পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) আজ। মানবজাতির শিরোমণি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্ম ও ওফাতের দিন। যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি উদযাপন উপলক্ষে সারাদেশে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। মসজিদে মসজিদে রাসূল (সা.) এর জীবনী নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজ-নসিহত অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশসহ বিশ্ব মুসলিম স¤প্রদায় এ দিনটি ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) হিসেবে পালন করে থাকে।
৫৭০ খ্রিস্টাব্দের ১২ রবিউল আউয়াল মহানবী (সা.) ইসলামের শেষ নবী হিসেবে আরবের মরু প্রান্তরে মা আমেনার কোল আলো করে জন্মগ্রহণ করেন। ৬৩২ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে মাত্র ৬৩ বছর বয়সে তিনি মদিনায় ইন্তেকাল করেন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন মানবজাতির অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় মহান উদার, বিনয়ী ও নম্র ব্যক্তিত্ব। তিনি উত্তম চরিত্র ও মহানুভবতার একমাত্র আধার। পিতা মাতা, স্বামী স্ত্রী, প্রতিবেশী সবার অকৃত্রিম শিক্ষণীয় আদর্শ ও প্রাণপ্রিয় ব্যক্তিত্ব নবী করিম (সা.) একাধারে সমাজসংস্কারক, ন্যায়বিচারক, সাহসী যোদ্ধা, দক্ষ প্রশাসক, যোগ্য রাষ্ট্রনায়ক এবং সফল ধর্মপ্রচারক।
কল্যাণকর প্রতিটি কাজেই তিনি সর্বোত্তম আদর্শ। তাঁর অসাধারণ চারিত্রিক মাধুর্য ও অনুপম ব্যক্তিত্বের স্বীকৃতি দিয়ে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সূরা আল-আহজাব, আয়াত: ২১)
তিনি অবিস্মরণীয় ক্ষমা, মহানুভবতা, বিনয়-নম্রতা, সত্যনিষ্ঠা প্রভৃতি বিরল চারিত্রিক মাধুর্য দিয়েই বর্বর আরব জাতির আস্থাভাজন হতে সক্ষম হয়েছিলেন। যে কারণে তারা তাঁকে ‘আল আমিন’ বা বিশ্বস্ত উপাধিতে ভ‚ষিত করেছিল। তিনি যে বিনয়-নম্র ও সৎচরিত্রের অধিকারী ছিলেন, তা তারা একবাক্যে অকপটে স্বীকার করেছে। দুনিয়ার মানুষকে সদাচরণ, উত্তম ব্যবহার এবং সততার দ্বারা বশীভ‚ত করতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর চারিত্রিক গুণাবলি সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয়ই তুমি সুমহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত।’ (সূরা আল-কালাম, আয়াত: ৪) এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি উত্তম চরিত্রের পরিপূর্ণতা সাধনের জন্যই প্রেরিত হয়েছি।’ (মুসনাদে আহমাদ, মিশকাত)।
একটা সময় গোটা আরব জাহান ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। মানুষ হয়ে পড়েছিল বেদ্বীন। তারা আল্লাহকে ভুলে গিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। সর্বত্র দেখা দিয়েছিল অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা। এ যুগকে বলা হতো আইয়্যামে জাহেলিয়াত। তখন মানুষ মারামারি আর হানাহানিতে লিপ্ত ছিল এবং মূর্তি পূজা করত।
এ থেকে মানুষকে মুক্তিসহ তাদের আলোর পথ দেখাতে মহান আল্লাহতায়ালা হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে এই ধরাধামে পাঠান। মহানবী অতি অল্প বয়সেই আল্লাহর প্রেমে অনুরক্ত হয়ে পড়েন এবং প্রায়ই তিনি হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন। পঁচিশ বছর বয়সে মহানবী (সা.) বিবি খাদিজা নামে এক ধনাঢ্য মহিলার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ৪০ বছর বয়সে তিনি নবুয়তপ্রাপ্ত হন। আল্লাহতায়ালার নৈকট্য লাভ করেন।
কর্মসূচি :
দিনটি উপলক্ষে সরকারি, আধাসরকারি ভবন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ভবন ও সশস্ত্র বাহিনীর সব স্থাপনায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। জাতীয় পতাকা ও ‘কালিমা তায়্যিবাহ’ লিখিত ব্যানার ঢাকা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ট্রাফিক আইল্যান্ড ও লাইট পোস্টে প্রদর্শিত হবে। রাতে সরকারি ভবন ও সামরিক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোয় আলোকসজ্জা করা হবে। দেশের সব বিভাগ, জেলা, উপজেলা, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ ও বেসরকারি সংস্থাগুলোয় আলোচনা সভা ও মাহফিলসহ বিশেষ কর্মসূচি পালন করা হবে।
বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার দিবসটির গুরুত্ব তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। এছাড়া দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, বৃদ্ধনিবাস ও মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে উন্নত মানের খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা করা হবে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনগুলোয় যথাযথভাবে মিলাদুন্নবী (সা.) পালন করা হবে। সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এদিকে, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর সাহানে ইসলামী ক্যালিগ্রাফি, মহানবী (সা.) এর জীবনীভিত্তিক পোস্টার ও গ্রন্থ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। আশেকানে মাইজভান্ডারি অ্যাসোসিয়েশন আজ সকালে রাজধানীর শাহজাহানপুর ঐতিহাসিক রেলওয়ে ময়দানে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান জশনে জুলুছ এর আয়োজন করেছে।
নেজামে ইসলাম পার্টি
এদিকে, গতকাল শনিবার পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভায় বলা হয়েছে, মহানবী (সা.) এর আগমনে মানব জীবনে চৈতন্যের সাড়া জাগে। সূচিত হয় মানবতার মর্যাদার পতাকাকে সমুন্নত রাখার নবতর অধ্যায়। মহানবী (সা.) এর আগমন শুধু ইতিহাসের একটি ঘটনামাত্র নয়, বরং মানব চিত্তকে নতুন করে এক গরীয়ান আসন দেয়।
পুরানা পল্টনস্থ মাওলানা আতহার আলী (রহ.) মিলনায়তনে মহানগর সভাপতি অধ্যাপক এহতেশাম সারোয়ারের সভাপতিত্বে এবং মহানগর সাধারণ সম্পাদক মুফতি আবদুল কাইয়ূমের পরিচলনায় অনুষ্ঠিত সভায় নবী (সা.) দিবসের বিভিন্ন দিকের ওপর আলোকপাত করে বক্তব্য রাখেন, পার্টির সভাপতি মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, অধ্যাপক মাওলানা শেখ লোকমান হোসেন, মাওলানা এ কে এম আশরাফুল হক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন