চলচ্চিত্র নির্মাণ ব্যয় কমাতে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশে চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতি। যেখানে শুটিং সময়, কল সময় ও চুক্তিস্বাক্ষরসহ বেশ কিছুক্ষেত্রে কঠোরভাবে মেনে চলার বিষয় উল্লেখ করে নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে।
পাশাপাশি মুক্তির আগে প্রচারণার বিষয়ে বাধ্যবাধকতা আনা হয়েছে। জানানো হয়েছে, শুধু নির্মাণ নয়, প্রচারণার জন্যও প্রধান শিল্পীদের ছবি মুক্তির আগে কমপক্ষে পাঁচ দিন সময় দিতে হবে।
আগামী ১ নভেম্বর থেকে নীতিমালাটি কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতি। ইতোমধ্যে সংগঠনটির সঙ্গে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি ও বিএফডিসির অন্যান্য সংগঠন একাত্মতা প্রকাশ করেছে। বিষয়গুলো নিয়ে আজ (২১ অক্টোবর) দুপুরে এফডিসিতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতি। সেখানে নীতিমালা পড়ে শোনানো হয়।
প্রযোজক সমিতি মনে করে, চলচ্চিত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা ও অনিয়ম রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করে নির্মূল করার জন্য নতুন নীতিমালার বিকল্প নেই। তাই প্রণয়ন হয়েছে এটি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু, সাধারণ সম্পাদক শাসমুল আলম, ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি পদে কামাল মো. কিবরিয়া লিপু, সহকারী সাধারণ সম্পাদক পদে আলিমুল্লাহ খোকন, কোষাধ্যক্ষ পদে মেহেদী হাসান সিদ্দিকী, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে ইলা জাহান উপস্থিত ছিলেন। অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার, মহাসচিব বদিউল আলম খোকন, উপ-মহাসচিব শাহীন সুমন, সাংগঠনিক সচিব কবিরুল ইসলাম রানা প্রমুখ। নতুন নীতিমালা পাঠ করে শোনান প্রযোজক কিবরিয়া লিপু।
সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু বলেন, ‘এটা চলচ্চিত্রের সব সংগঠনের নিজস্ব নীতিমালা। চলচ্চিত্রের উন্নয়ন করতে চাইলে এটি মেনেই শিল্পীদের কাজ করতে হবে।’
যা আছে নীতিমালাতে-
শুটিং টাইম: প্রতিদিন সকাল ১০টায় ক্যামেরা ওপেন করতে হবে, চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত। এরমধ্যে জোহরের নামাজ ও দুপুরের খাবারের জন্য একঘণ্টা বিরতি থাকবে।
এর ব্যত্যয় করে কোনও শিল্পী কিংবা কুশলী যদি সময় মতো শুটিং সেটে না আসেন, তার জন্য যদি শুটিং শুরু না হয় এবং আর্থিক ক্ষতি হয় সেই দায়-দায়িত্ব দেরিতে আসা শিল্পী বা কুশলীকে বহন করতে হবে। শিল্পী আসার পরেও সময়মতো শুটিং শুরু করতে না পারলে তার দায় নিতে হবে পরিচালককে। সকাল ১০ টায় ক্যামেরা ওপেনের পর কোন শিল্পী কখন আসবে সে সময় নির্ধারণ করবেন পরিচালক।
শুটিং কল টাইম: শুটিংয়ের ওপেনিং কল টাইম সকাল ৮টা।
চুক্তিস্বাক্ষর: শিল্পী ও কুশলীদের অবশ্যই প্রযোজকের সঙ্গে চুক্তিস্বাক্ষর করতে হবে। চুক্তির সময় প্রথম কিস্তি ২৫ শতাংশ, পরবর্তী কাজের অগ্রগতির ভিত্তিতে বাকি ৭৫ শতাংশ পারিশ্রমিক পরিশোধ করা হবে। মোট তিন কিস্তিতে পারিশ্রমিক পরিশোধ করা যাবে। কোনোভাবেই এককালীন পারিশ্রমিক প্রদান গ্রহণযোগ্য হবে না।
কনভেন্স: এক লাখ টাকার উপরে যাদের পারিশ্রমিক তারা কোনও প্রকার কনভেন্স (যাতায়াত ভাতা) পাবেন না।
আউটডোর শুটিং: যেসব কলাকুশলী দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করে পারিশ্রমিক পান, তারা আউটডোরেও সেই পরিমাণ পারিশ্রমিক পাবেন। আউটডোরে শুটিং চলাকালীন সহকারী পরিচালক ও সহকারী চিত্রগ্রাহকরা কনভেন্সের অর্ধেক হাত খরচ পাবেন।
কস্টিউম/ড্রেস (পোশাক): ড্রেসের জন্য শিল্পীকে আলাদা টাকা প্রদান করা হবে না। গল্পের প্রয়োজনে শিল্পীদের ড্রেস প্রোডাকশন থেকে তৈরি হবে। শুটিং সম্পন্ন হওয়ার পর সেগুলো প্রোডাকশনের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। কোনও ড্রেস কোনও শিল্পীর পছন্দ হলে সেটা ক্রয়মূল্য দিয়ে শিল্পী শুটিং শেষে নিতে পারবেন।
চলচ্চিত্রের প্রচারণা: চলচ্চিত্র মুক্তির আগে প্রচারণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ (প্রধান) শিল্পীদের কমপক্ষে ৫ দিন শিডিউল দিতে হবে।
শিল্পীদের সহকারী: নায়ক, নায়িকা, ভিলেন (প্রধান চরিত্র) যারা কাজ করেন তারা একজন করে সহকারী সঙ্গে নিতে পারবেন। যেটির ব্যয় প্রোডাকশন বহন করবে। অতিরিক্ত কেউ থাকলে তাদের ব্যয়ভার প্রোডাকশন বহন করবে না।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চলচ্চিত্র নির্মাণের এই নতুন নীতিমালা পর্যবেক্ষণের জন্য ১১ সদস্যের মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। আহ্বায়ক হিসেবে থাকছেন শামসুল আলম এবং সদস্য সচিব বদিউল আলম খোকন।
উল্লেখ্য, চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতি ও পরিচালক সমিতির নির্বাচিত কমিটির সদস্যরা চলচ্চিত্রের সমস্যা নিয়ে ২৪ আগস্ট এক যৌথ সভায় বসেন। সেখানেই নতুন নীতিমালা প্রণয়নের জন্য আহ্বায়ক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তারা বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করে এই নীতিমালা প্রণয়ন করলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন