নেপাল সাউথ এশিয়ান গেমসের সপ্তম দিনে বাংলাদেশকে পঞ্চম সোনা এনে দিলেন দেশসেরা নারী ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার সিমান্ত। তার সাফল্যের দিনই ভারোত্তোলক জিয়ারুল ইসলাম ও ফেন্সিংয়ের ফাতেমা মুজিব জিতলেন আরো দুই স্বর্ণ।
ইতিহাস গড়েই এসএ গেমসে সেরা হলেন মাবিয়া। গতকাল পোখরায় অনুষ্ঠিত নারী ভারোত্তোলনের ৭৬ কেজি ওজন শ্রেণীতে স্বর্ণপদক জিতে টানা দুই এসএ গেমসে বাংলাদেশের পক্ষে একক ইভেন্টে একমাত্র ক্রীড়াবিদ হিসেবে সাফল্য পেলেন তিনি। এর আগে লাল-সবুজের অন্য কোন ক্রীড়াবিদ একক ইভেন্টে টানা দুই এসএ গেমস থেকে স্বর্ণ জিততে পারেননি। কাল মাবিয়া ¯œ্যাচে ৮০ ও ক্লিন অ্যান্ড জার্কে ১০৫ কেজি সহ মোট ১৮৫ কেজি ভার তুলে শ্রীলঙ্কার প্রতিযোগিকে পেছনে ফেলে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেন। এই ইভেন্টে শ্রীলঙ্কার বিসি প্রিয়ান্তি ১৮৪ কেজি (স্ন্যাচে ৮৩ ও ক্লিন এ্যান্ড জার্কে ১০১ কেজি)) ভার তুলে রৌপ্য এবং স্বাগতিক নেপালের তারা দেবী পুন ১৭২ কেজি (স্ন্যাচে ৭৫ ও ক্লিন এ্যান্ড জার্কে ৯৭ কেজি) তুলে ব্রোঞ্জপদক জিতে নেন। এর আগে ২০১৬ গৌহাটি-শিলং এসএ গেমসে ৬৩ কেজি ওজন শ্রেনীতে স্ন্যাচ ও ক্লিন অ্যান্ড জার্ক মিলিয়ে ১৪৯ কেজি তুলে সোনা জিতেছিলেন মাবিয়া।
নেপাল এসএ গেমসে গেল ৩ ডিসেম্বর সর্বশেষ সোনা জিতে লাল-সবুজ পতাকা গায়ে জড়িয়েছিলেন কারাতেকা হুমায়রা আক্তার অন্তরা। তিন দিন স্বর্ণখরা ছিল বাংলাদেশ শিবিরে। অবশেষে সেই খরা কেটেছে সিমান্ত’র হাত ধরে। তিনি পোখারায় সোনা জিতে লাল-সবুজ শিবিরে যেন এনে দিলেন এক পশলা স্বস্তির বৃষ্টি। সেই বৃষ্টিতে ভিজে সিক্ত হলেন জিয়ারুল ও ফাতেমা, তুলে নিলেন সোনালী সাফল্য।
এসএ গেমসের ইতিহাসে বাংলাদেশের নারী ক্রীড়াবিদদের মধ্যে টানা দুই আসরে স্বর্ণ জিতেছিলেন শ্যুটার কাজী শাহানা পারভীন। ১৯৯১ সালে কলম্বো সাফ গেমসে বাংলাদেশের প্রথম নারী ক্রীড়াবিদ হিসেবে শ্যুটিংয়ে মেয়েদের ব্যক্তিগত স্ট্যান্ডার্ড রাইফেল ইভেন্টে স্বর্ণ জয় করেন শাহানা। পরের আসরেও সোনা জিতেছিলেন তিনি, তবে সেটি স্ট্যান্ডার্ড রাইফেল দলগত ইভেন্টে। এ ছাড়া সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শিলা ২০১৬ এসএ গেমসে এক আসরেই দুই স্বর্ণ জয়ের ইতিহাস গড়েছিলেন। দু’টিই ছিল ব্যক্তিগত ইভেন্ট থেকে। তবে এবার শিলা অনুপস্থিত থাকায় সুযোগ কাজে লাগিয়ে পর পর দুই আসরে সোনা জিতে ইতিহাস গড়লেন ভারোত্তোলক মাবিয়া।
এমন রেকর্ড গড়ে উচ্ছ¡সিত মাবিয়া বলেন, ‘আমার আত্মবিশ্বাস ছিল। কোচ ও ফেডারেশনের কর্মকর্তারা আমার প্রতি বিশ্বাস রেখেছেন। নিজের প্রতি আমার যা বিশ্বাস ছিল, তার চেয়ে বেশি বিশ্বাস আমার প্রতি ছিল ফেডারেশন ও কোচদের। এই পদক আমি তাদের উৎসর্গ করছি। তাদের আশা পূরণ করতে পেরেছি বলে খুব ভাল লাগছে। দেশের সবার প্রত্যাশা ছিল আমাকে নিয়ে। সেটা পূরণ করতে পেরেছি বলে দারুণ খুশি আমি।’ জানা গেছে, গৌহাটিতে ৬৩ কেজি ওজন শ্রেনীতে সোনা জেতা মাবিয়া এবার নেপালে আসার আগে ৬৪ কেজির জন্য নাম নিবন্ধন করিয়েছিলেন। কিন্তু ওই ইভেন্টে ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের ভারোত্তোলকরাও নিবন্ধন করেন। তাই ম্যানেজার্স মিটিংয়ে ৬৪ কেজি বদলে ৭৬ কেজিতে মাবিয়ার নাম নিবন্ধন করানো হয়। যেখানে অংশ নেয় তিন দেশ স্বাগতিক নেপাল, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা। এই তিন দেশের মধ্যে শ্রীলঙ্কান ভারোত্তোলকের সঙ্গে তীব্রপ্রতিদ্ব›িদ্বতার পর সোনা জয় করেন মাবিয়া।
মাবিয়ার ইতিহাস গড়া সোনা জয়ের দিন পোখরায় ভারোত্তোলনে পুরুষ বিভাগের ৯৬ কেজি ওজন শ্রেণীতে সেরা হয়ে দেশকে ষষ্ঠ স্বর্ণপদক উপহার দেন জিয়ারুল ইসলাম। তিনি হারান স্বাগতিক নেপালের বিশাল সিং বিস্টকে। জিয়া স্ন্যাচে তিন লিফটে তোলেন ১৩৫ কেজি। এরপর ক্লিন অ্যান্ড জার্কে তিন লিফটে ২৬২ কেজি তুলে সেরা হন। এই বিভাগে ব্রোঞ্জপদক জিতেন ভুটানের কেনলি গায়েলশেন। মাবিয়ার দেখানো পথে হেঁটেই এমন সাফল্যের পর তিনি বলেন, ‘পদক জয়ের লক্ষ্য নিয়ে নেপাল এসেছিলাম। তবে স্বর্ণ জিতবো এটা আশা ছিল না। আমার আগে মাবিয়া স্বর্ণ জিতেছেন। সেটা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। মাবিয়ার মতই দেশকে ভালো কিছু উপহার দেয়ার লক্ষ্যে খেলা শুরু করি। আল্লাহ আমার ইচ্ছা পূরণ করেছেন বলে খুব ভালো লাগছে।’
ভারোত্তোলনে দুই স্বর্ণ জয়ের রেশ কাটতে না কাটতেই বাংলাদেশের ফেন্সিং দিল আরেকটি সুখবর। কাল কাঠমান্ডুর কীর্তিপুরে গেমসের ফেন্সিং ডিসিপ্লিনে আলো ছড়িছেন লাল-সবুজের ফাতেমা মুজিব। তিনি ফেন্সিংয়ের সাবের এককে স্বর্ণ জিতে ইতিহাসের অংশ হন। এই প্রথম এসএ গেমসে ফেন্সিং অন্তর্ভূক্ত করা হয়। আর প্রথম অংশগ্রহণেই বাজিমাত করেন ফাতেমা। সোনা জিতে তিনি বলেন, ‘এই খুশি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এখানকার আবহাওয়া খুব একটা অনুকুলে না থাকলেও আমার বিশ্বাস ছিল পারবো। দেশকে সেরা সাফল্য এনে দিতে পেরে আমি দারুণ খুশি।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন