কেন্দ্রীয় যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিছুর রহমানের কমিটি বাণিজ্যে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে ফরিদপুরের বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা উপজেলার সুসংগঠিত আওয়ামী যুবলীগ।
দুই উপজেলায় শক্তিশালী দু’টি কমিটি বিদ্যমান থাকতে মোটা অংকের অর্থ বাণিজ্য করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন ওই কেন্দ্রীয় নেতা। যার ফলে স্থানীয়ভাবে দুইটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে আ.লীগের সহযোগী সংগঠনের মুজিব সৈনিকেরা। নতুন কমিটিতে স্থান পেয়েছে অনুপ্রবেশকারী জামায়াত-শিবির ও বিএনপির নেতাকর্মীরা।
জানা যায়, ২০১৭ সালের ১৩ মার্চ বোয়ালমারী সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও চতুল ইউপি চেয়ারম্যান শরীফ সেলিমুজ্জামান লিটুকে আহ্বায়ক করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট বোয়ালমারী উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় যুবলীগ।
ওই কমিটির আহ্বায়ক শরীফ সেলিমুজ্জামান লিটু ও যুগ্ম আহ্বায়ক মো. দাউদুজ্জামান জানান, সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সম্মেলন করে পরীক্ষিত মুজিব সৈনিকদের দিয়ে প্রতিটি ইউনিটে কমিটি গঠন করে উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি। কেন্দ্রে নির্দিষ্ট সময়ে উপজেলা সম্মেলন করার নির্দেশনা চাইলেও কেন্দ্র থেকে জাতীয় ও উপজেলা নির্বাচনের কারণে বারবার সম্মেলনের সময় পেছাতে থাকে।
সর্বশেষ চলতি বছরের ৩১ জুলাই সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি যখন সম্পন্ন তার একদিন পূর্বে ৩০ জুলাই কোন কারণ না দেখিয়েই ফোনে সম্মেলনটি স্থগিত করে দেয় কেন্দ্রীয় যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিছুর রহমান। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার পরেও সম্মেলনের তারিখ না দিয়ে গত ১৫ সেপ্টেম্বর গঠনতন্ত্র ও জেলা কমিটিকে পাশ কাটিয়ে ফরিদপুর-১ আসনের এমপি মো. মনজুর হোসেন বুলবুল যুবলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিছুর রহমানকে ম্যানেজ করে ছাত্রদল থেকে আ.লীগে অনুপ্রবেশকারী মো. রফিকুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে ২৫ সদস্য বিশিষ্ট নতুন একটি কমিটি অনুমোদন করান। নতুন আহ্বায়ক কমিটির ১৯ নম্বর সদস্য শেখর ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মনিয়ার, ২২ নম্বর সদস্য ঘোষপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি মো. ওবায়দুর রহমান, ১৬ নম্বর সদস্য মো. সাগর উপজেলা ছাত্রদলের ৫৫ নম্বর সদস্য ও ১৩ নম্বর সদস্য মো. নাজমুল উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির ১৫ নম্বর সদস্য। এছাড়াও নতুন কমিটিতে জামায়াত বিএনপির একাধিক কর্মী রয়েছে। যে কারণে নতুন কমিটিকে প্রত্যাখান করেছে উপজেলার সর্বস্তরের যুবলীগের নেতাকর্মীরা।
শরীফ সেলিমুজ্জামান লিটু ও আলফাডাঙ্গা উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র সাইফার রহমান সাইফুর জানান, নতুন কমিটি না করার কেন্দ্রীয় নির্দেশ থাকলেও তারা ওই আদেশ অমান্য করে আলফাডাঙ্গা ও বোয়ালমারীতে কমিটি করেছে। যাদেরকে ওই কমিটিতে সদস্য করা হয়েছে তাদেরকে কোনদিন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের রাজনীতি করেনি। বরং উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, ইউনিয়ন নির্বাচন ও পৌর নির্বাচনে নৌকার প্রতীকের বিরোধীতা করেছে। অতিবিলম্বে এই অবৈধ কমিটি ভেঙে কাউন্সিলের মাধ্যমে প্রকৃত বঙ্গবন্ধুর আদর্শে যারা রাজনীতি করে এদেরকে নিয়ে কমিটি করার আহবান জানান।
আলফাডাঙ্গা পৌর মেয়র ও যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সাইফার রহমান সাইফুর আরও জানান, বর্তমান সংসদ সদস্য মো. মনজুর হোসেন নিজের খেয়াল খুশি মতো জামায়াত বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রাধান্য দিয়ে উপজেলার শক্তিশালী যুবলীগ কমিটিকে বাদ দিয়ে নতুন একটি কমিটির অনুমোদন এনেছেন। যে কমিটির ১ নম্বর সদস্য জামায়াত নেতা ও সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী সাইফুল্লাহসহ একাধিক জামায়াত বিএনপির নেতাকর্মী রয়েছে।
বোয়ালমারী উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মো. রফিকুল ইসলাম মোবাইল ফোনে বলেন, যুবদল ও ছাত্রদলের যে দুইজনের কথা বলা হচ্ছে তাদের নাম এক কিন্তু ব্যক্তি তারা না। এদের মধ্যে একজনের বাড়ি গুনবহায়।
এ বিষয়ে সাইফুল্লাহর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমি পূর্বে থেকেই ছাত্রলীগ করে আসছি। আমি কোন দিন জামায়াত শিবিরের রাজনীতি করিনি। একটি গ্রুপ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার চালাচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন