শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শিক্ষাঙ্গন

এইচএসসি পরীক্ষা শেষ - এবার স্বপ্ন পূরণের যাত্রা শুরু

প্রকাশের সময় : ২০ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

জুয়েল মাহমুদ

এসএসসিতে ভালো রেজাল্ট করার পর বৈশাখী আক্তার তন্নি এইচএসসিতে ভর্তি হয় রাজধানী ঢাকার মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে। তার আশা আরো ভালো রেজাল্ট করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন সফল করা। একারণেই কয়েক দিন আগে এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হলেও তার একটু প্রাণ খুলে আড্ডা দেয়ার উপায় নেই। কেননা আবারও নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধের জন্য।
শুধু তন্নি নয় এমন ইচ্ছা এইচএসসি পরীক্ষা দেওয়া হাজারো শিক্ষার্থীর। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইলেই তো চলবে না প্রস্তুতি নিতে হবে সবার আগে। কিন্তু এই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে থাকে নানা ধরনের ভীতি। কী ধরনের প্রশ্ন হবে, কীভাবে উত্তর দেব, কীভাবে নিজেকে তৈরি করবÑ এসব চিন্তা সার্বক্ষণিক তাড়া করে শিক্ষার্থীকে। ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটে মোট ১২০ নম্বরের পরীক্ষার মধ্যে অর্ধেকটা থাকে সাধারণ জ্ঞান, আর বাকিটা বাংলা ও ইংরেজি মিলিয়ে যাক্রমে ৩০ নম্বর করে ৬০। ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাউন্টিং বিভাগে ভর্তি হওয়া সায়মা সুলতানা এবং রাষ্টবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হওয়া রিতা মাহমুদা বললেন, কীভাবে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। তাদের লক্ষ্যে পৌঁছানোর স্বপ্নটা কীরকম ছিল জিজ্ঞাসা করলে সায়মা বলেন, আমার গ্রামের বাড়ির বড় ভাইয়া ও আপুদের দেখে যারা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন, তাছাড়া আমার আম্মুর দিক-নির্দেশনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্নটা দানা বেঁধেছিল সেই অষ্টম শ্রেণীতে পড়া থেকেই। আর এই লক্ষ্যে আমি নিয়মিত আমার ক্লাসের বই পড়ার পাশাপাশি সাধারণ জ্ঞানের বই ও জাতীয় দৈনিকগুলো পড়তাম। একদিকে জানার আগ্রহ অন্যদিকে নিজেকে তৈরি করার এ যেন এক মহান ব্রত। রিতা মাহমুদা বলেন, আমি এসএসসি পরীক্ষার পরে আমার খালাত বোনের সাথে একবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে এসেছিলাম তখনই নিজের স্বপ্নটা তৈরি করি। এখানে ভর্তি হয়ে আমাকে পুলিশ কর্মকর্তা হতে হবে বলে স্বপ্ন ঠিক করি। তারা উভয়ে বলেন, জ্ঞানের বিষয়টা কিন্তু চর্চানির্ভর। প্রশ্ন ছিল ইংরেজির প্রস্তুতিটা কীভাবে নিয়েছিলেন? উত্তরে তারা বলেন, ‘ইংরেজি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ভাষা। ইচ্ছে করলেই ইংরেজিকে বাদ দিয়ে চলা যায় না। তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু একাউনটিং, ইংরেজি ও আইন নয় অন্য যে কোনো বিষয়ে পড়ার জন্য ইংরেজিতে ভালো নম্বর পাওয়ার বিকল্প নেই। এজন্য ইংরেজি ব্যাকরণের প্রস্তুতিটা ভালোভাবেই নিয়েছিলাম।’ ইংরেজিতে ভালো করার জন্য নিয়মিত ইংরেজি পত্রিকা পড়াটা জরুরি বলে মনে করেন তারা। ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজি ব্যাকরণের জন্য অনেক বই না দেখে একটি বই অনুসরণ করা উচিত। প্রতিদিন ইংরেজি ব্যাকরণচর্চা করা দরকার বলেও মনে করেন তারা। নুসরাত বলেন, ইংরেজি ব্যাকরণ আমার ভালো লাগে। আমি অক্সফোর্ড ও ক্যামব্রিজ ডিকশনারি থেকে ব্যাকরণের নিয়মগুলো দেখেছি। আর বার বার পড়তাম ইংরেজির মূল বই।’ বাংলা বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে নুসরাত ও ইফতি উভয়ই বললেন, বাংলা ব্যাকরণের জন্য নবম-দশম শ্রেণীর বোর্ডের বইয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলাম। আর খুব ভালোভাবে পড়েছি বাংলা মূল বইটা। ভর্তিযুদ্ধ এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফল কতটা গুরুত্বপূর্ণ জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেন, নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। তার মানে কিন্তু এমনটা নয়, জিপিএ-৫ এর ছড়াছড়িতে আপনি ৫ পয়েন্টের চেয়ে কম পেয়েছেন বলে টিকতে পারবেন না। একটু জোর দিয়েই ইফতি বললেন, এ ক্ষেত্রে অনুশীলন ভর্তিযুদ্ধের বৈতরণী পার হতে খুবই সহায়তা করবে। ওরা দু’জনই কোচিংয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। তাই জিজ্ঞাসা করা হলো ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করতে কোচিংয়ের প্রয়োজনীয়তা কতখানি? এখানেও তারা একমত পোষণ করেন। তাঁরা বলেন, কোচিং সেন্টারগুলো কিন্তু একজন শিক্ষার্থীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেয় না। নিজের যোগ্যতা দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ তৈরি করতে হয়। তবে কোচিং সেন্টারগুলো ভর্তির প্রস্তুতি কীভাবে নিতে হয়, বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পদ্ধতি কেমন হবে, সে বিষয়ে ধারণা দিয়ে থাকে। পড়াশোনা করতে হবে নিজেকেই। কেউ পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেবে না। আত্মবিশ্বাস না থাকলে এ পর্যন্ত আসতে পারতেন না বলেই মনে করেন তাঁরা। তাঁরা সবাই এসেছেন প্রত্যন্ত এলাকা থেকে। শুধু আত্মবিশ্বাসের জোরে তারা অভীষ্ট লক্ষ্যের পানে এগিয়ে চলেছেন। সাবা বলেন, ‘আমি তো ভাবতাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে একজন ভর্তি হলে সেই হব আমি।’ পিঁয়ালী বলেন, আমার হাতে ইংরেজি সাহিত্যের বই ছাড়া অন্য কোনো বই থাকবে না। আমার জীবনে ইংরেজিতে সবসময়ই ভালো ছিলাম, তাছাড়া জীবনে কোনো ক্লাসে প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় হইনি। এবছর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ইচ্ছুদের কীভাবে প্রস্তুতি নেয়া উচিত এ প্রশ্ন করলে তারা বলেন, ফলাফল নিয়ে চিন্তা না করে বই নিয়ে বসে পড়া উচিত। কেননা সময় নষ্ট করা মানে নিজের জীবন নষ্ট করা। রেহেনা পরভীন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালামের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলেন, স্বপ্ন দেখাটা স্বপ্ন নয়, বরং স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করাই হলো স্বপ্ন। আর তাই স্বপ্ন দেখে সময় নষ্ট না করে স্বপ্ন বাস্তবায়নে লেগে পড়ো। তবেই দেশের শীর্ষ স্থানীয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বার খোলা থাকবে তোমার জন্য।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন