar shaathe ekmot.
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন