শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

ঈদে মিলাদুন্নবী (সা:) ও আমরা

গাজী মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জাবির | প্রকাশের সময় : ২৮ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

বছর ঘুরে আমাদের মাঝে এসেছে মানব জাতির চরম ও পরম আদর্শ, আল্লাহর প্রেরিত সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আবির্ভাবের মাস মাহে রবিউল আউয়াল।

“রবি“ আরবি শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে বসন্ত, সঞ্জীবনী ও সবুজের সমারোহ। রবিউল আউয়াল অর্থাৎ প্রথম সঞ্জীবনী মাস। এ নামকরণের তাৎপর্য হচ্ছে, মক্কার কাফির ও কোরাইশদের অনাবৃষ্টি ও খাদ্যের অভাবের কারণে কঠিন বিপদের মধ্য দিয়ে দিন কাটছিলো। রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে বছর মা আমিনার কোলে আগমন করলেন, সে বছর মক্কার শুষ্ক জমি সঞ্জীবিত হয়ে উঠলো এবং শুষ্ক বৃক্ষ তরতাজা হলো আর চতুর্দিকে আনন্দের জোয়ার বয়ে যেতে লাগলো। ১২ রবিউল আউয়াল পবিত্র ঈদে-মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। ঈদে মিলাদুন্নবী একটি ঐতিহাসিক স্বরণীয় দিন। রাসূলে পাক (সাঃ) ধূলির ধরায় আবিভর্‚ত হয়েছিলেন বিধায় ঈদে মিলাদুন্নবী প্রতিটি মুসলিমের নিকট অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ। আমাদের মুসলিম বিশ্ব প্রতি বছর আজকের দিনটিকে একটি পবিত্র দিন হিসেবে পালন করে আসছে। চৌদ্দশ’ বছর আগে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন এক যুগসন্ধিক্ষণে আবির্র্ভূত হন, যখন সমগ্র পৃৃৃথিবী অন্ধকারের অতল সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছিলো। মানব সভ্যতার লেশমাত্রও অবশিষ্ট ছিলো না এবং ন্যায়বিচার বলতে কিছুই ছিলো না, বরং হিংসা-বিদ্বেষ, যুদ্ধ- সংঘাত, অত্যাচার-অনাচার, অপকর্ম ও পাপাচারে মানুষ লিপ্ত ছিলো। কোথাও ছিলো না শান্তি, ছিলো না কোথাও স্বস্তি। চলছিলো মানুষে মানুষে হানাহানি, কাটাকাটি, দুর্বলরা শক্তিধরদের অত্যাচার ও নির্যাতনে জর্জরিত হচ্ছিলো। ধর্মের নামে সর্বত্র বিরাজ করছিলো শিরক, কুফর আর ধর্মহীনতা। নারী সমাজ পরিণত হচ্ছিলো পণ্য সামগ্রীতে। তাদের ব্যবহার করা হতো আসবাবপত্রের মতো। তাদের ছিলো না কোনো অধিকার, ছিলো না কোনো মর্র্যাদা। মানবিক মূল্যবোধ বলতে কোথাও কিছু ছিলো না। অরাজকতাপূর্ণ এক অস্থির পৃথিবীতে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার সুবহে সাদিকের সময় সমস্ত বিশ^জগৎ আলোকোজ্জ্বল করে আগমন করেছিলেন পবিত্র কোরআনের ধারক ও বাহক, বিশ^ জাহানের মুক্তির দিশারি, সাইয়্যিদুল মুরসালিন, রাহমাতুল্লিল আলামিন, খাতামুন নাবিয়্যিন, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাঁর আগমনে কবি বলেছেনÑ

রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর আগমনে ধন্য হয়েছিলো সমগ্র মাখলুকাত, মুখ থুবড়ে পড়েছিলো দীর্ঘকালের যাবতীয় অন্ধকার এবং বিকশিত হয়েছিলো সত্য সুন্দর হেদায়াতের সমুজ্জ্বল রশ্মি। যাঁর সান্নিধ্য ও সংস্পর্শ লাভের আশায় কুল-মাখলুকাত ছিলো উদ্বেল। তিনি আগমন করেছিলেন বিশ^বাসীর জন্য আল্লাহ পাকের অনন্ত অসীম রাহমাতের জীবন্ত প্রতীক হয়ে এবং বহন করে এনেছেন বিশ^ মানবের চিরশান্তি ও চির নাজাতের পয়গাম। তাঁরই উছিলায় সৃষ্টি হয়েছে মানব-দানব, জ¦ীন-ফেরেশতা, আকাশ-বাতাস, গ্রহ-নক্ষত্র, গাছপালা, পাহাড়-পর্বত, জীবজন্তু, আরশ কুরসি, লওহ কলম বলতে গেলে সমুদয় সৃষ্টি জগৎ।

১৪শ’ বছর আগে রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আজকের এ দিনে আগমন করার কারনে এ দিনটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আশেকানদের মনকে উতাল-পাতাল করে তোলে এক অনাবিল আনন্দের জোয়ার। চারিদিকে ধ্বনিত হয় রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর সম্মানে সালাত ও সালাম। আর মুসলিম সমাজকে আলোড়িত করে তুলে। তাঁর আগমন থেকে বিদায় পর্যন্ত তেষট্রিটি বছর হায়াতের ওপর আলোচনা সভা,মিলাদ মাহফিল, সেমিনার সিম্পোজিয়াম ইত্যাদি। আজকের এ দিনটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শুভাগমনের জন্যই শুধুমাত্র মুসলিম জাতির ইতিহাসে সমুজ্জ্বল নয়, বরং দু’জাহানের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আজকের এ দিনে রেসালাতের গুরু দায়িত্ব সুসম্পন্ন করে পৃৃথিবীবাসীকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে নশ^র পৃৃথিবী থেকে অবিনশ^র জগতে আল্লাহপাকের সান্নিধ্যে ফিরে গিয়েছিলেন। আকাশে-বাতাসে নেমে এসেছিলো এক ভাবগম্ভীর পরিবেশ। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রভুর দরবারে চলে গিয়েছেন এবং তাঁর উম্মতের জন্য রেখে গিয়েছিলেন মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, তাঁর সুন্নাত এবং জীবনাদর্শ। যে আদর্শের মাধ্যমে তিনি পৃথিবীবাসীকে উপহার দিয়েছিলেন একটি সুখী- সমৃদ্ধিশালী শোষণমুক্ত শান্তিময় সমাজ। যে সমাজে তিনি মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন অপার এক ভ্রাতৃত্ববোধ। নিশ্চিত করেছিলেন সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা। এ মহান স্মৃতিবিজড়িত মাহে রবিউল আউয়ালকে শুধুমাত্র সভা, সমাবেশ,সেমিনার সিস্পোজিয়ামের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে নবীজির আদর্শ অনুকরণ ও অনুসরণের একটি প্রেরণার উৎসে পরিণত করতে হবে। সারাবিশে^ অনৈক্যের দোদুল্যমান মুসলিম জাতিকে ঐক্যের মজবুত প্লাটফর্মে জড়ো করার দীপ্ত শপথ গ্রহণের মাসই হলো এ “রবিউল আউয়াল”। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মহিমাময় জীবনাদর্শ আমাদের ব্যক্তি জীবনের অনুকরণ- অনুসরণ এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে তার প্রতিফলনের মাধ্যমে এ পবিত্র রবিউল আউয়াল মাসের হক আদায় করতে হবে। কারণ, নবীজি (সাঃ) আমাদের জন্য রেখে গেছেন সর্বোচ্চ আদর্শ। যা গ্রহণে আমাদের জীবন হবে আলোকিত ও সুন্দর।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন