সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদ প্রেসিডেন্ট। আগামী ২৩ এপ্রিল শেষ হচ্ছে প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের মেয়াদকাল। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা হচ্ছে ২৩ জানুয়ারি থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন একজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে হবে। সংসদ সদস্যদের ভোটে এই নির্বাচন হলেও এ নিয়ে দেশের ২২তম প্রেসিডেন্ট কে হচ্ছেন তা নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা। পর্দার আড়ালে দেন-দরবারও চলছে। নির্বাচন কমিশন এখনো তফসিল ঘোষণা না করলেও ফেব্রুয়ারি মাসেই রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লক্ষ্যে এ মাসেই তফসিল ঘোষণা করা হবে।
সংবিধানে পরপর তৃতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করার সুযোগ না থাকায় বাংলাদেশের ২১তম প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ বঙ্গভবন থেকে বিদায় নেবেন। তাহলে ২২তম প্রেসিডেন্ট হয়ে কে আসছেন বঙ্গভবনে? এ নিয়ে মানুষের মধ্যে কৌতূহলের শেষ নেই। সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী সর্বোময় ক্ষমতার অধিকারী। প্রেসিডেন্টের সাংবিধানিক ক্ষমতা সামান্য হলেও সামনে জাতীয় নির্বাচনের শিডিউল থাকায় এবার প্রেসিডেন্ট হয়ে বঙ্গভবনে কে আসছেন তা খুই গুরুত্বপূর্ণ। সামনের নির্বাচন কোন সরকারের অধীনে হবে সে বিতর্কের বঙ্গভবনের বাসিন্দাকে প্রধানমন্ত্রী তথা আওয়ামী লীগের সভাপতির ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে প্রধান্য দিতে হবে। কারণ আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ করতে দেশি-বিদেশি প্রবল চাপ রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এবং জাতিসংঘ চায় নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। ফলে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদের মতো ‘বেপরোয়া’ ব্যক্তিকে এবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রেসিডেন্ট করবে না এটা নিশ্চিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত বাধ্যগত অনুগত ব্যক্তিকেই এবার প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত করার সম্ভাবনা বেশি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে শেখ হাসিনার সব ধরনের পরামর্শ অনুযায়ী আবদুল হামিদের মতোই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে থেকে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন তেমন মানুষ খোঁজা হচ্ছে।
গত বুধবার রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে অধস্তন আদালতের বিচারকদের এক কর্মশালায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহম্মাদ খান বলেন, প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষের দুই মাস আগেই সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশনও সে অনুযায়ী যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ফেব্রুয়ারি মাসেই হবে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। তিনি বলেছেন, নির্ধারিত সময়েই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। যেহেতু তিনি (বর্তমান প্রেসিডেন্ট) দুই টার্ম থেকেছেন, সংবিধান অনুসারে তিনি আর থাকতে পারবেন না।
কে হচ্ছেন বাংলাদেশের নতুন প্রেসিডেন্ট এ নিয়ে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে নানা রকম গুঞ্জন শুরু হয়েছে। আসছে নানা মত। রাজনীতিক, অধ্যাপক, এনজিও ব্যক্তিত্ব, সাবেক আমলা না সাবেক বিচাপতিদের মধ্য থেকে দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বেছে নেয়া হবে তা নিয়ে পর্দার অন্তরালে আলোচনা চলছে। রাজনীতির অন্দরমহলেও এই পদের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তির নাম আলোচিত হচ্ছে। তবে নানা রকম গুঞ্জন যা-ই থাকুক না কেন, এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বঙ্গভবনের পরবর্তী শাসনকর্তা কে হবেনÑ দিন শেষে ঠিক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যেহেতু প্রেসিডেন্ট নির্বাচন; সেই প্রেসিডেন্ট যেন বর্তমান প্রেসিডেন্টের মতো একান্ত অনুগত ও বাধ্যগত হন এবং বিদেশি চাপ মোকাবিলা করে দেশের সকল রাজনীতিক দলের আস্থা অর্জন করতে পারেন সেই ধরনের ব্যক্তিকেও খুঁজছে সরকারি দল।
সুত্র জানায়, প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের পর রাষ্ট্রের ২২তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেশ কয়েকজনের নাম আলোচিত হচ্ছে। এই আলোচনা যেমন গণমাধ্যমে ‘খবর’ হিসেবে প্রকাশ করা হচ্ছে তেমনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বিস্তর আলোচনা-বিতর্ক হচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরেও এ নিয়ে আলোচনা চলছে। পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দলের মনোনয়ন পেতে পারেন এমন যাদের নাম আলোচনায় রয়েছে তারা হচ্ছেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমীন চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মূখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব হোসেন। এ ছাড়াও আরো কয়েকজনের নাম পরবর্তী প্রেসিডেন্ট পদের জন্য আলোচনায় রয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা হচ্ছে।
সংবিধানের বিধান অনুযায়ী বর্তমান প্রেসিডেন্টের মেয়াদ ২৩ এপ্রিল শেষ হওয়ার আগেই ৬০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে হবে। ২৩ জানুয়ারি থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন একজন প্রেসিডেন্ট নিয়োগ করতে হবে। আর এ কারণে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাক-প্রস্তুতি শুরু করেছে সরকারি দল।
চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে জানা গেছে। নির্বাচনের অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম শুরু করেছে জানিয়ে কমিশনের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা গতকাল মঙ্গলবার ইনকিলাবকে বলেন, এ বিষয়ে আগামী সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশন সভায় বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে। ১৯৯১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা করবে কমিশন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে সংবিধানের ৫০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘একজন প্রেসিডেন্ট কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পাঁচ বছর মেয়াদে দায়িত্ব পালন করবেন।’ সংবিধানের ৫০(৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘একাধিক্রমে হোক বা না হোক, দুই মেয়াদের অধিক প্রেসিডেন্ট পদে কোনো ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না।’ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পর্কে সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রেসিডেন্ট পদের মেয়াদ অবসানের কারণে উক্ত পদ শূন্য হইলে অথবা মেয়াদ শেষ হইলে মেয়াদ সমাপ্তির তারিখের পূর্ববর্তী ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে শূন্যপদ পূরণের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।
১৯৯১ সালের ৬ আগস্ট সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রেসিডেন্টসিয়াল পদ্ধতি থেকে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। এর ফলে প্রেসিডেন্ট কার্যত আলঙ্কারিক পদ হয়ে যায়। সাবেক প্রেসিডেন্ট বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের ভাষায় প্রেসিডেন্টের সাংবিধানিক ক্ষমতা কেবল ‘কবর জিয়ারত’ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ বলা হয়। কিন্তু ১৯৯৬ সালের ২০ মে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আবদুর রহমান বিশ্বাস সেই স্বল্প ক্ষমতা নিয়েই ‘আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিমের ক্ষমতা দখলের ক্যু’ ঠেকিয়ে দিয়েছেন। আবার আন্দোলনের মুখে এইচ এম এরশাদ পদত্যাগ করার পর ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর থেকে ১৯৯১ সালের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশের অস্থায়ী প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করা বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদকে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর পুনরায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে। সে বছরের ৯ অক্টোবর থেকে ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ ওই সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনেক অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছেন। ২০০১ সালে নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সভাপতি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সরকার গঠনের আহ্বান না জানিয়ে পুনরায় নির্বাচনের আয়োজনের অনুরোধ করেন। কিন্তু ওই অনুরোধ উপেক্ষা করে সাহাবুদ্দিন আহমেদ বিএনপির নেত্রীকে বঙ্গভবনে ডেকে সরকার গঠনের আহ্বান জানান। ফলে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যায় এবং সাহাবুদ্দিন আহমেদকে বেঈমান হিসেবে অবিহিত করেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাহাবুদ্দিনের মতো ‘অনুগতহীন-দলনিরপেক্ষ’ ব্যক্তিকে এবার প্রেসিডেন্ট করে আওয়ামী লীগ বিপদে পড়ার ঝুঁকি নেবে না। কারণ ২০১৪ ও ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের পর দেশি-বিদেশি সকল সংস্থা ও শক্তিই চাইছে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশে জনগণের ভোটের অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এমনকি জাতিসংঘ চায় বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। এ লক্ষ্যে ঢাকায় কর্মরত মার্কিন রাষ্ট্রদূতসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা বিভিন্ন দলের সঙ্গে সংলাপ-নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপ করেছেন। নির্বাচনে তারা সব ধরনের সহায়তা করার প্রস্তাব দিয়েছেন। পরপর দু’টি নির্বাচন বিতর্কিত হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের নাম বাদ দিয়েছেন। তাই গত বছর ওয়াশিংটনে আয়োজিত ‘গণতন্ত্র সম্মেলন’ এ বাংলাদেশ দাওয়াত পায়নি। জো বাইডেন প্রশাসন ঘোষণা দিয়েছে যে দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক ও বাণিজ্য সে দেশগুলোর গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে যুক্তরাষ্ট্র বদ্ধপরিকর। শুধু তাই নয়, মানিবাধিকার ইস্যুতে বাংলাদেশের র্যাব এবং সংস্থাটির ৭ জন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এখনো আরো নিষেধাজ্ঞার শঙ্কা থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিদেশে কর্মরত রাষ্ট্রদূততে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
জাতীয় সংসদ থেকে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ৬ জন এমপি পদত্যাগ করেছেন। এখন জাতীয় সংসদে রয়েছে সরকারের অনুগত ‘নাচের পুতুল’ খ্যাত বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। বিগত দু’টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি আসন ভাগাভাগি করে নিয়েছে। এমনকি বিএনপির ছেড়ে দেয়া আসনের উপনির্বাচনেও দল দু’টি আসন ভাগাভাগি করে নেয়। ফলে দেশের ২২তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিপক্ষে জাতীয় পার্টির প্রার্থী দেয়ার সম্ভাবনা নেই। আওয়ামী লীগ থেকে যিনি মনোনয়ন পাবেন তিনি পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন।
জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ইনকিলাবকে বলেন, এখানে সংসদে অন্য দল প্রার্থী দিয়ে কী করবে? গোপন ব্যালটে ভোট হলেও তো সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ফ্লোর ক্রসিংয়ের কোনো সুযোগ নেই। দেখেন কয়েক দিন আগে আমেরিকার স্পিকার নির্বাচন দিয়ে টানা ১৫ দিন পরে তাদের দেশের স্পিকার নির্বাচিত হয়েছে। আর আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলের বাইরে গিয়ে ভোট দেয়ার সুযোগ নেই। বিদেশে আছে আমাদের এ ধরনের সুযোগ নেই।
আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে পারেন এমন যাদের নাম আলোচিত হচ্ছে তাদের মধ্যে সবার অগ্রভাগে রয়েছে ওবায়দুল কাদেরের নাম। শেখ হাসিনার বিশ্বাস ও আস্থাভাজন হওয়ায় তৃতীয় বারের মতো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। দেশি বিদেশি শক্তির চোখ এড়িয়ে এবার ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো ‘পাতানো’ নির্বাচন সম্ভব নয়। টানা তিন দফায় ক্ষমতায় থাকায় দলটির বিরুদ্ধে স্বাজনপ্রীতি, প্রশাসনে দলীয়করণ, দুর্নীতি এবং বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে দলটির বহু নেতার বিরুদ্ধে। ফলে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ক্ষমতাসীনদের কাছে যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি চ্যালেঞ্জিং। দেশের আন্দোলন মোকাবিলা এবং বিদেশি চাপ সামাল দিয়ে আওয়ামী লীগের অনুকূলে ‘নির্বাচনী হাওয়া’ রাখতে হবে প্রেসিডেন্টকেই। এ জন্যই একেবারে অনুগত ব্যক্তিকে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দেয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ ছাড়াও জাতীয় সংসদের বর্তমান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর নামও উচ্চারিত হচ্ছে। এর আগে বর্তমান প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ স্পিকার থেকে প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী শেখ হাসিনার অত্যন্ত বিশ্বস্ত এবং আস্থাভাজন হওয়ায় তাকে ২০০৯ সালে সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি করে প্রতিমন্ত্রী পরবর্তীতে দুই দফায় জাতীয় সংসদের স্পিকার করেন। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক সাবেক আমলা উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের নামও আলোচনায় রয়েছে। সাবেক আমলা খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন এবং ক্লিন ইমেজের অধিকারী হিসেবে পরিচিত। তবে সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ। ভারতঘেঁষা আমলা হিসেবে পরিচিত আবুল কালাম আজাদ মোদি সরকার তথা দিল্লির সাউথ ব্লকের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত।
প্রেসিডেন্ট সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন। তফসিল ঘোষণাসহ এ নির্বাচন পরিচালনা করে নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এই নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন। সংসদ সদস্যরাই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটার। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নির্বাচনি কর্মকর্তার সামনে নির্ধারিত ব্যালট পেপারে পছন্দের প্রার্থীর নাম ও নিজের স্বাক্ষর দিয়ে তা জমা দিতে হবে। ভোট শেষে নির্বাচন কমিশনার প্রকাশ্যে ভোট গণনা করবেন। সর্বাধিক সংখ্যক ভোটপ্রাপ্তকে প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী ঘোষণা করা হবে। আর সমান ভোট পেলে প্রার্থীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে ফল নির্ধারণ করা হবে। ১৯৯১ সালে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনের মাধ্যমে পার্লামেন্টারি পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা প্রবর্তনের পর থেকে এভাবেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হচ্ছেন। এর আগে জিয়াউর রহমানের শাসনামল থেকে ১৭ বছর প্রেসিডেন্টসিয়াল পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থায় জনগণের সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতেন। প্রেসিডেন্টের রানিং মেট হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্টও নির্বাচিত হতেন। দ্বাদশ সংশোধনীতে ভাইস প্রেসিডেন্টের পদ বাতিল করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন