এতদিনে ঘুম ভাঙল আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের। ঐক্যফ্রন্টের প্রধান এই নেতা জানিয়েছেন, কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিনের জন্য প্রয়োজনে আদালতে লড়বেন। তার এই বক্তব্য শুনে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি এতদিন বেগম জিয়ার মামলায় আদালতে লড়েননি কেন? বেগম জিয়া দীর্ঘ প্রায় দুই বছর ধরে কারাগারে। তার জামিন নিয়ে যা হয়েছে তা দেশবাসী জানে। তিনি কি এতদিন ঘুমিয়ে ছিলেন? তাঁর দল বিএনপির সঙ্গে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছে গণফোরাম। ৫০০ লোকের সমাবেশে বক্তৃতা করতে অভ্যস্ত ড. কামাল হোসেন বিএনপির বদৌলতে এখন লাখ লাখ নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে বক্তৃতা করেন। অথচ তিনি এতদিন বেগম জিয়ার মুক্তির লক্ষ্যে আদালতে দাঁড়ানোর প্রয়োজন বোধ করেননি?
গতকাল ড. কামাল হোসেনের মতিঝিলস্থ চেম্বারে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা বিষয়ে ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক শুরু হয়। বৈঠক শেষে চেম্বারে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন ড. কামাল হোসেন। এ সময় খালেদা জিয়ার জামিনের জন্য মামলা লড়তে তিনি আদালতে যাবেন কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন বলেন, যদি প্রয়োজন হয়, অবশ্যই আমি উদ্যোগ গ্রহণ করব। এটা তো সংবাদ মাধ্যমে বলার কথা না। অবশ্যই পেশাগত কারণে আমি কোর্টে যাব। তিনি আরো বলেন, আমরা স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করতে চাই যে, খালেদা জিয়ার কোনো অনভিপ্রেত দুর্ঘটনা হলে তার সমুদয় দায়দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।
সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, অতি স¤প্রতি মিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্যের আলোকে আমরা অবগত হয়েছি যে, তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। তার স্বাস্থ্যের গুরুতর অবনতিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে আমরা গভীর উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগ প্রকাশ করছি। তিনি আরো বলেন, বিচারকরা ম‚ল একটা জিনিসকে মিস করেছেন। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে যে মেডিক্যাল রিপোর্ট দেয়া হয়েছে, সেটা অসম্প‚র্ণ রিপোর্ট। কারণ, এই রিপোর্ট তৈরিতে কোনো মানসিক বিশেজ্ঞষ ছিল না। খালেদা জিয়ার ম‚ল চিকিৎসা হচ্ছে ফিজিওথেরাপি। এ বিষয়ে কোনো বিশেষজ্ঞ ছিলেন না। মেডিক্যাল বোর্ডের রিপোর্টে তার যতগুলো রোগের কথা বলা হয়েছে, সেগুলোর কোনো রিপোর্টও আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনের সঙ্গে দেয়া হয়নি। এ রকম অসম্প‚র্ণ রিপোর্ট দেখে মামলার কাজ ডিসমিস করে বিচারকরা ভুল কাজ করেছেন। মানবিক কারণে খালেদা জিয়ার জামিন পাওয়াতে কোনো বাধা নেই।
খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে টালবাহানায় নিন্দা জানিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, বেগম জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণসহ অবিলম্বে তার মুক্তির দিতে হবে। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন ড. কামাল। এর তীব্র নিন্দা জানান তিনি। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় যে রিপোর্ট দিয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য এখন আন্দোলন ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নাগরিক ঐক্যের আহŸায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরাম নেতা অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিকল্প ধারার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারী, গণফোরামের অ্যাডভোকেট মহসীন রশীদ, মোস্তাক আহমেদ, শফিউদ্দিন স্বপন, শহীদ উল্লা কায়সার, মমিনুল হক, ডা. জাহিদ হোসেন, শাহ আহমেদ বাদল প্রমুখ।
দু’দিন আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন তার স্বজনরা। তখন বেগম জিয়ার বোন বেগম সেলিমা ইসলাম হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়া হাত সোজা করতে পারছেন না। তার হাত বাঁকা হয়ে গেছে। হাতের আঙুল বাঁকা হয়ে গেছে, খুবই খারাপ অবস্থা এবং দুই হাঁটু অপারেশন করা হয়েছে। হাঁটুতেও ব্যথা, হাঁটু ফুলে গেছে- তিনি পা ফেলতে পারছেন না। এমতাবস্থায় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঠিক চিকিৎসা না হলে তিনি বাঁচবেন কিভাবে এমন প্রশ্নও তোলেন সেলিমা ইসলাম।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন