শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রাজপথে ‘অনুমতি’ বিতর্ক

আওয়ামী লীগ বনাম বিএনপি

স্টালিন সরকার | প্রকাশের সময় : ২৬ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম | আপডেট : ৭:২৮ পিএম, ২৬ নভেম্বর, ২০১৯

বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির আন্দোলন প্রশ্নে চাপের মুখে পড়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। দলটির মধ্যসারি ও তৃণমূলের নেতাদের বক্তব্য সিনিয়র নেতাদের ‘সুবিধাবাদী’ মানসিকতার কারণে বেগম জিয়ার মতো জনপ্রিয় নেত্রীকে পৌঁনে দুই বছর ধরে কারাগারে থাকতে হচ্ছে। দলীয় নেতাদের চাপের মুখেই ২৪ নভেম্বর সমাবেশে বিএনপির নেতারা বলেছেন, সমাবেশের জন্য আর প্রশাসনের অনুমতির অপেক্ষা করা হবে না। মিটিং-মিছিল করা গণতান্ত্রিক অধিকার।

বিএনপির নেতাদের এই বক্তব্যের পাল্টা জবাব দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, সরকারের অনুমতি ছাড়া রাজপথে সভা-সমাবেশ করার সক্ষমতা বিএনপির নেই। প্রথম প্রশ্ন বিএনপির নেতারা আসলেই কি বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজপথে নামছেন? দ্বিতীয় প্রশ্ন সত্যিই কি প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া বিএনপির সভা-সমাবেশ করার সক্ষমতা নেই? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, বøগ, টুইটারে এ নিয়ে চলছে বিতর্ক। এই বিতর্কে নানা জন নানান মতামত দিচ্ছেন। বেশির মানুষই সরকারের অনুমতির উপর ‘নির্ভরশীলতা’ বিএনপি নেতাদের নেতৃত্বের ব্যর্থতাকে দায়ী করছেন। কেউ কেউ অবশ্য সরকারের ‘নিষ্ঠুর জুলুম’কে এ জন্য দায়ী করছেন। ১৩ বছর ধরে বিএনপি ক্ষমতার বাইরে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে বিএনপির ক্রমান্বয়ে শক্তিহীন হয়ে পড়ে। ২০১৪ সালের এক দলীয় বিতর্কিত নির্বাচনের পরের বছর ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার লাগাতার অবরোধ হরতালে টানা ৯০ দিন দেশ কার্যত অচল ছিল। পরবর্তীতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার অজুহাতে সরকার রাজপথে মিটিং ও সমাবেশের জন্য প্রশাসনের অনুমতি নেয়ার নিয়ম চালু করে।

এরপর থেকে বিএনপি কার্যত সভা-সমাবেশের ক্ষেত্রে পুলিশ বাহিনীর অনুমতির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। গত সাড়ে ৫ বছরে বিএনপি কমপক্ষে অর্ধশত সমাবেশের তারিখ ঘোষণা করে পুলিশের অনুমতি না পাওয়ায় পরবর্তীতে তা বাতিল করতে হয়েছে। কয়েকটি সমাবেশ করতে দেয়া হয়েছে মিটিং শুরুর তিন থেকে ৬ ঘণ্টা আগে। সে সব অনুমতিতেও ১০ থেকে ৩০টি শর্ত দেয়া হয়।

এমনকি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণায় বিএনপির খুব কমই সভা সমাবেশ করার সুযোগ পান। অবশ্য এ জন্য বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতাকার্মীরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে দায়ী করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নেতা বলেন, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দুই দফায় সংলাপ এবং কোনো শর্ত মেনে না নেয়ার পরও নির্বাচনে অংশগ্রহণ, নির্বাচনকালীন সময়ে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের প্রচারণায় নামতে না দেয়া এমনকি নির্বাচনের আগের রাতে ভোট করার পর নির্বাচনে দিন ভোট বর্জন না করে ‘শেষ পর্যন্ত দেখার’ ঘোষণা দেয়া সবগুলো ছিল বিএনপির রাজনৈতিক ব্যর্থতা।

তারা প্রশ্নের সুরে বলেন, ড. কামাল হোসেন দেশের রাজনীতি দেখেন বঙ্গবন্ধুর চশমায়। বঙ্গুবন্ধুর চশমায় কি জিয়ার আদর্শের দলের নেতৃত্ব চলে? অবশ্য পরবর্তীতে ঐক্যফ্রন্ট প্রসঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ও ২০ দলীয় জোটের শরীক এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ জ্বালাময়ি বক্তৃতা দিয়েছেন।

বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে ‘অনুমতি না নিয়ে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়ে’ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান সরকার আমাদের ভোট ও কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এই সমাবেশের কয়েক ঘণ্টা আগে বলা হয় আপনারা সমাবেশ করতে পারবেন! কিন্তু এরপর আমরা আর কোনো অনুমতি নেবো না। আমাদের সমাবেশ যখন প্রয়োজন তখন আমরা করব। আমরা রাজপথে নামব। এটা আমাদের অধিকার। কারো অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন বোধ করব না।

বিএনপি মহাসচিবের এই বক্তব্যের জবাবে গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, অনুমতি না নিয়ে সভা-সমাবেশ করার সাহস, শক্তি বা সক্ষমতা কোনোটিই বিএনপির নেই। অনুমতি না নিয়ে বিএনপির সভা-সমাবেশ করার ঘোষণা হাস্যকর। আমরা যখন বিরোধী দলে ছিলাম, তখন আমরাও অনুমতি না নিয়ে সভা-সমাবেশ করতে পারিনি। আমাদের সময় এমনও হয়েছে, আগের দিন রাতে আমরা সভার অনুমতি পেয়েছি।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি বেগম জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে ৫০০ কর্মী নিয়ে একটি মিছিল-মিটিং করতে পারেনি। তারা কীভাবে অনুমতি না নিয়ে সভা-সমাবেশ করবে? বিষয়টি হাস্যকর ছাড়া কিছুই নয়।
এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, রাস্তায় নেমে আন্দোলন করলে খালেদা জিয়া এতদিন কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে যেতেন। দেশের জনগণ যা কিছু পেয়েছে, আন্দোলন করেই পেয়েছে, আদালতের রায়ে পায়নি। দেশ স্বাধীন করা হয়েছে, সেটাও আন্দোলনের মাধ্যমে, যুদ্ধের মাধ্যমে হয়েছে, আদালতের রায়ে হয়নি। নেত্রীকে মুক্ত করতে হলে আন্দোলন করেই করতে হবে। আদালতের রায়ে হবে না। এখন থেকে সভা-সমাবেশ করার জন্য প্রশাসনের অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন নেই। সভা-সমাবেশ আমাদের সাংগঠনিক অধিকার। আমরা সভা-সমাবেশ করব, অন্যায়ের প্রতিবাদ করব।

বিএনপির অধিকাংশ নেতা গয়েশ্বর চন্দ্রের মতের সঙ্গে একমত। এ কারণে হয়তো বিএনপি সুবিধাবাদী নেতাদের উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে ‘আমরা ঈমানদার না বেঈমান আন্দোলনে প্রমাণ হবে’। ‘বেগম জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে’ বিএনপির সিনিয়র নেতা, সাবেক মন্ত্রী, সাবেক এমপি, বর্তমান এমপিদের প্রমাণ দেয়া তারা বেঈমান না ঈমানদার।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ‘অনুমতি না নিয়ে সমাবেশ করার ঘোষণা’ এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ‘অনুমতি ছাড়া সভা করার সক্ষমতা বিএনপির নেই’ মন্তব্যে নানান কথাবার্তা বলছেন। কার কথা সঠিক তা দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে দেশের মানুষ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (17)
Mahabubul Islam Chowdhury ২৬ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৪৯ এএম says : 0
যেইদিন পুলিশ বলবে আমরা নাই কাদের বলবে আমিও নাই
Total Reply(1)
oti_shadharon ২৬ নভেম্বর, ২০১৯, ৯:৩৮ এএম says : 4
একদম খাঁটি কথা। পুলিশ, র্যাব ইত্যাদি যদি প্রকৃতই নিরপেক্ষ হয় তাহলে জনসাধারণকে রাজপথে প্রতিবাদ করতে বাধা দেবে না। আর এরা বাধা না দিলে কাদের সাহেব তার সাঙ্গপাঙ্গসহ জনস্রোতে ভেসে গিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়বেন।
Ahmed Moha ২৬ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৪৯ এএম says : 0
Songbidane gonotontre kothaw aunomodon ayeen nai ..
Total Reply(0)
সত্য বলবো ২৬ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫১ এএম says : 0
৩০ তারিখের নির্বাচনে কি হয়েছিল তা সকল বিচারকরা লজ্জাজনকভাবে মুখ বুঁজে দেখেছে। কিসের আবার অনুমতি??
Total Reply(0)
S M Zakir Hossain ২৬ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫১ এএম says : 0
সমাবেশ যে কোন দলের রাজনৈতিক অধিকার।
Total Reply(0)
Mahbubur Rahman ২৬ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫১ এএম says : 0
মর্দা কথা! অধিকার কেউ এমনি দেয়না আদায় করে নিতে হয়। জনগন এখন চিড়ে চ্যাপ্টা মুক্তি চায়। সমর্থন, সমর্থন এবং সমর্থন...
Total Reply(0)
তরুন সাকা চৌধুরী ২৬ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫১ এএম says : 0
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সরকারের অনুমতি নিয়ে কখনো আন্দোলন হয় না। এত দিন পরে বুঝলেন?
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম চঞ্চল ২৬ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫২ এএম says : 0
রাজনীতি বুঝি না। রাজনীতি করি না। তবে স্বাধীন বাংলাদেশে যেন সবাই মুক্তভাবে বসবাস করতে পারে সেটাই আমাদের কাম্য।
Total Reply(0)
shamimuddin ২৬ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫৩ এএম says : 0
সরকারের অনুমতি নিয়ে কখনো আন্দোলন হয় না। এখন থেকে সভা-সমাবেশ করার জন্য প্রশাসনের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই। এই রাজপথ সরকারকে ইজরা দেওয়া হয়নি। রাজপথ জনগণের।সমাবেশ যে কোন দলের রাজনৈতিক অধিকার
Total Reply(0)
কাজী হাফিজ ২৬ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫৩ এএম says : 0
Opposition forces must be alive. It is a fundamental requirement for a democratic country. Unfortunately it seems opposition forces are almost non existent in Bangladesh now - both due it their own prior damaging policies and also too oppressive ruling government
Total Reply(0)
nur alam ২৬ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫৩ এএম says : 0
কেউ নিজের পায়ে কুড়াল মারতে চায় না । খালেদা জিয়াকে ছেড়ে দিয়ে সরকার কি বিপদ ডেকে আনবে না কি ?
Total Reply(0)
কে এম শাকীর ২৬ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:৫৩ এএম says : 0
অনুমতি হচ্ছে সবচেয়ে হাস্যকর জিনিস। সরকারের কাছে বিরোধী দলের অনুমতি চাওয়া হচ্ছে হাস্যকর। আর অনুমতি দেওয়া হচ্ছে আরও হাস্যকর। তাও আবার পুলিশের কাছে, যারা সরকারের গোলাম।
Total Reply(0)
Miah Muhammad Adel ২৬ নভেম্বর, ২০১৯, ৩:৩৩ এএম says : 0
You put BNP under fetters and then ask them to show muscle power. Strangest are you words!
Total Reply(0)
* মজলুম জনতা * ২৬ নভেম্বর, ২০১৯, ৮:৩৬ এএম says : 0
আমি বলি,আলোচনার মাধ্যে সমাস্যার সমাধান সম্ভব।
Total Reply(0)
oti_shadharon ২৬ নভেম্বর, ২০১৯, ১০:৩০ এএম says : 0
প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে সভা কিংবা মেলা করার বিধান উন্নত দেশগুলোতেও রয়েছে; কিন্তু প্রশাসন সেটা বিরোধী দলগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেনা। প্রশাসনের কাছে অনুমতির আবেদন করার মূল উদ্দেশ্য হলো যেসব রাস্তা সভা কিংবা মেলার জন্য ব্যবহার হবে, সেসব রাস্তার নিকটবর্তী অন্যান্য পথ দিয়ে জনসাধারণের চলাচলের জন্য প্রশাসনকে সময়মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবার সুযোগ দেয়া ( যেমন, সাইন বসানো, ট্রাফিক কন্ট্রোল ইত্যাদি)। বেশ কয়েক বছর আগে আমি একবার আমেরিকার এক শহরে জুম্মার নামাজে অংশগ্রহণ করেছিলাম। ওই নামাজে ওই শহরের এক মুসলিম পুলিশ কর্মকর্তাও ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় নামাজ আদায় করেন। নামাজের পর উনি ইমাম সাহেবের অনুমতি নিয়ে মুসল্লিদের জানালেন যে, পরদিন (অর্থাৎ শনিবারে) ওই শহরের কেন্দ্রস্থলে একটি স্কোয়ারে জনসাধারণের একটি বিক্ষোভ হবে, মুসল্লিদের কেউ সেখানে যেতে চাইলে যেতে পারেন। আমি মার্কিন নই, আর এরকম ঘোষণা শোনার অভিজ্ঞতাও আমার ছিলোনা। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, আমেরিকাতে একজন পুলিশ কর্মকর্তার এধরণের বক্তব্য মোটেও বেআইনি নয়। এবার বুঝুন বাংলাদেশের স্থান কোথায়।
Total Reply(0)
Md. Abdur Razzak ২৬ নভেম্বর, ২০১৯, ১০:৩৩ এএম says : 0
যাদের বিরুদ্ধে কথা বলবে তাদের কাছে অনুমুতি কি হাস্যকর !
Total Reply(0)
Humayun kabir ২৬ নভেম্বর, ২০১৯, ১১:৪৫ এএম says : 0
This government very bad
Total Reply(0)
ahammad ২৬ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:২৮ পিএম says : 0
আরে ভাই আপনি চান্দের দেশের মানুষ নাকি ?? সরকার যে অবৈধ সেটা তারা নিজেরাও জানে। প্রশাসনের জোরেই তারা টিকে আছে। বিরোধীদলকে যএতএ সমাবেশ করার অনুমতি দিয়ে তারা নিজেরাই নিজেদের পায়ে কুঠাল মারবে নাকি ????
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন