শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দেশের কল্যাণে কাজ করতে হবে

কুবির সমাবর্তনে প্রেসিডেন্ট

সাদিক মামুন ও মেহেদী হাসান কুমিল্লা থেকে | প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্ট ও চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, বিশ্বায়নের এ যুগে টিকে থাকতে হলে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ নিজের মধ্যে জাগিয়ে তুলতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষাঙ্গন টাকা রোজগারের জায়গা নয়, লোভ লালসা মোহ ত্যাগ করে এখান থেকে প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করতে পারলে একদিন তোমরাই জাতিকে সঠিক পথে এগিয়ে নেবার কান্ডারি হয়ে উঠবে। তোমাদেরকে সকল অন্যায়, অনৈতিক কর্মকান্ড রুখে দিতে হবে। আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের সকল কল্যাণে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।
গতকাল সোমবার বিকেলে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠে আয়োজিত প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রেসিডেন্ট ও চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ তার বক্তৃতায় কুমিল্লাকে ইতিহাস ঐতিহ্যের অগ্রসরমান জেলা উল্লেখ করে বলেন, এ কুমিল্লায় অনেক জ্ঞানী, গুণী মানুষের জন্ম হয়েছে। অনেক বরেণ্য ব্যক্তির পা পড়েছে কুমিল্লায়। ঐতিহাসিক মসজিদ, দিঘী, প্রত্মতত্ত¡ সম্পদে ভরপুর এ কুমিল্লা। মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতিবিজড়িত স্থান রয়েছে এখানে। এ অঞ্চলের মানুষ কখনো শিক্ষা-দীক্ষায় পিছিয়ে থাকতে পারে না।
শিক্ষায় মেয়েরা এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৪টি স্বর্ণপদক প্রাপ্তের মধ্যে ১১জনই মেয়ে। ছেলেদেরকে আরও মনোযোগী হতে হবে। মানুষের সময়ের চাহিদা ও জাতির আশা আকাক্সক্ষার নিরিখে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় গৌরবের সাথে সামনে দিকে এগিয়ে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এপর্যন্ত যেসব শিক্ষার্থীরা ডিগ্রি অর্জন করেছে সেই অর্জনকে দেশের কল্যাণে, মানবতার কাজে লাগাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়কে মানবিক মূল্যবোধ ও মুক্তচিন্তার পীঠস্থান হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে ভ‚মিকা রাখতে হবে।
ইয়াবাসহ নানারকম মাদকের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে প্রেসিডেন্ট বলেন, ইয়াবা, ফেন্সিডিল, হেরোইন, মদ, গাজা, বিয়ারসহ নানা রকম মাদক এখন সমাজের আনাচে-কানাচেসহ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়েও ঠাঁই পেয়েছে। এসব আসার জন্য দেশের অন্যান্য জেলাতেও যেমন রুট রয়েছে, তেমনি কুমিল্লাতেও রয়েছে। আমি শিক্ষার্থীদের বলবো, তোমরা আমাদের আশা আকাক্সক্ষা। তোমরা জাতির ভরসা। এসবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও।
প্রতিষ্ঠার চৌদ্দ বছর পর প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠান ঘিরে চারিদিকের সাজ সাজ রবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাল মাটির ক্যাম্পাস বর্ণিল হয়ে উঠে। সমাবর্তন উপলক্ষে নিবন্ধিত শিক্ষার্থীরা বেলা সাড়ে ১২টা থেকে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় অনুষ্ঠানস্থলে আসতে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে কালো গাউন আর ক্যাপ পরে আসা গ্র্যাজুয়েটদের উচ্ছ¡সিত উপস্থিতি সমাবর্তন অনুষ্ঠানকে আকর্ষণীয় করে তুলে। বেলা আড়াইটার মধ্যে আমন্ত্রিত অতিথিরা সমাবর্তনস্থলে আসন গ্রহণ করেন। এরপর বেলা তিনটায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্যদিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। বিকাল সোয়া তিনটায় প্রেসিডেন্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হোন। জাতীয় সঙ্গীত ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতার পর তিনি সমাবর্তন উদ্বোধন করেন। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনে আড়াই হাজারের বেশি গ্র্যাজুয়েট অংশ নেয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ।
সমাবর্তন বক্তা অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বঙ্গবন্ধুর কারণে আমরা এ দেশ পেয়েছি। আর তাই সবাইকে সবসময় তাকে মনে-প্রাণে ধারণ করতে হবে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী অনেক টাকার বাজেট দিয়েছেন। ভবিষ্যতে এখানে আরও বরাদ্দ দেয়া হবে। দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে হলে দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করতে হবে।


স্বাগত বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী। অনুষ্ঠানে কুমিল্লার সংসদ সদস্যদের মধ্যে অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, মেজর জেনারেল অব. সুবিদ আলী ভুইয়া, আকম বাহাউদ্দিন বাহার, মুজিবুল হক, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য আনজুম সুলতানা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত প্রতি শিক্ষাবর্ষে সর্বোচ্চ ফল অর্জনকারী স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের মোট ১৩জন শিক্ষার্থীর হাতে প্রেসিডেন্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ ১৪টি প্রেসিডেন্ট স্বর্ণপদক পদক তুলে দেন। স্বর্ণপদকপ্রাপ্তরা হলেন- অর্থনীতি বিভাগের মো. মাসুদ রানা, মোসাম্মত নয়ন তারা, গণিত বিভাগের খাদিজা বেগম, পারভিন আক্তার, মাহিনুর আক্তার, আইসিটি বিভাগের আমেনা বেগম, মোহাম্মদ কামরুল হাসান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সানজিদা হক, মার্কেটিং বিভাগের নাসরিন আক্তার ঝুমুর, এআইএস বিভাগের রাবেয়া জামান, ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, পরিসংখ্যান বিভাগের উম্মুল খায়ের সুমি এবং ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের রিপা আক্তার। এছাড়াও সমাবর্তনে অনুষদ ভেদে শ্রেষ্ঠ ফলাফলের জন্য বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা, সামাজিক বিজ্ঞান, কলা ও মানবিক এবং প্রকৌশল অনুষদের ৫২জন শিক্ষার্থীকে ডিনস পদক দেয়া হয়। প্রেসিডেন্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আব্দুল হামিদের বক্তব্যের পরই সমাবর্তনের প্রথম পর্ব শেষ হয়। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক পর্বে মঞ্চ মাতিয়ে তুলেন দেশবরেণ্য কন্ঠশিল্পী জেমস ও তার ব্যান্ডদল নগর বাউল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন