পূর্ব প্রকাশিতের পর
৬। তাবারানী র. ‘মু‘জামে আওসাত’ গ্রন্থে উত্তম সনদসূত্রে হযরত সালমা ইবন আকওয়া‘ রা. থেকে উদ্ধৃত করেছেন, তিনি বলেছেন, “আমি রাসূল স. এর হাত মুবারকে বায়‘আত গ্রহণ করেছি, তাঁর হাত মুবারকে চুমু খেয়েছি; তিনি আমাকে নিষেধ করেননি” (জাওয়াহিরুল ফিকাহ: মুফতী শফী র., খ-১, পৃ.১৯০-১৯১)।
৭। হাকিম র. তাঁর মুসতাদরাক গ্রন্থে হযরত বুরায়দা রা. থেকে হাদীস বর্ণনা করে সেটিকে সহীহসনদ সম্বলিত মর্মে সাব্যস্ত করেছেন। অর্থাৎ “এক ব্যক্তি রা. রাসূল স. এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে, তাঁর মাথা মুবারক ও হাত মুবারকে চুমু খেয়েছেন” (জাওয়াহিরুল ফিকাহ: মুফতী শফী র., খ-১, পৃ.১৯০-১৯১)।
৮। তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনু মাজা হযরত সাফওয়ান রা. সূত্রে বর্ণনা করেছেন, “ইহুদীদের একটি দল রাসূল স. এর উভয় হাতে এবং উভয় পায়ে চুমু খেয়েছেন।” ইমাম তিরমিযী র. এটি বর্ণনা করে বলেছেন, ‘হাদীসটি হাসান’ (তিরমিযী শরীফ : খ-২, পৃ. ১০২, কুতুবখানা রশিদিয়া, দেওবন্দ, ইউপি. ভারত)।
হযরত শায়খ মুহাম্মদ আবেদ সিন্ধী র. উপরিউক্ত হাদীসগুলো উদ্ধৃত করার পরে বলেছেন, “এসব হাদীস থেকে এটি প্রমাণিত হল যে, আলেম, ন্যায়-পরায়ণ বাদশা ও ধর্মীয় বিবেচনায় বিশেষ সম্মানী ব্যক্তির হাতে চুমু খাওয়া এমনকি পায়ে চুমু খাওয়াও জায়েয। কেননা সৃষ্টির সেরা রাসূল স. উক্ত তিনটি গুণে এমনভাবে গুণান্বিত যে, জগতে তাঁর মত এক্ষেত্রে দ্বিতীয় আর কেউ নেই। পক্ষান্তরে, হযরত আনাস রা. এর একটি মাত্র বর্ণনা (নি¤েœ ক্রমিক-৯ এ আলোচিত হাদীসটি) যা থেকে চুমু খাওয়া নিষেধ বলে মনে হচ্ছে, তা ওই সব সর্ব-সাধারণের বেলায় প্রযোজ্য যাদের মধ্যে উক্ত তিনটি গুণের অনুপস্থিতি বিদ্যমান।
৯। ইমাম তিরমিযী র. উত্তম সনদসূত্রে হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণনা করেছেন, “এক ব্যক্তি রাসূল স.-কে জিজ্ঞাসা করলো, আমাদের মধ্য থেকে কোন ব্যক্তি যে তার ভাই অথবা বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে, সে কি তখন তার সম্মানার্থে অবনত হবে? মহানবী স. তার জবাবে বললেন, ‘না’। লোকটি আবার জিজ্ঞাসা করলো, তার সঙ্গে কি ‘মু‘আনাকা’ (কোলাকুলি) করবে? এবং চুমু খাবে? নবীজী স. বললেন, ‘না’। সে আবার প্রশ্ন করলো, তার সঙ্গে কি ‘মুসাফাহা’ করবে? এর জবাবে নবীজী স. বললেন, ‘হ্যাঁ’ (তিরমিযী : প্রাগুক্ত)।
শায়খ মুহাম্মদ আবেদ র. বলেছেন, “উক্ত হাদীসটি সেসব লোকের বেলায় প্রযোজ্য যাদের মধ্যে উপরে আলোচিত তিনটি গুণ-বৈশিষ্ট্যের মধ্য থেকে কোন একটি গুণও না থাকবে। অর্থাৎ তাদের সঙ্গে মু‘আনাকা ও চুমু খাওয়ার আমল করা হবে না; শুধু মুসাফাহা-ই যথেষ্ট। তার সঙ্গত কারণ খোদ সেই প্রশ্নই যা হাদীসটিতে উল্লেখ রয়েছে। কেননা প্রশ্নকারী এমন প্রশ্ন করেননি যে, ‘বড় আলেম বা সম্মানী ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটলে, সেক্ষেত্রে কি করা হবে? বরং প্রশ্নটি সাধারণ বন্ধু বা ভাই সম্পর্কে করা হয়েছে। যার জবাবে রাসূল স. মু‘আনাকা ও চুমু খাওয়াকে নিষেধ করেছেন।”
এ পর্যন্ত আলোচিত হল সেসব ঘটনা, যার মধ্যে সাহাবাকিরাম রাসূল স. এর হাতে চুমু খেয়েছেন। এখন ওইসব ঘটনা আলোচনা করা হচ্ছে, যার মধ্যে রাসূল স. কোন কোন সাহাবাকে চুমু খেয়েছেন মর্মে উল্লেখ রয়েছে। যেমন:
১০। হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, হযরত আবূ বকর রা. এর আগমন কালীন রাসূল স. তাঁর সঙ্গে মু‘আনাকা করেছেন এবং তাঁর মুখে চুমু খেয়েছেন। তা আবার হযরত আলী রা. দেখতে পেয়ে তিনিও রাসূল স. এর অনুকরণে সিদ্দীকে আকবার রা. এর মুখে চুমু খেলেন। এতে রাসূল স. হযরত আলী রা.-কে সম্বোধন করে ইরশাদ করলেন, হে আবুল হাসান! আবূ বকরের অবস্থান (মর্যাদা) আমার কাছে ঠিক তেমনি যেমন কিনা আমার অবস্থান আমার মা’ এর কাছে।
এ থেকে এমনটিও বোঝা যাচ্ছে যে, চুমু ও হাতে চুমু খাওয়া ইত্যাদি কেবল রাসূল স. এর ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট নয়; অন্যদের ক্ষেত্রেও তা জায়েয আছে। তবে শর্ত হল, তার মধ্যে (যাকে চুমু খাওয়া হবে) উপরে আলোচিত গুণগুলোর কোন একটি থাকতে হবে। এ ছাড়াও, নি¤েœাক্ত বর্ণনাগুলো দ্বারা উক্ত নির্দিষ্ট না হওয়া বিষয়টি পুরোপুরি সমর্থিত হয়; যাতে সাহাবাকিরামের পরস্পরকে হাতে চুমু খাওয়া ইত্যাদির প্রমাণ পাওয়া যায়; অথচ বিষয়টি কেউই নেতিবাচকভাবে নেননি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন