শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

যে ফুলের খুশবোতে সারাজাহান মাতোয়ারা

ফিরোজ আহমাদ | প্রকাশের সময় : ১২ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

ফুল ভালোবাসার প্রতীক। ফুল দিয়ে এক অপরের সাথে ভালোবাসা বিনিময় হয়। হযরত মুহাম্মদ (সা) মানব জগতের জন্য গোলাপ ফুল স্বরূপ। হযরত মুহাম্মদ (সা) এমনই এক ফুল, যে ফুলের আদেশ উপদেশ মানলে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য করা হয়ে যায়। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে হযরত রাসূল (সা) এর আনুগত্য করিল সে আল্লাহর আনুগত্য করিল।’ (সূরা আন নিসা: ৮০)।

হযরত মুহাম্মদ (সা) এর চরিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে সৃষ্টির সকল কল্যাণ নিহিত রয়েছে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমাদের যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সূরা আহযাব:২১)।

হাশরের মাঠে স্বামী স্ত্রীর পরিচয় দিবে না, বাবা ছেলের পরিচয় দিবে না, ছেলে মায়ের পরিচয় দিবে না, ভাই বোনের পরিচয় দিবে না। একে অপরের নিকট পরিচয় গোপন করবে। কিন্তু হযরত মুহাম্মদ (সা) কারো নিকট পরিচয় গোপন করবেন না। এছাড়া তিনি পরিচয় গোপন করতে পারবেনও না। কারণ তিনি মহামানব ও মহানবী। তাই এ দুনিয়াতে যারা তাঁর উপদেশ মোতাবেক চলবে, আল্লাহ পরকালে তাদের ভূল-ত্রুটি গুলো ক্ষমা করে দিবেন। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি বলুল, তোমরা যদি আল্লাহ পাককে ভালোবাস, তাহলে আমার কথা মেনে চলো, আল্লাহ পাক ও তোমাদের ভালবাসবেন এবং তিনি তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিবেন।’ (সূরা আল ইমরান: ৩১)।

সকল সৃষ্টি আল্লাহর শোকর গুজার করে। আল্লাহর ইবাদত করে। কিন্তু কুল কায়েনাতের মধ্যে হযরত মুহাম্মদ (সা) এর ক্ষেত্রে ইহার ব্যাতিক্রম লক্ষ্য করা যায়। আল্লাহতায়ালা নিজে এবং তাঁর ফেরেশতাগণ হযরত মুহাম্মদ (সা) এর উপর দুরূদ পড়েন। তিনি তাঁর বান্দাদেরকেও হযরত মুহাম্মদ (সা) এর উপর দুরূদ পড়তে বলেছেন। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে ‘আল্লাহ নবীর প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাঁহার ফেরেশতাগণও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করে। হে মুমিনগণ! তোমরাও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা কর ও তাহাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।’ (সূরা আহযাব:৫৬)।

আল্লাহতায়ালা তাঁর নেয়ামতের স্বাক্ষী দাতা ও সুসংবাদ দাতা হিসেবে, হযরত মুহাম্মদ (সা) কে কোন একটি বিশেষ জাতি গোষ্ঠীর জন্য প্রেরণ করেননি। তিনি কুল কায়েনাতের নবী। তিনি নবীদের নবী। অর্থাৎ মহানবী। কুরআনে ইরশাদ এরশাদ হয়েছে ‘আমি আপনাকে বিশ্ব জগতের প্রতি কেবল রহমত স্বরূপ প্রেরণ করিয়াছি।’ (সূরা আম্বিয়া: ১০৭)।

হযরত মুহাম্মদ (সা) এর দুনিয়ায় আগমণের সংবাদ অন্যান্য নবী (আ) এর কিতাবেও উল্লেখ ছিল। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর ¯œরণ করুন, যখন মারইয়াম পুত্র ঈসা বলেছিল, ‘হে বনী ইসরাইল, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের নিকট আল্লাহর প্রেরিত রাসূল। আমার পূর্ববর্তী তাওরাতের সত্যায়নকারী এবং একজন রাসূলের সুসংবাদদাতা যিনি আমার পরে আসবেন, যার নাম আহমদ’।’ (সূরা সাফ:৬)।

উম্মতের জন্য হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর চেয়ে হিতাকাংখী দ্বিতীয় আর কেউ নেই। মুমিনের দুঃখ-বেদনা তাঁর হৃদয়কে স্পর্শ করে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের নিকট একজন রাসূল এসেছেন, তোমাদের দু:খ-কষ্ট তার কাছে কষ্ট দায়ক। তিনি তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি ¯েœহশীল, অত্যান্ত দয়ালু। (সূরা তাওবা:১২৮-১২৯)।

কুল কায়েনাতের মধ্যে যে বা যারা আল্লাহর শোকর গুজারি করেন, তাদের মধ্যে হযরত মুহাম্মদ (সা) এর শোকর গুজারিকে আল্লাহতায়ালা সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়েছেন এবং তা কিয়ামত দিবস পর্যন্ত বলবত থাকবে। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,‘আমিই আপনার স্মরনকে সর্বোচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছি।’ (সূরা আলাম নাশরাহ:৪)।

হাশরের ময়দানে পানির একমাত্র উৎস হবে হাউজে কাউসার। সূর্যের প্রচন্ড তাপে মানুষ যখন পানির পিপাসায় এদিক সেদিক ছুটাছুটি করতে থাকবে। কোথাও কোন পানি পাবে না। তখন সকলে হাউজে কাউসারের নিকট আসবে। আল্লাহতায়ালা হযরত মুহাম্মদ (সা) কে হাউজে কাউসার দান করে বিশেষ সম্মান দিয়েছেন। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমিই আপনাকে হাউজে কাউসার দান করেছি।’ (সূরা কাউসার :১)।

দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ লাভ করতে হলে, হযরত রাসূল (সা) কে পরিবার-পরিজনের চেয়ে বেশি ভালোবাসতে হবে। তা না হলে মুমিন হওয়া যাবে না। আর মুমিন হতে না পারলে, জান্নাতেও যাওয়া যাবে না। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর নবী মুমিনদের কাছে তাদের নিজেদের চাইতেও বেশী প্রিয় এবং নবীর স্ত্রীরা হচ্ছে তাদের মাতা; আল্লাহর কিতাবে অনুযায়ী আত্মীয় স্বজন সব মুমিন মুহাজির ব্যক্তির চাইতে একজন আরেকজনের বেশী নিকটতর।’ (সূরা আল-আহযাব: ৬)। হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসূল (সা) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের কেউই ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যে পর্যন্ত না আমি তার নিকট তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সকল মানুষ থেকে অধিক প্রিয় হই।’ (বোখারি:১/১৫)।

সেদিন হযরত মুহাম্মদ (সা) এর আগমণে সারা জাহান মাতোয়ারা হয়েছিল। তাঁর আগমণের ধ্বনিতে আকাশ বাতাস আসমান জমিন উল্লাস করেছে। চারদিকে আল্লাহর রহমতের বাতাস বইতে ছিল। আজো সে খুশবোতে সকলে মাতোয়ারা। হযরত মুহাম্মদ (সা) এর খুশবোতে পুলোকিত হওয়ার জন্য আল্লাহতায়ালা তৌফিক দান করুক। আমীন।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Munadil Fahad ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৬:২২ পিএম says : 0
যখন মারইয়াম পুত্র ঈসা বলেছিল, ‘হে বনী ইসরাইল, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের নিকট আল্লাহর প্রেরিত রাসূল। আমার পূর্ববর্তী তাওরাতের সত্যায়নকারী এবং একজন রাসূলের সুসংবাদদাতা যিনি আমার পরে আসবেন, যার নাম আহমদ’।’ (সূরা সাফ:৬)। এই আয়াত অনুযায়ী হযরত ঈসা (আ) এর মৃত্যুর পরে হযরত মুহাম্মদ (সা) এর আগমনের কথা।
Total Reply(0)
Munadil Fahad ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৬:২৩ পিএম says : 0
যখন মারইয়াম পুত্র ঈসা বলেছিল, ‘হে বনী ইসরাইল, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের নিকট আল্লাহর প্রেরিত রাসূল। আমার পূর্ববর্তী তাওরাতের সত্যায়নকারী এবং একজন রাসূলের সুসংবাদদাতা যিনি আমার পরে আসবেন, যার নাম আহমদ’।’ (সূরা সাফ:৬)। এই আয়াত অনুযায়ী হযরত ঈসা (আ) এর মৃত্যুর পরে হযরত মুহাম্মদ (সা) এর আগমনের কথা।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন