রোববার, ১৬ জুন ২০২৪, ০২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

রাষ্ট্রের গোপনীয় তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র’য়ের কাছে রাষ্ট্রের গোপনীয় তথ্য পাচারের অভিযোগে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের এক কনস্টেবলকে আটক করে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় আদালতে সোপর্দ করেছে বেনাপোল থানা পুলিশ। গ্রেফতার হওয়া পুলিশ সদস্য দেব প্রসাদ সাহার কাছ থেকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানা যায়। যশোরের মুখ্য মহানগর হাকিম সাইফুদ্দিন হোসেনের আদালতে উপস্থিত করে ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে বৃহষ্পতিবার শুনানী শেষে তিনি ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। র’য়ের কাছে তথ্য পাচারের অভিযোগে সাম্প্রতিককালে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে দেব প্রসাদ সাহা একজন। ইতিপূর্বে গত বছরের ২৫ অক্টোবর ঢাকার কমলাপুরের একটি হোটেল থেকে সেনা সদস্য শাহনেওয়াজকে আটক করে ডিজিএফআই ও র‌্যাবের গোয়েন্দা ইউনিট। শাহনেওয়াজের কাছ থেকে পাওয়া পেনড্রাইভ ও তথ্য অনুসারে পুলিশের এসপি, কনস্টেবল, সেনাসদস্যসহ বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত কতিপয় ব্যক্তি ভারতে তথ্য পাচারের সাথে জড়িত বলে জানা যায়। উত্তরা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্য দেব প্রসাদ সাহা ২০১৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ১৭ আগস্ট পর্যন্ত বেনাপোল বন্দরের মাইগ্রেশন বিভাগে নিযুক্ত ছিলেন। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি বার বার সীমান্ত পাড়ি দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচারে নিয়োজিত ছিলেন। গত বছরের শেষদিকে দেব প্রসাদ সাহা বেনাপোল বন্দর দিয়ে একাধিকবার ভারতে প্রবেশ করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের পেনড্রাইভ ভারতীয় কর্মকর্তা এস চক্রবর্তী ও পিন্টুর কাছে হস্তান্তর করেন। আটক হওয়া গুপ্তচরদের মোবাইল ফোনের কললিস্ট পরীক্ষা করে ভারতীয় পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে ফোনালাপের তথ্য পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশে র’য়ের গোয়েন্দা তৎপরতা কোনো নতুন বিষয় নয়। সত্য ঘটনাকে ভিত্তি করে লেখা ভারতীয় গোয়েন্দা প্রশিক্ষক অমর ভূষণের ফিকশন গ্রন্থ ‘দ্য জিরো-কস্ট মিশন’-এ বাংলাদেশে র’য়ের তৎপরতার বেশ কিছু দিক উন্মোচিত হয়। সেখানে দেখা যায়, নিউজিল্যান্ডে কর্মরত একজন বাংলাদেশি ডিপ্লোম্যাট কীভাবে র’য়ের পেরোলে কাজ করেন, যিনি দেশে ফেরার পরও অর্থের বিনিময়ে ভারতের পক্ষে কাজ অব্যাহত রাখেন। বাংলাদেশে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার অপতৎরতা নিয়ে বাংলাদেশেও বেশ কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো প্রতিপক্ষের উপর নজরদারি করবে, তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দেশের আইনশৃক্সক্ষলা ও নিরাপত্তা বাহিনীতে কর্মরত ব্যক্তিরা যদি বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলী পাচার করে দেন, তা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি হিসেবে বিবেচিত হয়। এ ধরনের কাজ সুস্পষ্ট রাষ্ট্রদ্রোহ এবং সর্বোচ্চ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। দেব প্রসাদ ও শাহনেওয়াজ শাহীনের মতো নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ বিভিন্ন পেশার আরো লোকের নানা প্রলোভনে এমন রাষ্ট্রদ্রোহী তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত থাকা সম্ভবপর। এরা দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা এবং জাতীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট তথ্যাবলী ভারতীয়দের হাতে তুলে দিতে কাজ করছে। আটক ব্যক্তিদের সাথে আরো যারা জড়িত আছে, তাদের সবাইকে তদন্ত ও বিচারের আওতায় নিয়ে আসা জরুরি।

দীর্ঘদিন ধরে দেশে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্টরা সক্রিয় থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি পদক্ষেপ নিতে খুব একটা দেখা যায় না। ভারত ও পাকিস্তানে পরিস্থিতি ভিন্ন। এ ক্ষেত্রে ভারত অনেক এগিয়ে। কিছুদিন আগেও পাকিস্তানে আটক হওয়া একজন ভারতীয় গুপ্তচর কুলভূষণ যাদবের মৃত্যুদন্ড নিয়ে তোলপাড় দেখা গেছে। ১৯৯০ সালে পাকিস্তানে নাশকতায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া ভারতীয় গোয়েন্দা সদস্য সরবজিৎ সিং পাকিস্তানে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হয়েছিল। বাংলাদেশের রাজনীতি এবং অর্থনীতিতে ভারতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় দেশীয় এজেন্টরা সব সময় সক্রিয় রয়েছে। এনআরসি ও সিএবি আইনের প্রতিবাদে বর্তমানে ভারতজুড়ে উত্তাল অবস্থা দেখা গেলেও এসব আইনের দ্বারা বাংলাদেশ সরাসরি অ্যাফেক্টেড হওয়ার পরও বাংলাদেশে কোনো প্রতিবাদ দেখা যাচ্ছে না। এর পেছনেও ভারতীয় এজেন্টদের ভূমিকা থাকতে পারে বলে অনেকে মনে করেন। দেশের কিছু এনজিও ও সামাজিক সংগঠনও দেশের স্বার্থ বিরোধী কাজে নিয়োজিত থাকার অভিযোগ আছে। ভারতের এনআরসি এবং সিএবি’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ছাত্র সমাজের উপর ভারতীয় পুলিশের হামলার প্রতিবাদে সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিবাদ সমাবেশে আরেকটি সংগঠনের কর্মীরা অতর্কিত হামলা চালায়। হামলায় আহত ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর হামলাকারীরা র’য়ের এজেন্ট বলে দাবি করেন। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচার জাতীয় নিরাপত্তার মারাত্মক হুমকি। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তাই এ জাতীয় তৎপরতা বন্ধ করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
jack ali ২০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৪:৪৪ পিএম says : 0
When a country become a slave of a another country---We the general people will suffer-- because those who are in power they will leave our beloved country and they will go to their second home else where in the world--- so they don't bother the about safety of our country.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন