শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

রাসূল (সা.)-এর কটুক্তিকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে

মুহাম্মদ আবদুল হামিদ | প্রকাশের সময় : ৫ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

পূর্ব প্রকাশিতের পর
সম্প্রতি ভোলার বোরহানউদ্দিনে জনৈক হিন্দু যুবকের ফেইসবুক আইডিতে রাসূল (সা.)-কে কটুক্তি করার প্রতিবাদে আন্দোলন করতে গিয়ে ৪ জন ধর্মপ্রাণ মুসলমান শহীদ হয়েছেন। এছাড়াও এ ঘটনায় আরো শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। এ হচ্ছে একজন ঈমানদার মুসলমানের রাসূল প্রেমের নমুনা।
যারা আল্লাহ তা’লার শানে বেয়াদবি করে, রাসূল (সা.)-কে নিয়ে কটুক্তি করে, রাসূলের সুন্নাহকে অস্বীকার করে এবং এগুলো নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য বা কৌতুক করে, সত্যদ্বীন গ্রহণ কারার পর এর প্রতি বিমুখতা প্রদর্শন করে, এরা মুলতঃ ধর্মের প্রতি বিদ্রোহ ঘোষণা করে! এটা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। একেই বলে ‘মুরতাদ’।
মুরতাদ শব্দের অর্থÑ বিমুখ হয়েছে বা ফিরে গিয়েছে এমন। এর মর্মার্থ হল, ইসলাম ত্যাগ করা, ইসলামের কোনো মৌলিক আকিদা বা বিধানকে মানতে অস্বীকার করা, কিংবা তার প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করা অথবা ইসলামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয়ের অবমাননা করা, যা অন্তরের ভক্তিশূন্যতা ও শ্রদ্ধাহীনতার আলামত বহন করে। এককথায় ঈমান বিনষ্টকারী যে কোনো কুফরী-শিরকী আকিদা বা বিশ্বাস পোষণ করা, অথবা এ জাতীয় কোনো কথা বা কাজে লিপ্ত হওয়ার নামই হল ইরতিদাদ বা মুরতাদ হওয়া।
মুরতাদ দুই ধরণের হয়ে থাকেÑ একজন স্বঘোষিত মুরতাদ, আরেকজন গোপনে ইরতিদাদ-মূলক কোনো আকিদা-বিশ্বাস পোষণ করে অথবা অনুরূপ কাজ-কর্মের সঙ্গে জড়িত থেকেও নিজেকে কথা বা কাজে মুসলমান বলে দাবী করে।
এদের সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনÑ ‘আর তোমাদের মধ্যে কেউ যদি নিজের ধর্ম থেকে ফিরে যায়। আর সে অবিশ্বাসী অবস্থায় মারা যায়, তাহলে দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের সকল নেক আমল বরবাদ হয়ে যাবে। এই লোকেরাই হল জাহান্নামের অধিবাসী, তারা চিরকাল সেখানে থাকবে।’ (বাকারাÑ ২১৭)
রাসূলের অবমাননাকারীদের উপর আল্লাহর অভিশ¤পাত বর্ষিত হবে মর্মে কুরআনে কারীমে ঘোষণা করা হয়েছেÑ ইরশাদ হচ্ছে, ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদের প্রতি ইহকালে ও পরকালে অভিস¤পাত করেন এবং তাদের জন্যে প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি। (সূরা আহযাব- ৫৭)
মুরতাদের পরকালীন শাস্তির ফয়সালা হবে হাশরের ময়দানে। যেখানে ফয়সালাকারী হবেন আহকামুল হাকিমীন মহান আল্লাহ রাববুল আলামীন। মানুষের অন্তরের একান্ত গোপন কথাও যার অজানা নয়। তাই দুনিয়াতে যে নিজের ইরতিদাদ ও কুফর লুকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে, কেয়ামতের দিন সেও অপরাধী সাব্যস্ত হবে। তাকেও কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে।
কিন্তু এই দুনিয়ার আদালতে মনের অবস্থার উপর বিচার করা যায় না। দুনিয়াবী শাস্তি প্রয়োগ হবে কেবল ঐ ব্যক্তির উপর-যার ইরতিদাদ স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়ে গেছে এবং বিচারকের কাছে তা প্রমাণিত হয়েছে। স্বঘোষিত মুরতাদ হোক আর মুনাফিকজাতীয় মুরতাদ হোক, উভয় প্রকার মুরতাদের ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম হলো, যদি আদালতে এদের ইরতিদাদ প্রমাণ হয়ে যায়, তাহলে তার বিষয়ে শরীয়ত মোতাবেক ফয়সলা করা বিচারকের কর্তব্য। ইসলামে মুরতাদের দুনিয়াবী শাস্তি মৃত্যুদন্ডের বিধান রয়েছে। বিচারকের জন্য করণীয় হলো, মুরতাদকে প্রথমে তওবা করার সুযোগ দেওয়া। সে যদি তওবা করে নেয় তাহলে ভালো। অন্যথায় নির্ধারিত শাস্তি প্রয়োগ করা।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনÑ অভিশপ্ত অবস্থায় তাদেরকে যেখানেই পাওয়া যাবে, ধরা হবে এবং প্রাণে বধ করা হবে। যারা পূর্বে অতীত হয়ে গেছে, তাদের ব্যাপারে এটাই ছিল আল্লাহর রীতি। আপনি আল্লাহর রীতিতে কখনও পরিবর্তন পাবেন না। (সূরা আহযাব-৬১-৬২)
হাদীস শরীফে হযরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত, ওহুদ যুদ্ধে এক মহিলা মুরতাদ হয়ে যায়, তখন রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, তাকে তওবা করানো হোক, আর যদি তওবা না করে, তাহলে তাকে হত্যা করা হবে। (দারে কুতনীÑ ১২১, বায়হাকীÑ১৬৬৪৫)
উল্লেখিত আয়াতে কুরআনী ও আহাদীসে রাসুলূল্লাহ (সা.) থেকে বুঝা যায়, যারা আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-কে নিয়ে কটাক্ষ করে, ধর্মের মৌলিক বিধি-বিধান অস্বীকার করে ও ধর্মীয় প্রতীক বা নিশানকে অপমান করে তাদের দুনিয়াবী শাস্তি মৃত্যুদন্ড। বিশে^র অনেক দেশে ধর্মদ্রোহীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃর্তুদ-ের বিধান রয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের বাংলাদেশে এই বিধান নেই। এ কারণে বাংলাদেশে ধর্মদ্রোহীদের আস্ফালন দিন দিন বেড়েই চলছে। কথায়-কাজে, কাগজে-কলমে, ইন্টারনেটে এদের বিকৃত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেই চলছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এর প্রতিবাদ করছে। আন্দোলন করে নিজেদের জীবনকে বিলিয়ে দিচ্ছে। সরকারের কাছে ধর্মদ্রোহীদের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান ও তা কর্যকর করার দাবী জানাচ্ছে। তবুও আমাদের দেশে ধর্মদ্রোহীদের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান হচ্ছে না। রাসূল (সা.)-এর জন্ম ও ইন্তেকালের মাস রবিউল আউয়ালে ধর্মপ্রাণ মুসলমানের প্রাণের দাবি হচ্ছেÑ রাসূলের কটুক্তিকারী ধর্মদ্রোহী নাস্তিক মুরতাদদের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান জারি করতে হবে। যাতে কোন ধর্মদ্রোহী আমাদের প্রাণের চেয়ে প্রিয়নবী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহানব হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলূল্লাহ (সা.)-কে নিয়ে কটুক্তি করার সাহস করতে না পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন