ইংল্যান্ড বিশ^কাপে ভরাডুবির পর আমূলে পাল্টে গেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কোচিং স্টাফের চেহারা। মূল কোচের হট সিটে স্টিভ রোডসের জায়গায় রাসেল ডমিঙ্গো, সুনিল জোসির বদলে স্পিন বোলিংয়ের দিকটা দেখছেন নিউজিল্যান্ডের কিংবদন্তি ড্যানিয়েল ভেট্টোরি। থিহান চন্দ্রমোহনের জায়গায় নতুন ফিজিও হিসেবে সাকিব-মাশরাফিরা পেয়েছে জুলিয়ান কালেফাতোকে। আর পেস বোলিং কোচ কিংবদন্তি কোর্টনি ওয়ালশের বদলে কাজ করতে গত জুলাইতেই লাল-সবুজের ডেরায় আস্তানা গেড়েছিলেন শার্ল ল্যাঙ্গাভেল্ট।
এই অল্প দিনেই বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সঙ্গে বেশ মানিয়ে নিয়েছিলেন এই প্রোটিয়া। লক্ষ্য ছিল একটিই- আগামী অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য টি-টোয়েন্টি বিশ^কাপে ভালো করা। তবে হঠাৎ জাতীয় দলে কোচিং করানোর প্রস্তাব পাওয়ায় ল্যাঙ্গাভেল্টকে ছেড়ে দিয়ে বিসিবি পড়েছিল অথৈ পাথারে। ক্ষুদ্র মরম্যাটের বিশ^াকপের আর বাকি মাত্র ১০ মাস। তার আগে আসছে জানুয়ারিতে পাকিস্তান সফর- এই অল্প সময়ে নতুন করে কোচ নিয়োগ দিয়ে তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমানদের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া নিয়েও চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল বিসিবি কর্তাদের কপালে। তবে মনে হচ্ছে খুব শিগগিরই কেটে যাবে এই সঙ্কট। চলতি বঙ্গবন্ধু বিপিএলের মাঝেই নতুন পেস বোলিং কোচ পেতে যাচ্ছে এবাদত হোসেন, আবু জায়েধ রাহিদের মতো উদীয়মান গতি তারকারা।
গতকালের চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে নিজেদের শক্তি পরখ করে নিতে আগের দিন এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে ছেলেদের নিয়ে কাজ করছিলেন কুমিল্লা ওয়ারিয়র্সের কোচ ওটিস গিবস। পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন টিম ডিরেক্টর মিনহাজুল আবেদিন নান্নু। পাশাপাশি দু’জনে মিলে ছক কষছিলেন ম্যাচ জয়েরও। এরই ফাঁকে প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিয়েছিলাম, ‘নতুন কোচ নিয়ে কি ভাবছেন নান্নু ভাই?’। কুমিল্লার ডিরেক্টর ছাড়াও জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক হিসেবেই প্রশ্নটি তাকে করা। উত্তার দিতে এক মুহূর্তও দেরি করেননি সাবেক এই অধিনায়ক, পাশে দাঁড়ানো গিবসনকে দেখিয়ে বললেন ‘এই যে আপানার সামনেই তো কোচ!’ পরক্ষনেই দাঁড়ালেন বাস্তবতার মুখোমুখি। বললেন, ‘এত অল্প সময়ে কোচ খোঁজা সত্যিই কঠিন। তবে আমাদের এটি করতেই হবে। বিশ^কাপের (টি-টোয়েন্টি) আর খুব বেশি দিন বাকি নেই। সামনেই পাকিস্তান সফর। বিপিএলের পরই ক্যাম্পে যাবে ছেলেরা। যা করতে হবে এই বিপিএল শেষেই করতে হবে। এবারের আসরে বিশে^র নামি-দামী সব কোচরা দলগুলোকে গাইড করছে। সেখান থেকেই কাউকে যদি রেখে দেয়া যায়, তবে আমাদের জন্যই ভালো। একদিকে আমাদের ছেলেদের দেখাও আছে তার আর কণ্ডিশন সম্পর্কেও ধারণা হয়ে যাবে এই সময়ে।’
তবে এটি কেবলই তার ইচ্ছা। এখনও সিদ্ধান্ত কিছুই হয়নি বলেও জানালেন দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন রূপে জাতীয় দলের সঙ্গে কাজ করা সাবেক এই অলরাউন্ডার, ‘আমি আমার ইচ্ছার কথা বললাম। সে (গিবসন) কোচ হিসেবে দারুণ। নিজের দেশ কো বটেই, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশকে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ তার ক্যারিয়ার। তাকে কাজে লাগাতে পারলে ছেলেরা উপকৃত হবে বলেই আমার বিশ^াস। আমি আমার প্রস্তাব বোর্ডে জানাবো। বাকিটা প্রেসিডেন্ট আছেন, বাকিদের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেবেন।’
ওটিস গিবসন। ক্রিকেটার হিসেবে যতটা ম্রিয়মান, কোচ হিসেবে নামে-ভারে ঠিক ততটাই সমৃদ্ধ এই ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার। জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন মাত্র ২টি টেস্ট আর ১৫টি ওয়ানডে। খুব বেশি অবদানও রাখতে পারেননি মাত্র ৪ বছরের (১৯৯৫-৯৯) আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে। তবে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ঠিকই ছিলেন উজ্জ্বল। মারকাটারি ব্যাটিং আর আগ্রাসী, বৈচিত্র্যময় গতির কারণে সাফল্য পেয়েছেন প্রতি মৌসুমেই। তাইতো খেলা চালিয়ে গেছেন ২০০৭ সাল পর্যন্ত। এর পরই নিজের নাম বিশ^ ক্রিকেটে পরিচিতি পাবার আশায় নাম লেখান কোচিংয়ে। ধাপে ধাপে সাফলতা দিয়ে গড়তে থাকেন ভিত। সেই ভিতে আজ গিসবন দাঁড়িয়ে সফল সব কোচদের কাতারে।
দুই সিজন দক্ষিণ আফ্রিকান ঘরোয়া ক্রিকেটে সহকারীর দায়িত্ব পালনের পর শুরুটাও হয় এক্কেবারে আঁতুরঘর থেকে। ২০০৭ সালের ২০ তার দায়িত্বেই সেপ্টেম্বর শ্রীলঙ্কা সফর করে ইংল্যান্ড। সেই থেকে একের পর এক সাফ্যলের মাঝে ২০০৯ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে বসে ইংল্যান্ড। তখন দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে দেশের ডাকে সাড়া দিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হেড কোচের হট সিটে বসেন সাবেক এই ক্যারিবিয়ান। সেখানেও দেখান তার অভিজ্ঞতার দাপট। তবে বাংলাদেশে হওয়া ২০১৪ টি-২০ বিশ^কাপে তার দল হারিয়ে বসে মুকুট। একই বছর ঘরের মাটিতে সেই ইংল্যান্ডকে টি-২০ সিরিজে হারালেও খুইয়ে বসে ওয়ানডে সিরিস। তাতে বরখাস্ত হন গিবসন। সেখান থেকে ফের বোলিং কোচের দায়িত্ব পান ইংল্যান্ডের। ভাগ্যের ফেরে তার দ্বিতীয়দফায় পাওয়া দায়িত্বের প্রথম মিশন হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ! ২০১৭ সাল পর্যন্ত কাজ করে এবার পালাবদল করে পেরেন সেই দক্ষিণ আফ্রিকায়, এবার প্রধান কোচের ভূমিকায়। গ্রায়াম স্মিথ দায়িত্ব পাবার পর নতুন পালাবদলে কাটা পড়েন সেই দায়িত্ব থেকে। তবে বসে থানেনি দীর্ঘদেহী কাজ পাগল গিবসন। কুমিল্লার প্রস্তাব পেয়েই ছুটে আসেন বাংলাদেশে। যদি সবকিছু ঠিক থাকে, তবে স্থায়ীভাবেই লাল-সবুজের ডেরাই হতে পারে গিসবনের পরবর্তি ঠিকানা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন