শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সীমাহীন জনদুর্ভোগ

চট্টগ্রামে উন্নয়নের ধীরগতি সমন্বয়ের অভাব ধূলিময় শহর বাড়ছে রোগব্যাধি

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৩ এএম, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৯

অপরিকল্পিত উন্নয়ন, প্রকল্পে ধীরগতি আর সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়িতে বেহাল দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রাম মহানগরী। নগরীর প্রধান প্রধান সড়কসহ প্রায় সব সড়কে চলছে কাটাকাটি। পাইপ লাইন স্থাপনের জন্য যখন সেখানে খুশি রাস্তা কাটছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। খানাখন্দে ভরা সড়কে তীব্র যানজটে স্থবির বন্দরনগরীর জনজীবন, ব্যবসা-বাণিজ্য। বিঘিœত হচ্ছে দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি চট্টগ্রাম বন্দরমুখী আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহনও। বাতাসে উড়ছে ধুলোবালি, ধুলিময় শহরে বাড়ছে রোগব্যাধি। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। কাজে ধীরগতি জনদুর্ভোগের সাথে বাড়ছে প্রকল্পের ব্যয়ও।

নগরীর প্রধান সড়কের বিমানবন্দর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত আউটার রিং রোড প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও কাজ শেষ হয়নি। একই অবস্থা নগরীর বহদ্দারহাট থেকে কর্ণফুলী সেতু পর্যন্ত সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্পেরও। মহানগরীর বায়েজিদ থেকে ভাটিয়ারী পর্যন্ত সড়ক সম্প্রসারণ কাজেও সম্ভুক গতি। চন্দনপুরা থেকে বাকলিয়া পর্যন্ত সড়ক সম্প্রসারণ কাজেও গতি নেই। দীর্ঘ তিন বছর ওয়াসার কাটাকাটির পর বহদ্দারহাট থেকে সিঅ্যান্ডবি হয়ে কালুরঘাট সেতু পর্যন্ত সড়কের সংস্কার কাজ সবেমাত্র শুরু করেছে সিটি কর্পোরেশন।

মহানগরীর আমবাগান থেকে পাহাড়তলী পর্যন্ত সড়কটি সম্প্রসারণ কাজও চলছে ধীরলয়ে। বন্দরমুখী অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পোর্ট কানেকটিং রোডের (পিসি) সম্প্রসারণ কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগে। তবে কাজ এখনও শেষ হয়নি। একই কারণে বেহাল দশা আগ্রাবাদ এক্সেস রোডেও। সিমেন্ট ক্রসিং থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কে চলছে সম্প্রসারণ কাজ। ওই সড়কে চলছে বন্দরের পতেঙ্গা টার্মিনাল নির্মাণ। পানিবদ্ধতা নিরসন মেগাপ্রকল্পের কাজও চলছে নগরীতে। এর পাশাপাশি মহানগরীর ১২শ কিলোমিটার পাকা সড়কের অর্ধেকের বেশি খোঁড়াখুঁড়ি করছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। সামনে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, আর তাই শেষ সময়ে এসে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে ব্যাপক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন চলছে। নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি পর্যন্ত চলছে খোঁড়াখুঁড়ি, কাটাকাটি। ফলে পুরো নগরীর এখন বেহাল দশা।

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহ-সভাপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী সুভাষ বড়–য়া ইনকিলাবকে বলেন, অপরিকল্পিত উন্নয়ন আর সমন্বয়হীনতার চরম খেসারত দিতে হচ্ছে নগরবাসীকে। এক সংস্থা রাস্তা কেটে মেরামত করার পর অন্যরা কাটছে। জনগণের অর্থের অপচয় যেমন হচ্ছে তেমনি দুর্ভোগও বাড়ছে। উন্নয়নের ধীরগতি আর প্রকল্প ব্যয় বাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, অপরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহণের ফলে এমনটা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার আর তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের অদক্ষতাও দায়ী। জনদুর্ভোগ কমাতে প্রকল্প বাস্তবায়নে পরিবেশ বান্ধব ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ধুলাবালি থেকে রক্ষায় পানি ছিটানো, দিনের বদলে রাতে কাজ করা কিংবা কাজ শেষে দ্রæত ধুলা বালু সরিয়ে নিলে দুর্ভোগ কমিয়ে আনা যায়।

যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়িতে ট্রাফিক ব্যবস্থা বিঘিœত হচ্ছে জানিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) এস এম মোস্তাক আহমেদ খান ইনকিলাবকে বলেন, কোন ঘোষণা ছাড়াই রাস্তা কাটা হচ্ছে। কাটার জন্য হঠাৎ রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। কোথাও আবার রাস্তা দখল করে নির্মাণ সামগ্রী রাখা হচ্ছে। এতে করে যানজট হচ্ছে। সমন্বয়ের অভাব প্রকট উল্লেখ করে তিনি বলেন, উন্নয়ন কাজ চলবে, তবে আগে থেকে ঘোষণা দিয়ে রাস্তা খোঁড়া হলে দুর্ভোগ কিছুটা কমানো যায়।

কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের ধীরগতিতে দুর্ভোগ স্থায়ী হয়ে গেছে। জাইকার অর্থায়নে ১২০ কোটি টাকায় ২০১৭ সালে কাজ শুরু হয় পিসি রোড ও আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের সম্প্রসারণ। পিসি রোডের বন্দর-নিমতলা থেকে অলঙ্কার, আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের বাদামতল থেকে বড়পুল পর্যন্ত সড়কের একাংশে কাজ প্রায় শেষ হলেও অন্য অংশে এখনও বড় বড় গর্ত। প্রকল্পের পরিচালক চসিক প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হলেও কাজ শেষ হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জানুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএর আউটার রিং রোড প্রকল্পের অবস্থাও একই। ৮৬৫ কোটি টাকার প্রকল্প কয়েক দফায় বেড়ে ২৪শ ২৬ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। জাইকার অর্থায়নে পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার সড়কের কোন কোন অংশ ধসে পড়ায় কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে প্রকল্পের পরিচালক ও সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস দাবি করেন, সময় কিছুটা বেশি লাগলেও কাজের গুণগতমান অক্ষুণœ রাখা হয়েছে। চলতি মাসের শেষে সড়কটি যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া যাবে। কাজ শেষ হবে আগামী বছরের জুনে।

তিন হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করছে সিডিএ। এ প্রকল্পের কাজও চলছে কচ্ছপ গতিতে। বন্দরকে ঘিরে যানজট কমাতে সিটি আউটার রিং রোড এবং পিসি রোডের কাজ শেষ করে এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরুর কথা ছিল। তার আগেই কাটগড় এলাকায় খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হওয়ায় সবকটি সড়কে তীব্র যানজট স্থায়ী হয়ে গেছে। এর ফলে দেশের অর্থনীতির লাইফলাইন চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল স্থবির হয়ে পড়েছে। পতেঙ্গার বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোগুলো থেকে পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলও বিঘিœত হচ্ছে। প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে ২০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। জানুয়ারি নাগাদ কাজে গতি আসবে।

পুরো নগরী এখন ধুলায় ধূসর। ধুলাবালির কারণে বাতাস দূষিত হচ্ছে। আর এর ফলে রোগবালাইও বাড়ছে। হাসপাতাল ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চেম্বারে বাড়ছে রোগীর ভিড়। বিশেষ করে শিশু এবং বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ বলেন, শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়ার সাথে ধুলাবালি এবং যানবাহনের ধোঁয়ায় বায়ু দূষিত হয়ে অ্যালার্জি, চর্মরোগ, অ্যাজমা, পেটের পীড়া, ডায়রিয়াসহ রোগব্যাধি বাড়ছে। দূষণমুক্ত থাকতে ওয়ান টাইম মাস্ক পড়ার পাশাপাশি ঘরে ফিরে হাত-মুখ ধুয়ে ফেলা পারলে গোসল করে ফেলার পরামর্শ দেন তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
নোমান ৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:০৩ এএম says : 0
মেয়র সাহেব কাল বললেন নির্বাচনের সব ওয়াদা তিনি পুরণ করেছেন!
Total Reply(0)
দাউদ ৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:০৪ এএম says : 0
ধুলাবালি থেকে রক্ষায় পানি ছিটানো, দিনের বদলে রাতে কাজ করা কিংবা কাজ শেষে দ্রুত ধুলা বালু সরিয়ে নিলে দুর্ভোগ কমিয়ে আনা যায়।
Total Reply(0)
মাসুম ৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:০৫ এএম says : 0
ঢাকা চট্টগ্রামসহ অধিকাংশ শহরেরই একই অবস্থা
Total Reply(0)
শাহে আলম ৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:০৬ এএম says : 0
আসলে জনগণের দুর্ভোগ নিয়ে ভাববার কেউ নেই। সবাই আছে সবার আখের গোছানো নিয়ে
Total Reply(0)
সালমান ৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:০৬ এএম says : 0
পুরো নগরী এখন ধুলায় ধূসর। ধুলাবালির কারণে বাতাস দূষিত হচ্ছে। আর এর ফলে রোগবালাইও বাড়ছে।
Total Reply(0)
নাসির উদ্দিন ৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:০৭ এএম says : 0
রিপোর্টটি করার জন্য রফিকুল ইসলাম সেলিম সাহেবকে অসংখ্য ধন্যবাদ
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন