পাকিস্তানের বেসামরিক ও সামরিক নেতারা বৃহস্পতিবার আবারো ভারত অধিকৃত কাশ্মীরের জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন। তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত কাশ্মীরিদের প্রতি সুদৃঢ় রাজনৈতিক, ক‚টনৈতিক ও নৈতিক সমর্থন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন পাকিস্তানি নেতারা। ইসলামাবাদে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সভাপতিত্বে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এই ঘোষণা দেয়া হয়। বৈঠকে সেনাবাহিনী প্রধান কমর জাভেদ বাজওয়া, এসএপিএম ড. মুঈদ ইউসুফ, আইএসআই ডিজি লে. জেনারেল ফাইজ হামিদ, পররাষ্ট্র সচিব সোহাইল মেহমুদ ও অন্যান্য বেসামরিক ও সামরিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তারা ভারত অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন এবং ৫ জানুয়ারি যথাযোগ্য মর্যাদায় কাশ্মীর সংহতি দিবস পালন করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেন। জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিলে কাশ্মীর নিয়ে আলোচনাকেস্বাগত জানিয়ে একে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবনের স্বীকৃতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা অধিকৃত ভ‚খÐের ৮০ লাখ মানুষকে ১৬৫ দিনের বেশি অবরুদ্ধ করে রাখার জন্য ভারতের নিন্দা করা হয়। কাশ্মীরি জনগণের মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য সেখানে ভারতীয় দখলদার বাহিনীর ৯ লাখ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। গত বছর ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে ভারতের বিজেপি নেতৃত্বাধিন সরকার। সাউথ এশিয়ান মনিটর এ খবর জানায়। অপর দিকে ডয়েচে ভেলের খবরে বলা হয়, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বাসিন্দারা কি পাকিস্তানের সঙ্গে থাকতে চান, নাকি স্বাধীনতা চান, সে ব্যাপারে তাদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে দেওয়া উচিত। বুধবার একই প্রশ্নে কাশ্মীরে গণভোট দিতেও পাকিস্তান প্রস্তুত বলে জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন ইমরান খান। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের মধ্য দিয়ে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার ও বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয় বিজেপি নেতৃত্বাধীন দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। তারপর সেখানে বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করে কর্তৃপক্ষ। ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের প্রসঙ্গে ইমরান খান বলেন, ‘ভারতে এখন আরএসএস’র (রাষ্ট্রীয় স্বেচ্ছাসেবক সংঘ) হিন্দুত্ববাদী ভাবাদর্শের জয়জয়কার। আরএসএস জার্মানির নাৎসিদের দ্বারা অনুপ্রাণিত। আর নাৎসিদের জন্ম হয়েছিল সংখ্যালঘুদের প্রতি ঘৃণা থেকে। তেমনিভাবে আরএসএস মতাদর্শও মুসলমানসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের প্রতি ঘৃণার ওপর দাঁড়িয়ে আছে।’ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা ভারত ও তার প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য একটি ট্র্যাজেডি যে, ভারত এখন আরএসএস দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।’ পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে মানবাধিকার পরিস্থিতি ভালো না থাকার অভিযোগ তোলা হলে ইমরান খান বিশ্বের যে কোনও দেশের নাগরিককে প্রথমে সেখানে যাওয়ার আহŸান জানান। এরপর ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে গিয়ে দুই অঞ্চলের তুলনা করে নিজেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। ইমরান খান বলেন, হংকংয়ে বিক্ষোভের চেয়ে কাশ্মীর ট্র্যাজেডি অনেক বড় ঘটনা হলেও বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে তা বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য যে, পশ্চিমাদের কাছে বাণিজ্যিক স্বার্থ বেশি গুরুত্বপ‚র্ণ। ভারত একটি বড় বাজার। তাই কাশ্মীরের প্রায় ৮০ লাখ মানুষ ও ভারতে সংখ্যালঘুদের প্রতি কী ঘটছে, তা নিয়ে পশ্চিমাদের বেশি প্রতিক্রিয়াশীল হতে দেখা যায় না।’ এসএএম, ডয়েচে ভেলে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন