শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

চট্টগ্রামে আলোচিত কিশোর গ্যাং

ফিরে দেখা- ২০১৯

রফিকুল ইসলাম সেলিম : | প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

গেল বছরটিতে চট্টগ্রামে আলোচনার শীর্ষে ছিলো কিশোর অপরাধ। পাড়ায় মহল্লায় হরেক নামে গড়ে উঠা কিশোর গ্যাং খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা, অস্ত্রবাজি, মার দাঙ্গায় জড়িয়েছে। সংঘবদ্ধ অপরাধের পাশাপাশি কিশোরের হাতে খুন, ধর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে বেশ কয়েকটি।
পাড়ার বখাটে, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী এমনকি ইংরেজি মাধ্যমের ছাত্ররাও এই গ্যাংয়ে শামিল হয়েছে। রাজনৈতিক বড়ভাইদের মদদে গড়ে উঠা এবং তাদের ছত্রছায়ায় বেপরোয়া কিশোর গ্যাংয়ের লাগাম টানতে নানা উদ্যোগ নেয় পুলিশ। নগরীর ৩০০ স্পটে ৫৫০ কিশোর গ্রুপের তালিকা করা হয়। তবে অভিযানের মুখে বছরে শেষের দিকে দাপট কিছুটা কমলেও বন্ধ হয়নি কিশোর গ্রুপের অপতৎপরতা।
গত কয়েক বছর ধরে চট্টগ্রামে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে কিশোর অপরাধীরা। একের পর এক খুন, মাদক চোরাচালান, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব ও আধিপত্য বিস্তারে জড়িয়ে পড়ছে তারা। কিশোর অপরাধের বলি হয়েছে অনেকে।

তার মধ্যে আলোচিত ছিলো স্কুলছাত্র জাকির হোসেন জনি হত্যা। গত ২৬ আগস্ট নগরীর এমইএস কলেজ এলাকায় তাকে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে একদল কিশোর। সে নিজেও একটি কিশোর গ্রুপের সদস্য ছিল। দুই কিশোর গ্রুপের দ্ব›েদ্বর জেরে তাকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় নিয়ে যায় তার পরিবার। ঈদের ছুটিতে বেড়াতে এসে সেই পুরনো বিরোধে খুন হয় জনি। এছাড়া নগরীতে কিশোর অপরাধীদের হাতে খুন হয়েছেন আরো ১০ জন।

গত ১৮ই জুলাই পাহাড়তলী থানার দক্ষিণ কাট্টলীতে একটি কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে বিরোধের জেরে খুন হয় এক তরুণ। পুলিশ জানিয়েছে, এই কিশোর গ্যাং চুরি-ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত। খুন হওয়া সদ্য কৈশোর পার করা তরুণসহ গ্যাংয়ের সব সদস্যই বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত।
গত ৬ এপ্রিল নগরীর গোলপাহাড়ে এক স্কুলছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার জেরে কিশোরদের দুই পক্ষের মধ্যে ঝগড়া হয়। এর জেরে ওই এলাকার যুবলীগ ক্যাডার এম এইচ লোকমান রনি নিহত হন বাকলিয়ার সন্ত্রাসী সাইফুল ইসলামের গুলিতে। এর দুই দিন পর পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয় সাইফুল।

৫ এপ্রিল চান্দগাঁও থানার ফরিদের পাড়া এলাকায় চাঁদা চেয়ে না পেয়ে আমজাদ হোসেনের পায়ে ড্রিল করে কিশোর গ্রæপের সদস্যরা। যুবলীগ নামধারী এক বড়ভাইয়ের নেতৃত্বে এলাকায় নানা অপরাধে জড়িত ওই কিশোর গ্রæপ।

১০ মে নগরীর মুরাদপুরে কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে খুন হন মোস্তাক আহমেদ এক ব্যবসায়ী। ছেলের সঙ্গে বখাটে কিশোরদের ঝগড়া মিটাতে গেলে তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত ছিলো ১০ থেকে ১৫ জনের একদল কিশোর। ১৪ মে ডবলমুরিং থানার হাজিপাড়ায় রিক্সা চালক রাজু আহমেদকে ঘুমের মধ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকান্ডে জড়িত ছিলো ১০ থেকে ১২ জনের কিশোর গ্যাং। তাদের বড় ভাই ছগির হোসেন জেল থেকে নির্দেশ দেন মফিজ নামের একজনকে খুন করতে। কিন্তু টার্গেট মিস করে কিশোররা রাজুকে খুন করে।

১৪ এপ্রিল ইয়াবা সেবনের টাকা না পেয়ে বাবা রঞ্জন বড়ুয়াকে ছুরিকাঘাতে খুন করে ছেলে রবিন বড়ুয়া। কোতোয়ালী থানার কাজির দেউড়ীর ব্যাটারি গলিতে এ ঘটনা ঘটে। বাবাকে হত্যাকারী রবিনও কিশোর। ২৫ আগস্ট নগরীর বন্দর থানা এলাকায় নয় বছরের শিশু নিপু আক্তারকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় এক কিশোরকে। রমজান আলী নামে ওই কিশোর নবম শ্রেণির ছাত্র ও শিশুটির আত্মীয়। নগরীতে ছিনতাই, ডাকাতি, অস্ত্রবাজি, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে প্রায় সব অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কিশোরেরা। দিনদুপুরে তারা ছিনতাই করছে। কথায় কথায় মারামারি, অস্ত্রবাজিতে লিপ্ত হচ্ছে। পুলিশ বলছে বাবা-মার অবহেলা আর নৈতিক শিক্ষার অভাব এবং রাজনৈতিক বড়ভাইদের পাল্লায় পড়ে বিপথে যাচ্ছে কিশোরেরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Al amin ১ জানুয়ারি, ২০২০, ৬:৫৮ এএম says : 0
চট্টগ্রামে গলিতে গলিতে নুরানি মাদরাসা চালু করা হলে কিশোরদের অল্পখরচে সঠিক শিক্ষার ব্যাবস্থা হবে। এবং আমার মতে আগামি ১০ বছরে কিশোর অপরাধের সংখ্যা ৩০% এর নিচে চলে আসবে। ইনসাআল্লাহ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন