স্টাফ রিপোর্টার : স্টুডিওর চার দেয়াল থেকে টিভি অনুষ্ঠানকে বের করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে ইত্যাদি দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য তুলে ধরার পাশাপাশি প্রায় দুই যুগ ধরে বিদেশি নাগরিকদের দিয়ে আমাদের লোকজ সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে নিয়মিতভাবে তুলে ধরছে। শুরুর দিকে বিষয়টি ১০/১২ জন বিদেশির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে শতকের ঘরে পৌঁছেছে। আর এদের মাধ্যমে আমাদের সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বের নানা প্রান্তে। আমাদের এখানে অনেকেই যখন মিডিয়াতে ‘বাংলিশ’ উচ্চারণে পরাশ্রয়ী সংস্কৃতির জোয়ারে গা ভাসিয়ে দিচ্ছে, বিভিন্ন মাধ্যমে যখন আমাদের ভাষার বিকৃতি এবং আমাদের লোক সংস্কৃতি ও গ্রামীণ খেলাধুলাগুলোর বিকৃতি চলছে, সে সময় গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব হানিফ সংকেত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিদেশি নাগরিকদের দিয়ে দেশীয় সংস্কৃতির চর্চা করাচ্ছেন। এজন্যে তিনি তাদের নিয়ে যান প্রত্যন্ত অঞ্চলে। বিদেশিদের দিয়ে তাদের ভাষায় অর্থাৎ ‘ইংরেজি’-এর বদলে বাংলা ভাষায় গ্রামের সহজসরল মানুষের চরিত্রে অভিনয় করিয়ে তুলে ধরেন আমাদের লোকজ সংস্কৃতি। এছাড়াও গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী লাঠিলেখা, হা-ডু-ডু, ফুটবল, ডাংগুলি, বাঁশের সাঁকো হাতল ছাড়া পার হওয়া, নদীতে সাঁতার কাটা, দ্রুত গাছে উঠা এসব গ্রামীণ খেলা যেমন বিদেশিদের দিয়ে দেখানো হয়েছে, তেমনি আমাদের সংস্কৃতি, লোক কাহিনী, চলচ্চিত্র ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের উপর বিদেশিদের দিয়ে ইতোপূর্বে নির্মিত হয়েছে বিভিন্ন পর্ব। শুধু এসব বিষয়ই নয়-বিদেশিদের নিয়ে আমাদের সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের বিচিত্র অনুভূতি কাজ করে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে। এদের আচার-আচরণ, সংস্কৃতি সবকিছুই আমাদের চাইতে ভিন্ন। সেই মানুষগুলোকেই যখন গ্রামের সহজ-সরল, সাধারণ মানুষ তাদেরই বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করতে দেখেন তখন তারাও একাত্ম হয়ে যান বিদেশিদের সঙ্গে। ইত্যাদির চরিত্রানুযায়ী বিদেশিদের দিয়ে করানো নানা ঘটনার পরিসমাপ্তি ঘটে চমৎকার একটি মেসেজের মাধ্যমে। বিদেশি হয়েও তাদের জন্য প্রায় অসম্ভব এসব খেলা এবং অভিনয়ে যখন তারা অংশগ্রহণ করেন তখন দর্শকরা যেমন বিস্মিত হন, তেমনি আনন্দও পান, পাশাপাশি অনুপ্রাণীত হন। বিদেশিরা মনে করেন এটি তাদের জীবনে একটি নতুন অভিজ্ঞতা এবং আনন্দ। প্রতিবছর দর্শকরা যেমন এই পর্বটির জন্য অপেক্ষায় থাকেন, তেমনি ঢাকায় বসবাসরত বিদেশিরাও অপেক্ষা করতে থাকেন কখন তাদের ডাক পড়বে ইত্যাদি থেকে। শুধু তাই নয় ঢাকার বিদেশি পাড়ায় ইত্যাদি একটি জনপ্রিয় নাম। বছরের এই সময়টাতে বিদেশিদের ছুটি থাকে বলে তাদের পাওয়া খুবই কঠিন। তারপরও অনেকেই ‘ইত্যাদি’তে অংশগ্রহণ করার জন্য ছুটি ভোগ করেন না। তাদের প্রিয় এই অনুষ্ঠানটিতে অংশগ্রহণ করার জন্য নিজেরাই তৈরি করেন ইত্যাদি বিদেশি টিম-২০১৬। উল্লেখ্য, প্রতি বছরই এ ধরনের টিম গঠিত হয়। প্রতিবছরের মতো যথারীতি এবারও বিদেশিদের নিয়ে ইত্যাদিতে রয়েছে ব্যাপক আয়োজন। এবারের পর্বে অংশগ্রহণ করেছেন পৃথিবীর নানান দেশের ৮২ জন বিদেশি নাগরিক। এদের মধ্যে নৃত্যে অংশগ্রহণ করেছেন ৪০ জন এবং বাকিরা অভিনয়ে। এবারের বিষয় বাল্য বিবাহ। হানিফ সংকেতের নির্দেশনায় অল্প ক’দিনের মহড়ায় বাংলায় বিভিন্ন সংলাপ আয়ত্ব করে এই বিদেশিরা এবারও চমৎকার অভিনয় করেছেন। হানিফ সংকেত বলেন, আসলেই মাত্র কয়েকদিনের পরিচয়ে কয়েক দিনের মেলামেশায় বিদেশিদের সাথে যে আত্মীক বন্ধন হয় তা কখনোই ভোলার নয়। ফ্রান্সের নাগরিক ইগোর বলেন, ইত্যাদির শুটিংয়ে এসে মনে হচ্ছে পিকনিকে এসেছি। ডাচ্ নাগরিক নেইলস বলেন, আমি গত বছর করেছি, এ বছরও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। ফ্রান্সের মাইরিয়াম বলেন-ইত্যাদি টিম খুবই ভালো, অর্গানাইজড। আমি ইত্যাদিকে ভালোবাসি। ডাচ নাগরিক মাইকেল ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় বলেন, আমরা ইত্যাদি পরিবারের সদস্য। কানাডার মোনজা বলেন, অনেক গরম তারপরও হানিফ সংকেতের ইত্যাদির কাজ করতে কোন ক্লান্তি আসে না। হানিফ সংকেতকে ধন্যবাদ। পর্তুগালের পেড্রো বলেন, বাংলাদেশে অবস্থানকালে এটাই আমার কাছে সবচাইতে আনন্দঘন মুহূর্ত, অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা। বিদেশিদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাইলে হানিফ সংকেত বলেনÑ এরা অপেশাদার তবে অনেক পেশাদার শিল্পীরও এদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। বিশেষ করে ওদের সময়জ্ঞান, নিষ্ঠা, একাগ্রতা, কষ্ট সহিষ্ণুতা, আন্তরিকতা দেখে আমি মুগ্ধ। যেহেতু দর্শকরা এই পর্বটি অনেক পছন্দ করেন, তাই আমরাও অনেক যতœ নিয়ে এই পর্বটি করতে চেষ্টা করি। আশাকরি প্রতিবারের মতো এবারও এই পর্বটি দর্শকদের অনেক আনন্দ দেবে। ইত্যাদি প্রচার হবে ঈদের পরদিন রাত ১০:১০ মিনিটে, বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে। ‘ইত্যাদি’ রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। নির্মাণ করেছে ফাগুন অডিও ভিশন, স্পন্সর করেছে কেয়া কস্মেটিকস্ লিমিটেড।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন