রমজানের আগ মুহূর্তেই সেমিস্টার ফাইনাল শেষ। ভার্সিটি বন্ধ হতে যাচ্ছে প্রায় চল্লিশ দিনের। দীর্ঘদিনের পড়াশোনার চাপ শেষে একটুখানি প্রশান্তির জন্য প্রস্তাবটা কারিনাই করল, চল সবাই মিলে কোথাও থেকে ঘুরে আসি। তাই তো প্রথম রমজানের আগের দিন সকালেই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ১৬তম ব্যাচের ১৬ জন মিলে রওনা দিলাম সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্নার উদ্দেশ্যে। নয়নাভিরাম এই ঝরনার নাম অনেক শোনা হয়েছে, এবার নিজচোখে দেখার পালা। সকালের নাস্তাটা কারিনার পক্ষ থেকেই। লেগুনাতে করে যাত্রা শুরু। পুরোটা সময় হাসি-ঠাট্টা গল্প-গানে একাই মাতিয়ে রাখলো তিমু। কম যায়না বিথী-তানহারও। এরই মাঝে ড্রাইভার পথ ভুল করে জাফলং বাজারে নামিয়ে দিল আমাদের। যেহেতু খুব বেশি একটা দূরে চলে আসিনি তাই সুযোগ পেয়ে পিয়াইন নদী পার হয়ে গেলাম ওপারের সুবিশাল চা বাগানে। একি কা-!! যেদিকে চোখ যায় দিগন্ত জোড়া চায়ের গাছ।
মন চাচ্ছে ঘন সবুজে সমারোহ এ বাগানে হাঁটি অনন্তকাল। মাঝে মাঝেই বাতাসে ভেসে আসছে খাসিয়া শ্রমিকদের পানপাতা সংগ্রহ ও কাঠ কাটার শব্দ। চলে এলাম জিরো পয়েন্টে। এ পথটুকু চাইলে বাজার থেকে গাড়িতেও আসা যায়। তবে খাসিয়া বাগানের অপরূপ সৌন্দর্য মিস না করতে চাইলে হেঁটে আসাই উচিত।
জিরো পয়েন্ট থেকেই দেখা যায় সংগ্রামপুঞ্জি ঝরনা। হেঁটেই তপ্ত বালি পার হতে লাগলাম। সবার ভেতর এক অলিখিত এক প্রতিযোগিতা। কে কার আগে পৌঁছতে পারে ঝরনার কাছে। তবে তালহাকে হারাতে পারল না কেউই। কাছে গিয়ে নিজের চোখকেই যেন কেউ বিশ^াস করতে পারছিলাম না। ঝরনার এতো কাছে আমরা!! একদম পাহাড়ের উপর থেকে শুরু হওয়া জল¯্রােত বড়ো পাথরের কারণে প্রথমে ভাগ হয়ে গিয়েছে দু’ভাগে। দু’ভাগ থেকে চার ভাগে। এভাবে লম্বা একটা সময় বিভিন্ন খ- খ- ভাগে ভাগ হয়ে শেষ হয়েছে একটা ছোট্ট তীব্র ¯্রােতের ঝরনার মধ্য দিয়ে। নিচের সেই ছোট ঝরনাতেও একসাথে পাঁচ/ছয়জন দাঁড়িয়ে গোসল করা যায়। এ এক অপূর্ব দৃশ্য। বড়ো বড়ো পাথরগুলো এমনভাবে সাজানো যেন মনে হয় সিঁড়ি। পাথুরে ঝরনা বেষ্টিত এ সিঁড়ি বেয়ে প্রথমেই একেবারে পাহাড়ের উপরে ঝরনাটার কাছে চলে গেল সাহান। এবার আমাদের পালা। প্রথমে তালহা ভিজতে ভিজতে উপরে উঠে বুঝল, নাহ সমস্যা নেই। মোবাইল, ক্যামেরা দুটোই নিরাপদ। যেন শহুরে খোলস ছেড়ে প্রকৃতির মহানুভবতার কাছে আত্মসমর্পণ করছে সবাই। বাইরে কড়া রোদ আর সংগ্রামপুঞ্জি ঝরনা যেন সাদরে বরণ করে নিচ্ছে তার অপরূপ ¯িœগ্ধতা দিয়ে। এ এক শান্তির পরশ, অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধতার পরশ। সময় যেন এখানে আপেক্ষিক হয়ে গিয়েছে। হৈ হুল্লোড়, সেলফি আর পাথুরে সিঁড়িতে এক ঝরনা থেকে আরেক ঝরনার জল¯্রােতের স্বাদ নিতে নিতে কখন যে ফেরার সময় হয়ে গেছে ভাবতেই পারিনি। সময়ের ব্যবধানে হয়তো অনেক জায়গায় যাওয়া হবে, কিন্তু সংগ্রামপুঞ্জি ঝরনাও যদি না আসতাম তাহলে হয়তো অনেকটাই অসম্পূর্ণ থেকে যেত।
ষ মেহেদী কবীর
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন