‘শান্তি, অগ্রগতি ও উন্নতি’- এই স্লোগানে বর্ণিল উদ্বোধন হলো সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসের ১৩তম আসরের। গতকাল সন্ধ্যায় নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে জমকালো আয়োজনে এবারের গেমসের উদ্বোধন করেন নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী বান্দারী। আর নেপালের অলিম্পিয়ান ও তায়কোয়ানডোতে চারবারের এসএ গেমস স্বর্ণ জয়ী দীপক বিষ্টা মশাল প্রজ্জ্বলন করেন। এর মধ্য দিয়েই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হল এবারের এসএ গেমস। এই মশাল জ¦লবে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার ৭টি দেশের ৩২৫০ জন অ্যাথলেট ২৭টি ডিসিপ্লিনে ১১১৩টি পদকের জন্য লড়বেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নাচ, গান ও গগনবিদারী শব্দে আতশবাজির ফুলঝুড়ি থাকলেও কিসের যেন অপ‚র্ণতা। সব গেমসেই সংশ্লিষ্ট দেশের জাতীয় পতাকা বহন করেন ওই দেশের একজন তারকা ক্রীড়াবিদ। কিন্তু ব্যত্যয় ঘটলো নেপালে। কেবলমাত্র আয়োজক দেশ ছাড়া আর কোন দেশেরই কেউ স্টান্ডসহ জাতীয় পতাকা বহন করতে পারেননি মার্চপাস্টে। নেপাল ছাড়া বাকি ছয় দেশের ক্রীড়াবিদদের হাতে ছিল ছোট্ট আয়তনের জাতীয় পতাকা। যা নেড়ে স্টেডিয়ামে উপস্থিত প্রায় ১৫ হাজার দর্শকের হাততালি ও প্রশংসা কুড়িয়েছেন তারা। বিষয়টি বাংলাদেশ কন্টিনজেন্টের সেফ দ্য মিশন আসাদুজ্জামান কোহিনুর নজরে আনলে তিনি বলেন, ‘আমরা আগে থেকে কিছুই জানতাম না। তাই দেশের পতাকা বহন করার জন্য গৌহাটি-শিলং এসএ গেমসে দুই স্বর্ণজয়ী সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শিলাকে এনেছিলাম কাঠমান্ডুতে। কিন্তু কোটি রুপী খরচের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমাদের চাওয়াটা অপ‚র্ণই থেকে গেল।’
এবার নিয়ে তৃতীয়বারের মতো এসএ গেমস আয়োজন করেছে নেপাল। এর ১৯৮৪ ও ’৯৯ সালে তারা দু’বার আয়োজন করেছিল দক্ষিণ এশিযার অলিম্পিক খ্যাত এসএ গেমসের। তবে তাদের এবারের আয়োজন আগের দুই আসরকেও ছাপিয়ে যেতে চাইছে। তাইতো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিল মুগ্ধতা। স্থানীয় সময় ঘড়ির কাঁটা ঠিক পাঁচটা ছুই ছুই। দশরথ স্টেডিয়াম প্রবেশ করলেন নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী বান্দারী। মুহুর্তেই স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকদের নজর কেড়ে নেন তিনি। আতশবাজির রোশনায় আলোকিত হয়ে উঠে স্টেডিয়াম। গ্যালারিতে বসা দর্শকদের মোবাইলের আলো জ¦লে উঠল। ঠিক যেন জোনাকির আলোর মতো। আলোয় ঝলমলে গোটা স্টেডিয়ামকে তখন মায়াবি দেখাচ্ছিল। অনুষ্ঠানে এদ্বাধনী ভাষন দেন নেপাল অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট জীবন রাম শ্রেষ্ঠা। আর এসএ গেমসের নানা দিক তুলে ধরেন ন্যাশনাল স্পোর্টস কাউন্সিলের সদস্য সচিব রমেশ কুমার সিলওয়াল।
এরপরই বেজে উঠে নেপালের জাতীয় সঙ্গীত। এই সঙ্গীত শেষ হলে শুরু হয় সাত দেশের ক্রীড়াবিদ ও কর্মকর্তাদের অংশগ্রহনে মার্চপাস্ট। সবার সামনে মাসকট ও লোগো হাতে স্থানীয় একদল রমনী। তাদের পিছনে সাত দেশের পতাকা ও নেপাল অলিম্পিক কমিটির লোগো হাতে ছিল পতাকাবাহী এক দল। মার্চপাস্টে প্রথমেই আসে বাংলাদেশ কন্টিনজেন্ট। দলকে নেতৃত্ব দেন তিন বছর আগে ভারতের শিলং ও গৌহাটিতে অনুষ্ঠিত এস এ গেমসে স্বর্নজয়ী সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শিলা। তার পিছনে ছিলেন এসএ গেমসে বাংলাদেশ দলের সেফ দ্য মিশন আসাদুজ্জামান কোহিনুর ও বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) কর্মকর্তারা। শ্যুটিং, ক্রিকেট, ফুটবল, সাঁতারসহ কাঠমান্ডুতে যেসব ডিসিপ্লিনে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ, তার অধিকাংশ ক্রীড়াবিদরাই উপস্থিত ছিলেন মার্চপাস্টে।
মার্চপাস্ট শেষে ক্রীড়াবিদদের পক্ষ থেকে শপথ বাক্য পাঠ করেন নেপালের তারকা ক্রিকেটার পরেশ খড়কা এবং কোচদের পক্ষ থেকে রেফারি দীপক থাপা। চার অলিম্পিয়ানের নিয়ে আসা মশাল দশরথ স্টেডিয়ামের বেদিতে জ¦ালিয়ে এসএ গেমসের আলো জ্বালেন চারবারের সোনাজয়ী সাবেক তায়কোয়ান্ডোকা দীপক বিস্টা। শেষ দিকে লেজার শো, কালারপুল ডিসপ্লে; সাড়ে তিন ঘন্টার জমকালো প্রোগ্রাম ছিল বাহবা পাওয়ার মতোই। আনুষ্ঠানিক যাত্রায় মিলল সম্প্রীতির বন্ধন। বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, মালদ্বীপ ও স্বাগতিক নেপালের প্রায় তিন হাজার অ্যাথলেটের সঙ্গে দেশগুলোর ডেলিগেটদের মিলনমেলায় মুখরিত ছিল কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামের সন্ধ্যা। ১২ মিনিট ধরে নেপালের সেনাবাহিনী, আর্মড পুলিশ ফোর্সেস ও নেপাল পুলিশের এক হাজার চৌকস সেনারা সাত দেশের নামের সঙ্গে মাঠেই সংশ্লিষ্ট দেশের মানচিত্র ফুটিয়ে তুলেন। যার নেপালী ভাষায় কেলিসথেনিকস বলা হয়। আদিবাসীদের মাধ্যমে নেপালের ঐতিহ্যগত নৃত্য থারু ডান্স, লামা ডান্স, নাগার ডান্স ও লাখে ডান্স ছিল দেখার মতো। পরিবেশন করেন আদিবাসীরাই। নেপালের সেরা গায়ক দীপক বাজরাচারিয়া একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন। সবশেষে ফের আতশবাজির আলোয় ঝলসে ওঠে দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়াম। সেই আলো হিমালয় দুহিতা পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে সম্প্রীতির সাত দেশে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন