বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শিক্ষাঙ্গন

ক্যাম্পাসে উৎসবমূখর ইফতার আড্ডা

প্রকাশের সময় : ২৭ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ৯:৩৮ পিএম, ২৬ জুন, ২০১৬

জাকারিয়া হাসান
রেহেনা পারভীন ও তানিয়া সুলতানার বাড়ি ঝিনাইদহ। তারা গত বছর ভর্তি হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ বছর রমজানে তাদের ক্লাস পরীক্ষা চলছে। তাই তাদের বাড়িতে যাওয়া হয়নি। তারা এ ইফাতারিকে তাদের বাড়িতে বসে ইফতার করার সঙ্গে তুলনা করতে নারাজ। তবে এ চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে ইফতার করাটা তাদের শিক্ষাজীবনের নতুন একটি জায়গায় দ্বার করিয়েছে। প্রথম প্রথম অনেক কষ্ট হলেও এখন তারা মানিয়ে নিয়েছে। কেননা এমন অভিজ্ঞতা তাদের মতো হাজারও শিক্ষার্থীর।
আষাঢ়ের মেঘলা আকাশ আর ক্ষণে ক্ষণে বৃষ্টির মধ্যেও দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলোর সবুজ ক্যাম্পাসে এই রমজানের প্রতিদিনই বসছে বাহারি স্বাধের ইফতারির মেলা। কোমল ঘাসের সবুজ গালিচায় হাজারও তরুণ-তরুণী ইফতারের মুহূর্তকে সামনে রেখে ঘটিয়ে থাকেন প্রাণের মেলবন্ধন। জাতীয় আর আন্তর্জাতিক ইস্যুতে যেই ক্যাম্পাসগুলো সদাব্যস্ত থাকে মুহুর্মুহু মিছিল আর সেøাগানে, রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে অনেকটা ‘পান থেকে চুন খসলেই’ পরস্পরের ওপর হামলার ঘটনা নৈমিত্তিক, সেই ক্যাম্পাসে রমজানের মাগরিবের আজানকে সামনে রেখে হররোজই নেমে আসে স্বর্গীয় শান্তি ও উৎসবের আমেজ। পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে তৈরি হয় এক শান্তির সমাজ। শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যলয়ে পড়ুয়া হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী বন্ধুরাও মুসলিম বন্ধুদের ইফতারের এই প্রিয় মুহূর্তে শরিক হয়ে অসাম্প্রদায়িকতার অনুপম দৃষ্টান্তও উপহার দিয়ে থাকে।
সূর্যটা পশ্চিম আকাশে হেলে পড়লে শুরু হয় ইফতারির প্রস্তুতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রতিটি হলের সামনে ছোটখাটো ইফতারির দোকান বসে। আসরের পর পর সবাই ইফতারি কিনে আনে। অনেক সময় দেখা যায় রুমের ৬/৭ জন মিলে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা তুলে ইফতার সামগ্রী কিনে আনে। ইফতারির মধ্যে থাকে আলুর চপ, পিয়াজু, ডিমের চপ, জুস, বেগুনি, জিলাপি, শরবত, খেজুর, দৈ, বুন্দিয়া, বড়া এবং নানা রকম ফল-ফলাদি। আগে থেকেই সবাই ইফতারিরর মেনু তৈরি করে রাখে আজকের ইফতারিতে কি খাবে তারা। ইফতারি তৈরির ব্যাপারটায় বেশ আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হয়। পিয়াজ-মরিচ কেটে ছোলাবুট এবং চপ দিয়ে মুড়ি বানানো। শরবত তৈরি করা ইফতারির সময় কতটুকু বাকি আছে বা কখন আজান হবে তার খোঁজ নেয়া, এই বুঝি ইফতারির সময় হয়ে গেছে। তাই হঠাৎ করে সবাই ব্যতিব্যস্ত হয়ে যায়। ইশ, এখনও ইফতারি প্রস্তুত হয়নি। টুপি মাথায় কেউ কেউ ছোটবেলায় মসজিদ ও মাদ্রাসা থেকে মুখস্ত করা দোয়াগুলো বার বার বলতে থাকে। তবে এরমধ্যে এমনও অনেকে থাকে যারা রোজা রাখেনি। কিন্তু তাদের বোঝার কোন উপায় নেই। সবার চোখে মুখে পবিত্রতার ছায়া বিরাজ করে। ইফাতারির এ আমেজের চিত্র পুরো রমজান মাস জুড়েই চলে। নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আলী মারজান, শামস, শুভ ও মিম এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের ছাত্রী সিফাত আরা বাঁধন ও তাসনিমুল জান্নাত হিমি বললেন, ক্যাম্পাসে ইফতার করায় আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক আগের থেকে আরও গাঢ় হচ্ছে। আমরা রোজা থেকে যে আত্মশুদ্ধি লাভ করছি তার একটি হচ্ছে শত্রু-মিত্রু বিভেদ দূর করে এক হয়ে দেশের পক্ষে কাজ করা। প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর বাহিরে টিএসসি, মলচত্বর, হাকিম চত্বর, কার্জনহল, এসএম হল, এফ রহমান হল, জসিমউদ্দীন হল, হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হল, শহীদুল্লাহ হল, মুক্তিযোদ্বা জিয়াউর রহমান হল, বঙ্গবন্ধু হল, শামসুন্নাহার হল, রোকেয়া হল ও কলা ভবনের সামনের সবুজ চত্বরের বটগাছের নিচে প্রতিদিন আছরের পরে ইফতারির একটা রমরমা পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর ইফতারেও এ রকম হয়ে যায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এরশাদুল বারী কর্ণেল, পটুয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই অনুষদের ছাত্র ও সাংবাদিক গোলাম মাওলা, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র ও সাংবাদিক আয়াজ আজাদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ইলিয়াস সরকার, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহ এর সাংবাদিক ও শিক্ষার্থী মো. শাহীন আলম জানান, তাদের বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও ইফতারি ও ক্যাম্পাসের হলগুলোতে উন্নতমানের খাবারের জন্য বিশেষ বরাদ্দ করেছে। এই বরাদ্দের অর্থ দিয়ে হল, মেস, ক্যান্টিন ও হলগুলোর মসজিদে নির্দিষ্ট দিনে ইফতার পরিবেশন করান হচ্ছে। কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপলাইড ফিজিক্স অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্রী নুসরাত জাহান লিজা অর্থনীতি বিভাগ মাস্টার্সের ছাত্রী রুমানা পারভীন রুম্পা এবং আইন বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্রী তানিয়া আফরোজ শান্তা বলেন, পবিত্রতা ও আত্মশুদ্ধি অর্জনের মাসে ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা সবাই ব্যস্ত থাকে কি করে তাদের পুর্ণ্যরে পাল্লাটা ভারী করা যায়। পটুয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ২য় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী নীলিমা ম-ল, দিশা, শোয়েব, হুমায়ুন, সুমি, সিথি, শারমিন বিথী, মুনিয়া, রোহিনা এবং নিয়াজ মোর্শেদ বলেন, পবিপ্রবি ক্যাম্পাসে বন্ধুত্ব আর আড্ডার জন্য এর মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের অবদান অনস্বীকার্য। এর প্রভাব ভালো টের পাওয়া যায় পবিত্র রোজার মাস এলে। ইফতারকে কেন্দ্র করে গোটা ক্যাম্পাস পরিণত হয় বন্ধুত্বের মিলন মেলায়। ক্যাম্পাসের এমন জায়গা থাকে না যেখানে জমে না ইফতার পার্টি। এ সময় পবিপ্রবিতে এলে অবাক হবেন যে কেউ। পুরো ক্যাম্পাসটি যেন ইফতারের জন্য উন্মুক্ত। কোথাও নেই ভিড়, ইফতার সাজানোর ব্যস্ততার উৎসবের আমেজ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ছাত্র আল-আমিন জানান, জাবির ইফতারের প্রধান স্থানগুলোর মধ্যে প্রান্তিক গেট, ট্রান্সপোর্ট এলাকা, ডেইরি গেট, ফয়জুন নেসা হলের মাঠ এছাড়া ছাত্রী হলগুলোর সামনে দেখা যায় জুটি বা বন্ধু-বান্ধবদের গোল হয়ে বসে ইফতারের আয়োজন। ছাত্রজীবনে ইফতার কেমন হয় কেউ কি একবার ভেবেছেন? শিক্ষাজীবনের স্মৃতিময় অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি এই রমজান মাসের ইফতার পার্টি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন