শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ভোট পড়লো ৫ শতাংশ ইভিএমে হলো ২২

বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগ

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০০ এএম

‘ভোট পড়েছে মাত্র ৫ শতাংশ। কিন্তু দেখানো হয়েছে ২২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। বাকি ভোট ইভিএমের মাধ্যমে ডিজিটাল জালিয়াতি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা নির্বাচন কমিশন (ইসি) কর্মকর্তাদের সহায়তায় ইভিএম মেশিনের পাসওয়ার্ড নিয়ে প্রতি বুথে ৭০ থেকে ৮০টি করে জাল ভোট দেন। এভাবে ২২ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন বলে দেখানো হয়েছে। এটি মধ্যরাতের নির্বাচনের মতো আরেকটি কৌশল। ইভিএম এখন মহাপ্রতারণার নতুন পদ্ধতি। সরকার নির্বাচন কমিশনকে ভোটাধিকার হরণের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে’।

সদ্য অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের উপনির্বাচনে উল্লেখিত অভিযোগ করেছেন ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপি প্রার্থী দলের চট্টগ্রাম মহানগর সিনিয়র সহ-সভাপতি ও দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান। গতকাল (শনিবার) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে দলীয় পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে ‘জালিয়াতির চিত্র’ তুলে ধরে সুফিয়ান জানান, চট্টগ্রামের উপনির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখল, বিভিন্ন অনিয়ম এবং ইভিএমে কারচুপি জাতির সামনে উপস্থাপন করছেন তিনি।

গত ১৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত উপনির্বাচন প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ২২ শতাংশের মধ্যে আসলে ভোট পড়েছে ৫ শতাংশ। ১০ শতাংশ ভোট দিয়েছেন প্রিসাইডিং অফিসাররা। বাকি ভোট দিয়েছে ভোটকেন্দ্র দখল করে পাসওয়ার্ড নিয়ে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা। ভোটকেন্দ্র দখলে নিয়ে ইভিএমের পাসওয়ার্ড নেয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে ধরে আবু সুফিয়ান জানান, ‘নগরীর ৭নং পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ডের হামজারবাগ রহমানিয়া স্কুল ১৪৮নং কেন্দ্রে বেলা সাড়ে ১২টায় ২নং কক্ষে কয়েকজন বহিরাগত সন্ত্রাসী প্রবেশ করেন। তারা নির্বাচন কমিশনের আইটি বিশেষজ্ঞ ও প্রিসাইডিং অফিসার ছোটন চৌধুরীকে নিয়েই সেখানে যান।
তার মোবাইল থেকে নির্বাচন কমিশনের কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করে ডিভাইস নম্বর দিয়ে কোড অথবা পাসওয়ার্ড চাইলে +৮৫৮৪৭৭৬৭+ নম্বরটি তখন দেয়া হয়। এ সময় তিনি বলতে থাকেন, ১০ শতাংশ ম্যাচিং কোড দিয়ে তাড়াতাড়ি ভোট নিয়ে নেন। তখন অন্যজনের আঙুলের ছাপ দিয়ে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। অবৈধভাবে শুরু করা সেসব ভোটার নম্বর- ৪২২, ৫০২, ৪৯৯ ও ৫৮০। অবৈধ এ ইভিএমের ম্যাচিং ভোটের মহোৎসবে তারা প্রবাসী ও মৃত ব্যক্তিদের ভোটও প্রদান করেন।

বিএনপি প্রার্থী সুফিয়ান বলেন, উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রশাসন ও দলীয় সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে ইভিএমের মাধ্যমে ডিজিটাল জালিয়াতি করে জনগণের বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে। এ নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে, ইভিএমের মাধ্যমে ভোট ডাকাতি করা যায়। এহেন ডিজিটাল ডাকাতির পরও অভিযোগ করার সুযোগ নেই। একজন ভোটার কোথায় ভোট দিলেন তা নিজে জানারও সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, নির্বাচনের আগের রাতে বিভিন্ন উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ও সরকার দলীয় নেতারা সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে কেন্দ্র দখল করেন। সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেও কেন্দ্র দখল করা হয়। ভোটগ্রহণ শুরুর কিছুক্ষণ পরেই পুলিশের উপস্থিতিতে নৌকার লোকজন ইভিএমের গোপন বুথে অবস্থান নেন। ভোটাররা ফিঙ্গার প্রিন্ট দেয়ার পরই ইভিএমের ব্যালট ইউনিটে নৌকা সমর্থকরা ভোট দিয়ে দেন। ভোটগ্রহণের সময়ই অনিয়মের বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামানকে অভিযোগ করা হলে তিনি নীরব থাকেন। এভাবে প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন পূর্ব নির্ধারিত ফলাফল ঘোষণা করেন।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনেও চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনে বিএনপি প্রার্থী ছিলেন সুফিয়ান। সংবাদ সম্মেলনে সেই নির্বাচন এবং ১৩ জানুয়ারির উপনির্বাচনে তার প্রাপ্ত ভোটের তারতম্য তুলে ধরে একে অবিশ্বাস্য এবং জালিয়াতির উদাহরণ হিসেবে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, একবছর আগে অনুষ্ঠিত ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষের ভোট প্রায় ৬০ হাজার। অথচ এবার উপনির্বাচনে ইভিএমে জালিয়াতির মাধ্যমে আমার ভোট দেখানো হয়েছে মাত্র ১৭ হাজার।

এ প্রসঙ্গে সুফিয়ান জানান, একাদশ সংসদ নির্বাচনে বোয়ালখালীর পশ্চিম কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি কেন্দ্রে তিনি ভোট পান ৭৩৬। উপনির্বাচনে পেয়েছেন ১১ ভোট। কধুরখীল পাঠানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আগে পান ৮৫৭, এবার পেয়েছেন ৪২। খিতাপচর ইসলামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আগে ৫৫৬, এবার ৫ ভোট পেয়েছেন। বেঙ্গুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আগে ৫৫৩ এবার মাত্র ৮ ভোট পেয়েছেন। ১৫ টি কেন্দ্রে ধানের শীষ প্রতীকের প্রাপ্ত ভোট ৯১টি। তিনি বলেন, ১৫টি কেন্দ্রে বুথ ছিল ৭৬টি এবং ধানের শীষের পোলিং এজেন্ট ছিল ৭৬ জন। এতে দেখা যায় পোলিং এজেন্ট বাদ দিয়ে প্রতিটি কেন্দ্রে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট পড়েছে মাত্র একটি।

ঘোষিত ফলাফল বাতিল করে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়ে বিএনপি নেতৃবৃন্দ বলেন, জনগণের ট্যাক্সের টাকা খরচ করে সরকার ও নির্বাচন কমিশন তামাশা করেছে। তামাশার নির্বাচন জনগণ মেনে নেয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপি সদস্য সচিব মোস্তাক আহমদ খান, কেন্দ্রীয় নেতা মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, এস এম মামুন মিয়া, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, ইদ্রিস আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Hassan Khan ১৯ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৫০ এএম says : 0
৫ শতাংশ ভোটকে ২২ শতাংশ করাও জাতির... স্বপ্ন ছিলো
Total Reply(0)
শামা ওবায়েদ ১৯ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৫১ এএম says : 0
অবৈধ সরকার নিপাত যাক গনতন্ত্র মুক্তি পাক।
Total Reply(0)
K.M. Mashud Saad ১৯ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৫১ এএম says : 1
আপনাদের কে নির্বাচনে যাইতে বলে কে? যানেন না এমনি হবে ?
Total Reply(0)
মোঃ সৈয়দুজজামান জর্জ ১৯ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৫২ এএম says : 0
যেখানে ভোটাধিকার তার ভোট প্রয়োগে বাধাগ্রস্ত হয় সেখানে ইবলিস ভোটিং সিস্টেম এর মাধ্যমে মহাপ্রতারণা স্বাবলম্বী হয়।
Total Reply(0)
Zahid Hossain ১৯ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৫২ এএম says : 0
সুন্দর একটা প্রতারনা!!
Total Reply(0)
মোহাম্মাদ সালাহ্ উদ্দিন ১৯ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:৫২ এএম says : 0
রাড়ি ডিজিটাল চুরি করায় চোরকে চোর বলাযাবেনা
Total Reply(0)
HALlM MlAH ১৯ জানুয়ারি, ২০২০, ৬:৫৭ পিএম says : 0
মানুষ সবাইকে খারাপ হতে হয় না। ১৮ কোটিতে যদি সরকার ১ জন হয়। তাহলে নির্বাচনেেে কমিসনার যদি একাই শয়তান বা ফেরাউনের চেয়ে খারাপ হয় তাহলে তাদের কাছে তগো কথা মানার মতো অনেক কাফের হয়েযায়
Total Reply(0)
HALlM MlAH ১৯ জানুয়ারি, ২০২০, ৬:৫৮ পিএম says : 0
মানুষ সবাইকে খারাপ হতে হয় না। ১৮ কোটিতে যদি সরকার ১ জন হয়। তাহলে নির্বাচনেেে কমিসনার যদি একাই শয়তান বা ফেরাউনের চেয়ে খারাপ হয় তাহলে তাদের কাছে তগো কথা মানার মতো অনেক কাফের হয়েযায়
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন