প্রিয় নবী (সা:) বলেছেন, একজন মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। সুতরাং আপন দ্বীনি ভাইয়ের সাথে সর্বপ্রকার হিংসা-বিদ্বেষ, কলহ-বিবাদ, হানাহানি, মারামারি পরিহার করে পারস্পরিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা ও সহানুভূমির সাথে বসবাস করার জন্য নবী করিম (সা:) বার বার তাগিদ দিয়েছেন।
তোমরা পরস্পর হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করিও না, কেউ কারো ক্ষতি করার জন্য উঠে পড়ে লাগিও না, কেউ কারো হতে মুখ ফিরিয়ে নিও না। পরস্পরের প্রতি ক্রোধান্বিত হইও না, বরং পরস্পরে আল্লাহর বান্দা ও ভাই-ভাই হিসাবে মিলে মিশে থাকবে। এক মুসলমান অপর মুসলমান হতে তিনদিনের বেশী সর্ম্পক ছিন্ন করে থাকাকে হারাম করে দেয়া হয়েছে।
এক মুসলমান অপর মুসলমানকে দৈহিক, মানসিক যেকোনভাবে কষ্ট দেয়া হারাম। নবী করিম (সা:) বলেন- সেই প্রকৃত মুসলিম যার হাত ও মুখ হতে অন্য মুসলিমরা নিরাপদ থাকে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি তার মুখের দ্বারা কর্কশ কথা বলে না, কোন অন্যায়-অসত্য উক্তি করে না অথবা হাতের দ্বারা কোনরূপ দুর্ব্যবহার করে কোন মুসলিমকে কষ্ট দেয় না, কোন মুসলিমের ওপর অন্যায়-অত্যাচার করে না, সেই ব্যক্তিই প্রকৃত মুসলিম। অপর হাদীসে হুজুর (সা:) এরশাদ করেছেন, কোন মুসলমানকে গালি দেয়া, দুর্ব্যবহার করা ফাসেকী বা সীমালংঘন করার শামিল আর মারামারি ও হানাহানিতে লিপ্ত হওয়া কুফরী।
অন্য হক হাদীসে প্রিয় নবী (সা:) বলেছেন- একজন মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সুতরাং সে যেন তার অপর মুসলিম ভাইয়ের ওপর জুলুম না করে, তাকে হেয় প্রতিপন্ন ও লাঞ্ছিত না করে। এটাই এক মুসলিমের মন্দ হওয়ার জন্য যথেষ্ট যে, সে তার মুসলিম ভাইকে হেয় প্রতিপন্ন করবে। একজন মুসলিমের ওপর অপর মুসলিমের রক্ত, মাল ও সম্ভ্রমহানি করা হারাম (মুসলিম)।
একদা নবী করিম (সা:) তিন তিনবার ফরমাইলেন, আল্লাহর কসম সেই ব্যক্তি ঈমানদার হতে পারে না। সাহাবিগণ জিজ্ঞাসা করলেন কে সেই ব্যক্তি? ইয়া রাসুলাল্লাহ। হুজুর (সা:) বললেন, যার প্রতিবেশী তার কষ্ট দেয়া হতে নিরাপদ নয় (বুখারী, মুসলিম)। অন্য হাদীসে প্রিয় নবী (সা:) ফরমাইয়াছেন যার প্রতিবেশী তার কষ্টদান হতে নিরাপদ নয়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না (মুসলিম)।
হযরত তামীম দারী (রা.) হুজুর (সা:) হতে বর্ণনা করেছেন, নবী করিম (সা:) তিন তিনবার বলেছেন যে, দ্বীন হল পরস্পরের কল্যাণ কামনা করা। অপর এক হাদীসে নবী করিম (সা:) বলেছেন- যার সামনে তার এক মুসলিম ভাইয়ের গীবত করা হচ্ছে সে যদি তা প্রতিহত করার ক্ষমতা রাখে এবং প্রতিহত করে তাহলে আল্লাহ পাক দুনিয়া ও আখেরাতে তার সাহায্য করবেন। আর যদি ক্ষমতা থাকা স্বত্তে¡ও সে তা প্রতিহত না করে তাহলে আল্লাহ পাক দুনিয়া ও আখেরাতে তাকে লাঞ্ছিত করবেন (শরহে সুন্নাহ)।
হযরত আবু দারদা (রা.) বলেন, আমি নবী করিম (সা:) এর বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের ইজ্জত-আব্রুর হেফাজত করে, কেয়ামতের দিবসে তাকে জাহান্নামের আগুন হতে হেফাজত করা আল্লাহ পাকের দায়িত্ব হয়ে যায়। অতঃপর নবী করিম (সা:) নিন্মোক্ত আয়াতখানা তেলাওয়াত করলেন- ‘আর ঈমানদারগণের সাহায্য-সহযোগিতা করা আমার দায়িত্ব।’ হযরত জাবের (রা) হতে বর্ণিত: তিনি বলেন, নবী করিম (সা:) বলেছেন।
কোন মুসলিম যদি তার অপর মুসলিম ভাইকে এমন স্থানে লাঞ্ছিত করে যাতে তার মর্যাদার হানি করা হয়, তার আব্রু-ইজ্জতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করা হয়, তাহলে আল্লাহ পাক তাকে এমন স্থানে লজ্জিত লাঞ্ছিত করবেন যেখানে সে আল্লাহর সাহায্যকামী (ও আল্লাহর সাহায্যের মুখাপেক্ষী হবে) আর যে ব্যক্তি এমন স্থানে তার মুসলিম ভ্রাতার সাহায্য করবে সেখানে তার মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হওয়ায় এবং ইজ্জত-আব্রু বিনষ্ট হওয়ার উপক্রম হয় তাহলে আল্লাহ পাক তাকে এমন স্থানে সাহায্য করবেন যেখানে সে আল্লাহর সাহায্যের মুখাপেক্ষী হবে (আবু দাউদ)।
অন্য হাদীসে প্রিয় নবীজী (সা:) ফরমান সেই ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের কোন গোপন গুনাহ ফাঁস হতে দেখে তা ঢেকে দিল সে যেন জীবন্ত কবর দেয়া কোন কন্যাকে উদ্ধার (জীবিত) করল (আহমদ তিরমিজী)।
অন্য এক হাদীসে নবী করিম (সা:) একজন মুসলিমকে অপর মুসলিমের আয়না হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন এবং অত্যন্ত হৃদ্যতার সাথে পরস্পরকে সংশোধনের জন্য উৎসাহিত করেছেন। হুজুর (সা:) ফরমান- “তোমাদের একজন তার অপর ভাইয়ের জন্য আয়নাস্বরূপ। সুতরাং সে যদি তার মুসলিম ভ্রাতার মধ্যে কষ্টদায়ক কিছু দেখতে পায়, যেন তা সরিয়ে দেয়”। অপর বর্ণনায় রয়েছে, “একজন মুমিন তা অপর মুমিন ভ্রাতার জন্য আয়নার ন্যায় এবং একজন মুমিন অপর মুমিনের ভাই ই বটে, যে তার অপর মুমিন ভাইয়ের ক্ষতি ও দুঃখ বিদূরিত করার চেষ্টা করবে এবং তার অনুপস্থিতিতে তার সম্পদ ও ইজ্জত আব্রæর হেফাজত করবে” (তিরমিজি ও আবু দাউদ)। (চলবে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন