বিশেষ পুনঃতসিল নীতিমালার আওতায় ঋণখেলাপিদের গণ সুবিধার সময়সীমা আরও ৩ মাস বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থাৎ খেলাপিঋণ পুনঃতফসিলে আরও ৩ মাস আবেদন করা যাবে। এ সংক্রান্ত আবেদন সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদে অনুমোদন প্রদান করতে হবে। একই সঙ্গে এ সুবিধাপ্রাপ্তদের নতুন ঋণ দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে নতুন ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ঋণ পুনঃতফসিল নিয়ে ২০১২ সালের মাস্টার সার্কুলারের ৬ (এ) ও ৬(বি) বর্নিত নির্দেশনা পরিপালনের কথা বলা হয়েছে। ওই সার্কুলার অনুযায়ী, নতুন ঋণ পাওয়ার জন্য ঋণখেলাপিদের অতিরিক্ত হিসেবে তাদের মোট ঋণ বকেয়ার ১৫ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিতে হবে। তবে রফতানিকারকদের ক্ষেত্রে তা হবে মোট ঋণ বকেয়ার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। রবিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করা হয়েছে।
জানা যায়, গত ২৩ অক্টোবর এক সার্কুলারে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ঋণ পুনঃতফসিলের বিশেষ নীতিমালার আওতায় নতুন করে আর কোন আবেদন নিতে পারবে না ব্যাংকগুলো। ওই নীতিমালায় বেঁধে দেওয়া ৯০ দিনের সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে নতুন আবেদন গ্রহণ বন্ধ থাকলেও এ পর্যন্ত জমা হওয়া আবেদনগুলো নিস্পত্তির বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে বলেও সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়। ওই সার্কুলারের নির্দেশ অনুযায়ী ১৯ নভেম্বরের মধ্যেই বিশেষ নীতিমালার আওতায় জমা পড়া সব আবেদন ব্যাংকগুলোকে নিস্পত্তি করতে হতো। এছাড়া আবেদন নিস্পত্তিকালিন সময়ে নীতিমালার আওতায় পুনঃতফসিল সুবিধা নেওয়া ঋণগ্রহীতাদের নতুন করে ঋণ না দিতেও নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু ৩ নভেম্বর বিগত ২০ বছরে ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা তদন্তে কমিশন গঠন ও ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ১০ বছরের ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধা প্রদান সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন বাতিল বিষয়ে জারি করা রুলের রায়ে ঋণখেলাপিদের এ সংক্রান্ত সুবিধা বাংলাদেশ ব্যাংক চাইলে আরও ৯০ দিন বাড়াতে পারে বলে রায় দেন আদালত। রোববার (১৭ নভেম্বর) আদালতের ওই রায় স্পষ্টীকরণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলার জারি করলো। এতে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোট ডিভিশন থেকে ৩ নভেম্বর প্রদত্ত রায়ের আলোকে ঋণগ্রহীতা থেকে আবেদন করায় সময়সীমা আরও ৯০ দিন বৃদ্ধি করা হলো। সার্কুলার জারির দিন থেকে তা গণনা শুরু হবে।
সার্কুলারে অনুযায়ী, ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালিন এক্সিট সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালার আওতায় পুনঃতফসিল সুবিধাপ্রাপ্তদের পরবর্তীতে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে নতুন ঋণ প্রদান করা যাবে। তবে এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে ঋণ পুনঃতফসিল নিয়ে ২০১২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বরের মাস্টার সার্কুলারের ৬(এ) ও ৬(বি) তে বর্নিত নির্দেশনা পরিপালন করতে হবে। ওই সার্কুলারের ৬(এ) তে বলা আছে, পুনঃতফসিল সুবিধাপ্রাপ্তদের নতুন ঋণ সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের মোট বকেয়ার ১৫ শতাংশ ডাউনপেমেন্ট জমা দিতে হবে। তবে রফতানিকারদের ক্ষেত্রে তা হবে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
এছাড়াও সার্কুলারে টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস শিল্পের ঋণগ্রহীতাদের বিশেষ নীরিক্ষা ছাড়াই ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালিন এক্সিট সংক্রান্ত নীতিমালার সুবিধা প্রদান করা যাবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
সূত্র মতে, গত ১৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ পুনঃতফসিল ও এককাীল এক্সিট সংক্রান্ত ওই বিশেষ নীতিমালা জারি করে। এতে বলা হয়, ঋণখেলাপিরা মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়েই ঋণ পুনঃতফসিল করতে পারবেন। পুনঃতফসিল হওয়া ঋণ পরিশোধে তারা সময় পাবেন টানা ১০ বছর। এ ক্ষেত্রে প্রথম এক বছর কোনো কিস্তি দিতে হবে না। এ বিষয়ে সার্কুলার জারির পরই তা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের একজন আইনজীবি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন