আব্দুল্লাহ আল কাউসার মিলন : কুয়াশার সাদা চাদর, নিস্তব্ধ রাতে শিশির পড়ার মৃদু শব্দ এসবই শীত আসার বার্তা নিয়ে আসে। ঋতু পরিক্রমায় আবহমান বাংলায় এভাবেই প্রতি বছর শীত আসে।
কুয়াশার চাদরে মোড়ানো সকালটা যখন কম্বলের তলায় গুটিশুটি মেড়ে আরেকটু ঘুমানো হয় না, শীতের অলস সকালে পরশ বৃক্ষের সবুজ আদরকে সঙ্গি করে চোখে কাঁচা ঘুম নিয়ে তরুণরা ছুটে চলে ক্যাম্পাসে। সেই ভোরের কুয়াশাটাকে আলিঙ্গন করে ক্লাসের দিকে যাওয়ার সময় একটুকরো মিষ্টি রোদের হীরক ঝিলিক যখন কুয়াশার বিন্দুগুলো থেকে অপলক বিচ্ছুরিত হতে থাকে, তা মনে তৈরি করে এক ভালোলাগার মোহ।
স্যারের কঠিন লেকচারগুলো ঠা-া ঘোরলাগা সকালে আরও শীতল হতে থাকে। তবে তা একসময় উষ্ণতা পেতে শুরু করে, ঠিক যেভাবে মাকড়সার ফাঁকগলে জ্বলতে থাকে শিশির কণা।
এভাবেই শীতের সকালের শুরু হয় সাভারের অদূরস্থ গণবিশ্ববিদ্যালয়ে। শীতের সকালের সবচেয়ে কষ্টদায়ক ব্যাপার হচ্ছে ক্লাসে উপস্থিত হওয়া। অনেককেই সকালবেলা ঘুম থেকে উঠতে হয় ৯টায় ক্লাস করার প্রস্তুতি নেয়ার জন্য। অনেকেই আরামের ঘুম হারাম করে ক্লাসে যেতে চায় না। প্রায় সকল শিক্ষার্থীদেরই শীতে ঘুম থেকে দেরিতে উঠতে দেখা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শীতের উষ্ণতা উপভোগ করে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের ঘাসের গালিচায় বসে রোদের আলিঙ্গন মেখে। ক্লাসের ফাঁকে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই চলে আসে সেখানে। তৈরি হয় সকল বিভাগের শিক্ষার্থীদের এক রোদেলাস্নিগ্ধ মিলনমেলা। বাহারী রঙের শীতের পোশাকের বাহারে পুরো খেলার মাঠ এক রঙিন সাজে সেজে উঠে। সাথে গাঁদা ফুলের হলুদ বর্ণছটা যেন চোখ দুটোকে ধাঁধিয়ে দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী মাইশা কলি রিমি বলেন, গোল হয়ে বসে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে সময় কাটানোর উপযুক্ত সময় শীতকাল। বকুলতলা, ওয়াইফাই চত্বর, একাডেমিক ভবনের সামনেসহ কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বসে সকালের নরম রোদে আড্ডা দেয়ার অনুভূতিই অন্যরকম।
মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী রথী বিশ্বাস শীতের সকালের অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, পৃথিবীর সব দুঃখ একদিকে আর শীতের সকালবেলা লেপের তলে থেকে ওঠার দুঃখ একদিকে ।
শীতের আহবানটাকে জড়িয়ে নিতে কেউবা আবার ক্লাস শেষ করেই ছুট দেয় ভলিবল কিংবা ব্যাটমিন্তন ব্যাট হাতে মেতে উঠতে।
ক্যাম্পাসে শীত মানেই আলস্য, সকালের ক্লাস মিস করা, বন্ধুদের নিয়ে পিঠা খাওয়া আর নানা রঙের পোশাক পরে দলবেধে ঘুরাঘুরি আর শীতের পরশ মাখতে মাখতেই জমতে থাকে আড্ডা, চলতে থাকে গল্পবাজি, সাথে চলতে থাকে গীটারের সুর ‘আমি বাংলায় গান গাই, আমি বাংলার গান গাই, আমি আমার আমিকে চিরদিন এই বাংলায় খুঁজে পাই’।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন