রাজধানীর যানজট নিরসনে সরকার বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে বর্তমানে মেট্রোরেলের তিনটি লাইনের কাজ চলমান। এর পাশাপাশি সরকার এবার ২৩৮ কিলোমিটার পাতাল রেল (সাবওয়ে বা আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোরেল) নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে ‘ঢাকা শহরে সাবওয়ে (আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো) নির্মাণে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা (প্রথম সংশোধন)’ প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে সেতু বিভাগ। এ প্রকল্পের আওতায় মোট ২৩৮ কিলোমিটার অংশের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং ৯০ কিলোমিটার অংশের প্রাথমিক নকশা প্রণয়ন করা হবে।
‘ঢাকা শহরে সাবওয়ে (আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো) নির্মাণে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা (প্রথম সংশোধন)’ প্রকল্পটি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়/সেতু বিভাগের উদ্যোগে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বাসেক) বাস্তবায়ন করবে। সংশোধিত প্রস্তাব অনুযায়ী, এর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে সরকার খরচ করবে ৩২১ কোটি ৮৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। মূল প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ছিল ২২৪ কোটি ৫৯ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি শুরু হওয়া এ সম্ভাব্যতা যাচাই ২০২০ সালের ৩০ এপ্রিল শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে সংশোধনে সময় বাড়িয়ে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় চাওয়া হয়েছে।
প্রকল্প সূত্র জানায়, মূল অনুমোদিত প্রকল্পে পাতাল রেল বা সাবওয়ে নির্মাণের জন্য প্রাথমিকভাবে চারটি রুট চিহ্নিত ছিল, যার আনুমানিক দৈর্ঘ্য প্রায় ৯০ কিলোমিটার। পরে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইন্টেরিম (অন্তর্বর্তীকালীন) প্রতিবেদন উপস্থাপন করলে স্টেকহোল্ডার ও প্যানেল অব এক্সপার্টরা মোট ২৩৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সাবওয়ে নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার সুপারিশ করেন।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বর্তমানে আরএসটিপিতে (কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা) প্রস্তাবিত এমআরটি লাইন-১ ও এমআরটি লাইন-৬ এর এলাইনমেন্টের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ঢাকা শহরে সাবওয়ে, পূর্ণ যোগাযোগ স্থাপন করতে মোট ২৩৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সাবওয়ে নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা উপস্থাপন করে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। এ সম্ভাব্যতা যাচাই প্রকল্পের গত জুন পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় ১০১ কোটি ৩৭ লাখ ৪২ হাজার টাকা, যা অনুমোদিত ব্যয়ের ৩১ দশমিক ৪৯ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি ৩৫ শতাংশ।
সেতু বিভাগের অভিমত, ঢাকা শহরে বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রায় ৭ হাজার ৯৫০ জন। মোট সড়কের দৈর্ঘ্য ১ হাজার ২৮৬ কিলোমিটার, সড়কের ঘনত্ব ৯ দশমিক ১ শতাংশ। অথচ মেট্রোপলিটন শহরে সড়কের আদর্শ মান ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। এখানে ফাঁকা জায়গা ৩ দশমিক ০৯ শতাংশ অথচ আদর্শ মান ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। ঢাকা শহরে যানজটের কারণে প্রতি বছর প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের লক্ষ্যে সেতু বিভাগ ঢাকা শহরে পাতাল রেল (পাতাল মেট্রোরেল) নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
এছাড়া সড়কপথে যেখানে ১০০ বাসে ঘণ্টায় ১০ হাজার যাত্রী চলাচল করতে পারে, সেখানে সাবওয়েতে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী চলাচল সম্ভব। তবে বিদ্যমান সড়কের ওপর মেট্রো বা সাবওয়ে নির্মাণ করা হলে সড়কের কিছু অংশ দখলের ফলে যানজট কমার ক্ষেত্রে তেমন প্রভাব ফেলবে না এবং নির্মাণকাজ চলার সময় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হবে। মাটির নিচে সাবওয়ে বা আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রো নির্মাণ করা হলে জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশ মাটির নিচ দিয়ে চলাচল করবে। ফলে ভূমির উপরিভাগ যাতায়াতকারী জনসংখ্যা কমবে এবং যানজটও অনেকাংশে কমবে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের মত, সংশোধিত প্রস্তাবে আরও ১৪৮ কিলোমিটার বেশি দৈর্ঘ্য যুক্ত করে মোট ২৩৮ কিলোমিটার সাবওয়ে নেটওয়ার্ক স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এত বেশি দৈর্ঘ্যের সাবওয়ে নেটওয়ার্ক নির্মাণের কারণ সেতু কর্তৃপক্ষ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভাকে অবহিত করতে পারে। একই সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন রুট এবং আরএসটিপির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি-না, সে বিষয়ে ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কোং অর্ডিনেশন অথরিটি (ডিটিসিএ) পিইসি সভাকে অবহিত করতে পারে।
রাজধানীর যানজট নিরসনে বর্তমানে ‘ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (এমআরটি লাইন-৬)’ ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার এলিভেটেড মেট্রোরেল লাইন নির্মাণকাজ চলমান। সম্প্রতি ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ‘ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৫) : নর্দান রুট’ এবং ৩১ দশমিক ২৪১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ‘ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-১)’ প্রকল্প দুটি অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা। মেট্রোরেলের নতুন এই দুই লাইনের বড় অংশই মাটির নিচ দিয়ে যাবে। এর বাস্তবায়ন কাজ প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন