বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেশের ২২তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। এর আগে তিনি ছাত্র রাজনীতি, আইন পেশা এবং বিচারকের দায়িত্ব ছাড়াও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া একসময় সাংবাদিকতা পেশাতেও যুক্ত ছিলেন।
সোমবার (১৩) নির্বাচন ভবনে এসব তথ্য জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। জানা গেছে, বিচার বিভাগে যোগ দেওয়ার আগে ১৯৮০ থেকে দুই বছর দৈনিক বাংলার বাণীতে সাংবাদিকতা করেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। এর আগে তিনি পাবনা প্রেস ক্লাব ও অন্নদা গোবিন্দ পাবলিক লাইব্রেরিতেও সদস্য ছিলেন।
সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর পরিচিতি : ১৯৪৯ সালে পাবনা শহরের জুবিলি ট্যাঙ্ক পাড়ায় (শিবরামপুর) জন্মগ্রহণ করেন মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। শহরের পূর্বতন গান্ধী বালিকা বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে রাধানগর মজুমদার অ্যাকাডেমিতে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৬৬ সালে সেখান থেকে এসএসসি পাসের পর পাবনার এডওয়ার্ড কলেজে ভর্তি হন। তার রাজনীতির হাতেখড়ি সেখান থেকেই।
১৯৬৮ সালে এডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি ও ১৯৭১ সালে (অনুষ্ঠিত ১৯৭২ সালে) বিএসসি পাস করেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৪ সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর এবং পাবনা শহীদ অ্যাডভোকেট আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে ১৯৭৫ সালে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন।
মুক্তিযুদ্ধ ও কারাবরণ : ১৯৬৬ সালে কলেজ জীবনে প্রবেশের আগে পাবনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর এডওয়ার্ড কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক, অবিভক্ত পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও ছয় বছর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের পদে দায়িত্ব পালন করেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। এসময় মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন তিনি। ছাত্রলীগের সক্রিয় কাজের ধারাবাহিকতায় ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পান। ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকেও গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। কারামুক্তির পর পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পান তিনি।
আইন পেশা ও দুদক কর্মকর্তা : পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ছিলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) পরীক্ষা দিয়ে বিচারক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে পরপর দুইবার বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন তিনি।
বিচারালয়ে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন শেষে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে ২০০৬ সালে অবসরে যান মো. সাহাবুদ্দিন। এরমধ্যে শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান পদেও ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয়ের নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তখনকার বিচারক সাহাবুদ্দিন। বিচারিক জীবনের ইতি টানার পর আবারও আইন পেশায় ফেরেন তিনি।
২০০৮ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী থাকার মধ্যেই তাকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব দেয় সরকার। ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি সেই দায়িত্ব পালন করেন।
অন্যান্য : ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পরপরই আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা হয়। পরবর্তীতে ক্ষমতায় এসে সে সময়ের ‘হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের’ মতো ঘটনার তদন্ত কমিশন গঠন করে আওয়ামী লীগ। ওই কমিশনের প্রধান ছিলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিলে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ব্যক্তিগত জীবনে এক ছেলের বাবা। তার স্ত্রী রেবেকা সুলতানা যুগ্ম-সচিব ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন