স্টাফ রিপোর্টার : প্রতি বছরের মত এবারও ঈদ আনন্দের সাথে দর্শকদের জন্য বাড়তি আনন্দ নিয়ে আসছে হানিফ সংকেত এর ‘ইত্যাদি’। প্রতি ঈদেই থাকে ‘ইত্যাদি’র জমকালো এবং বিস্ময়কর আয়োজন। সব শ্রেণির দর্শক অধীর আগ্রহে ঈদের ‘ইত্যাদি’র জন্য অপেক্ষা করেন। এ কারণে ইত্যাদিকে বলা হয় শেকড় সন্ধানী ও গণমানুষের ইত্যাদি। ‘ইত্যাদি’র নিয়মিত পর্বগুলো ঢাকার বাইরে হলেও ঈদের ‘ইত্যাদি’ করা হয় ঢাকায়। কারণ এ সময়টা বর্ষাকাল হওয়ায় উন্মুক্ত স্থানে রাতে দর্শক নিয়ে অনুষ্ঠান করা ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এবারেও ঈদের ‘ইত্যাদি’ ধারণ করা হয়েছে মিরপুর শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে। বরাবরের মত এবারও একটি বিশাল সেটে কয়েক হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে ধারণ করা হয় ‘ইত্যাদি’। ইনডোর স্টেডিয়ামের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ স্থান জুড়ে নির্মাণ করা হয়েছিল নান্দনিক সেট। বর্ণাঢ্য এই আয়োজনে পুরো অনুষ্ঠানটিতে এক উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছিল। এবারও ‘ইত্যাদি’ শুরু করা হয়েছে, ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ’ গানটি দিয়ে। গান এক হলেও প্রতিবারের মত এবারও রয়েছে শিল্পী নির্বাচন এবং চিত্রায়নে বৈচিত্র্য। গানটিতে অংশগ্রহণ করেছেন ইত্যাদিতে প্রদর্শিত ব্রাহ্মনবাড়িয়ার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হেলাল মিয়ার শিল্পী পরিবার এবং তাদের নেতৃত্বে আরো শতাধিক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিল্পী। এবারের ঈদ ‘ইত্যাদি’তে একটি দেশাত্মবোধক গান গেয়েছেন শিল্পী এ্যান্ড্রু কিশোর। এবারের গানটি তৈরি করা হয়েছে নারী নির্যাতন, তরুণদের মূল্যবোধ ও শিশু অধিকার নিয়ে। আগামী প্রজন্মের জন্য এমন একটি দেশ আমরা রেখে যেতে চাই যার পরিবেশ হবে দূষনমুক্ত, নির্যাতনমুক্ত ও মাদকমুক্ত। এই ভাবধারায় গানটি লিখেছেন খ্যাতিমান গীতিকার মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান এবং সুর করেছেন আলী আকবর রূপু। গানটির চিত্রায়নে এ্যান্ড্রু কিশোরের সঙ্গে কোরিওগ্রাফী করেছেন ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট গার্লস পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ এর শতাধিক শিক্ষার্থী। একটি বিশেষ পর্ব হচ্ছে ৪ মিনিটের নাটক। যেখানে দেখা যাবে ভিনগ্রহের তিন মানবের এই পৃথিবী নামক গ্রহে আগমন ও ভিন্ন অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে যাওয়া। ব্যতিক্রমী এই নাট্যাংশে অংশ নিয়েছেন অভিনেতা ও পরিচালক শহীদুজ্জামান সেলিম, মীর সাব্বির এবং মডেল-অভিনেতা ঈমন এবং একটি বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় চিত্রনায়ক আলমগীর। প্রতি ঈদের ইত্যাদির মত এবারের ‘ইত্যাদি’তেও একটি ভিন্ন আঙ্গিকের নাচের আয়োজন রয়েছে। আর এতে অংশগ্রহণ করেছেন বিনোদন অঙ্গণের চার তারকা শিল্পী চিত্রনায়ক ফেরদৌস, চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা, মডেল অভিনেতা নোবেল ও অভিনেত্রী অপি করিম। তাদের সঙ্গে রয়েছেন প্রায় অর্ধশত নৃত্যশিল্পী। নৃত্য পরিচালনা করেছেন ওয়াসেক। ‘ইত্যাদি’র নানা চমকের একটি হচ্ছে বিশেষ মিউজিক্যাল ড্রামা। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে যাওয়ার বিড়ম্বনা এবং টেলিভিশনের মত আমাদের দৈনন্দিন জীবনে রিমোটের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে দু’টি ভিন্ন ভিন্ন মিউজিক্যাল ড্রামা করা হয়। একটিতে অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় অভিনয় তারকা চঞ্চল চৌধুরী আর একটিতে অভিনেতা সাঈদ বাবু। সঙ্গে আরো অভিনয় করেছেন আব্দুল আজিজ, কাজী আসাদ, সুব্রত, রতন খান, রকিবুল আলম ও মুকুল সিরাজসহ আরো অনেকে। শুধু ধারণস্থানের পরিবর্তনেই নয়-প্রায় দুই যুগ ধরে ‘ইত্যাদি’তে বিদেশী নাগরিকদের দিয়েও আমাদের লোকজ সংস্কৃতি, বিভিন্ন গ্রামীণ খেলাধুলা, ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে নিয়মিতভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। গ্রামের সহজ-সরল মানুষের চরিত্রে অভিনয় করিয়ে তুলে ধরা হচ্ছে গ্রামীণ বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান ও সমস্যা। বিদেশীদের নিয়ে এবারও রয়েছে তেমনি একটি ব্যতিক্রমী আয়োজন। এই পর্বটিতে সারা পৃথিবীর নানান দেশের অর্ধ শতাধিক বিদেশী নাগরিক অংশগ্রহণ করেছেন। আর এবারের বিষয়বস্তু বাল্য বিবাহ। প্রতি ঈদের মত এবারও রয়েছে ব্যাপক আয়োজনে বিষয় ভিত্তিক দলীয় সঙ্গীত। সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত কিছু বিষয় নিয়ে তৈরি এবারের দলীয় সঙ্গীতে অংশগ্রহণ করেছেন ‘ইত্যাদি’র নিয়মিত নৃত্যশিল্পীরা। এই পর্বের নৃত্য পরিচালনা করেছেন মামুন। ‘ইত্যাদি’র দর্শক নির্বাচন প্রক্রিয়া থাকে ভিন্ন রকম। এবারও তার ব্যাতিক্রম হয়নি। প্রতিটি দর্শকের হাতে একটি করে বর্ণাঢ্য উপকরণ দিয়ে সেখান থেকে বাছাই করা হয়েছে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বের জন্য ৪ জন দর্শক। নির্বাচিত দর্শকদের সাথে পরবর্তী পর্বে অংশগ্রহণ করেন ফোক সম্রাজ্ঞী মমতাজ। তবে এবার ইত্যাদির দর্শকরা তাকে দেখবেন ভিন্নরূপে। গান নয়-অভিনয়ে। রয়েছে চার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বোনের ঈদ উদযাপন নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন। মামার মানা সত্তে¡ও এবার ঈদেও মৌসুমী ব্যবসায়ী ভাগ্নে নতুন ব্যবসার পরিকল্পনা করেছে। কি সেই ব্যবসা? আর ওদিকে নানী-নাতিকে এবার দেখা যাবে ষ্টুডিওতে দর্শকদের সামনে। নাতির টেলিভিশনে মোবাইল কোর্ট চাওয়া ও আরো অন্যান্য নানা বিষয় তর্ক-বির্তক। ভাগ্নের ব্যবসা এবং নাতির তর্ক-বির্তকের বিষয় সম্পর্কে জানতে হলে ঈদ পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে। এছাড়া ঈদকে ঘিরে ডজনখানেক বিদ্রæপাত্মক রসালো নাট্যাংশ রয়েছে। সেলফী ভাইরাস ও সাবধানতা, ফেসবুকের লোড, ঈদের অনুষ্ঠান ও বাহারী পরিকল্পনা, দোরগোড়ায় ঈদের রান্না, মূল্যহ্রাস না মূল্যফাস?, গানে গানে রোগীর চিকিৎসাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আরো কয়েকটি নাট্যাংশ রয়েছে। ‘ইত্যাদি’র শিল্প নিদের্শনা করেছেন যথারীতি মুকিমূল আনোয়ার মুকিম। পরিচালকের সহকারী হিসাবে ছিলেন রানা সরকার ও এম.জি.এ মামুন। ইত্যাদি রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। নির্মাণ করেছে ফাগুন অডিও ভিশন, স্পন্সর করেছে কেয়া কস্মেটিকস্ লিমিটেড। ঈদের পরদিন রাত ১০টা ১০ মিনিটে ‘ইত্যাদি’ একযোগে প্রচার হবে বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে-এ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন