শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী প্রসঙ্গ

নাজীর আহ্মদ জীবন | প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
এই পরিপ্রেক্ষিতেই হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন; “ইন্নামাল উলামও ওয়া রাসাতুল আম্বিয়া” অর্থাৎ নবীর উত্তরাধিকারী তারাই যারা “ইলম” চর্চা করে”। “ইলম” অর্থ জ্ঞান। দুঃখ জনক হল, আমাদের আলেম সমাজ এটাকে কেবল ধর্মীয় শরিয়তি জ্ঞানের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন। তাই; ইনাদের মধ্যে থেকে কোন বৈজ্ঞানিক, দার্শনিক সৃষ্টি হয় নাই। কিন্তু ইসলামের প্রাথমিক যুগে মুসলমানরা তা মনে করতেন না। তাই, জ্ঞানের প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা বিচরণ করেছিলেন এবং বিশ্বকে জ্ঞান ও বিজ্ঞানে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

রাসূল (সাঃ) হলেন “আলোকময়”। তাঁর জন্ম মৃত্যু আমাদের মত নয়; তা ছিল এক “প্রতিসরণ” (জবভৎধপঃরড়হ)। তাই, বিজ্ঞান ও দর্শন সম্মত হ’ল তিনি আলোর জগৎ (নূর) হতে ১২ তারিখে মাটির জগতে এসেছিলেন আবার দুনিয়াবি দায়িত্ব সুসম্মন্ন করে ১২ তারিখেই তাঁর মূল আলোর জগতে ফিরে গেছেন। আমরা মাটির তৈরী, মাটিতেই ফিরে যাচ্ছি। এটা যদি আমাদের ক্ষেত্রে হয়, তবে তাঁর জন্য তাঁর অবস্থা হবে না কেন? উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, হাদীস শরীফে বলা হয়েছে; ১০ই মহরম দুনিয়া সৃষ্টি, ১০ ই মহরম দুনিয়া ধ্বংস হবে। আর আদম (আঃ) শুক্রবারে সৃষ্টি; শুক্রবারে দুনিয়াতে প্রেরণ; শুক্রবারেই ইন্তেকাল। রাসূল (সাঃ) এর জীবনে ও পবিত্র সোমবার, ও চাঁদের ১২ তারিখ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তিনি তাঁর দুয়িাবী বহু কাজে এর স্বাক্ষর রেখে গেছেন। এ নিয়ে প্রচার করেন নাই। কারণ ১২ শরীফ ছিল মারেফাত এর একদম ভিতরের বিষয়। যেমন ঃ ১২ ই রবিউল আউয়াল সোমবার প্রথম ওহী প্রাপ্তি; ১২-ই রবিউল আউয়াল মদীনা শহরে পৌঁছান; ১২ ই-রমযান বদর যুদ্ধে রওনা হন; ১২ই যিল হাজ্ব রাত্রিতে আকাবায় ৭২ জনকে প্রথম বায়আত; ১২ জনকে নকীব বা প্রতিনিধি মনোনীত করন; ইত্যাদি
- ৩ -

চিন্তাশীল ও জ্ঞানীদের চিন্তা ও জ্ঞানের খোরাক কোরান ও হাদীস। এগুলো গভীরভাবে চিন্তা করলে আমার বলতে পারি তাঁর জন্মদিনের সাথে ওফাতের দিন সোমবারের যেমন মিল রয়েছে একই ভাবে ১২ তারিখেরও মিল আছে। এটাই দর্শন ও বিজ্ঞান সম্মত হাদীস। রাসূল (সাঃ) এর জন্ম তারিখ নিয়ে যে মতভেদ তার সুন্দর সমাধান হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ যেদিন ‘১২ শরীফ” এর পরিপূর্ণ প্রকাশ ঘটবে। মানুষ তখন এটাকে “ঈদ” এর দিন হিসাবে উদযাপন করবে। “ঈদ” অর্থ আনন্দ বা খুশী। এখানে আনন্দ অর্থ আল্লাহতায়ালা হতে বান্দাদের জন্য রহমত বা অনুগ্রহ প্রাপ্তিতে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য নফল নামায; দরুদ ও সালাম পাঠ; দান খয়রাত, কোরবানী ও জীবনী আলোচনা করা ইত্যাদি। এ আনন্দ ব্যক্তিগত হতে পারে, হতে পারে বিশেষ জাতি ও গোষ্ঠির জন্য। যেমন ঃ বিবাহ ও নব সন্তানের জন্ম, এগুলো ব্যক্তিগত। আবার ঈদুল ফিত্র; ঈদুল আয্হা জাতিগত। আর ঈদে মিল্লাদুন্নবী হলো মানব জাতি ও সমগ্র সৃষ্টির জন্য।

আব্দুল হক মোহাদ্দেস দেহলভী (রঃ) তার বিখ্যাত গ্রন্থ মাদারেজুন নবূয়ত-এ বলেছেন; “এ পাল্লায় দুই ঈদকে; অপর পাল্লায় ঈদে মিলাদুন্নবীকে ওজন করলে “ঈদে মিলাদুন্নবীর” পাল্লায় ভারী হবে।” মাওলানা আযাদ, রাসূল (সাঃ) এর জন্ম দিনকে মুসলিম জাহানের জাতীয় উৎসব বলেছেন। আল্লাহ বলেন, “ওয়া আম্মা বিনিমতি রাব্বিকা ফাহাদ্দিছ”Ñঅর্থাৎ তোমার প্রভুর অনুগ্রহের কথা বর্ণনা কর। এবং প্রচার কর।” বস্তুতঃ রাসূল (সাঃ) ই হলেন আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত বা অনুগ্রহ। (বোখারী শরীফ ২য় খন্ড ৫৬৯ পৃঃ)

জ্ঞান পেয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর প্রথম পরিচালক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক; ড. মঈনউদ্দীন আহ্মদ খান বলেছেন, “ঈদুল ফিত্র ও ঈদুল আযহা প্রবর্তন করেছেন নবী (সাঃ); আর ঈদে মিলাদুন্নবীর প্রবর্তক স্বয়ং আল্লাহ পাক।”

রাসূল (সাঃ) দুনিয়াতে থাকা কালে মানুষকে শান্তি ও মুক্তির রহমত দান করে গেছেন। দুনিয়া হতে যাবার পরও তা বন্ধ হবার নয়। তাঁর মাধ্যমে রোজ কেয়ামত পর্যন্ত এ রহমত বহমান থাকবে ইনশাল্লাহ। তাই এ ঈদ “সমগ্র সৃষ্টির ঈদ”। এ “ঈদ” উত্তরোত্তর জৌলুসের সাথে সারা বিশ্বে এক সময় উদযাপিত হবে। কারন; এটাই সময়ের আহ্বান, মহাকালের অপ্রতিরোধ্য ধারা।

আল্লাহ আমাদেরকে এ বিষয় উপলব্ধির জ্ঞানশক্তি দিন। আমার যেন; হুজুর মোহাম্মদ (সাঃ) কে ভালবেসে এ ঈদ কে “মুক্তির ঈদ আমাদের নবীর ঈদ শ্রেষ্ঠ ঈদ” হিসাবে উদযাপন করে সাড়া বিশ্বে ‘মোহাম্মদী” প্রচার করতে পারি। সেই সুন্দর দিনের অপেক্ষায় রইলাম। আমনী-সুম্মা-আমীন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন