ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে একাধিক সশস্ত্র ডাকাত ও ছিনতাইকারী দল সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সংঘবদ্ধ চক্রটি যাত্রী পরিবহনের নামে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে। ছিনতাই করে ব্যর্থ হলে অথবা ছিনতাই কাজ শেষ হলে যাত্রীদেরকে হত্যা করে সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়।
বিশেষ করে রাতে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস নিয়ে স্টেশন থেকে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার নামে সুবিধাজনক স্থানে ওঁৎ পেতে থাকে ডাকাত দল। পরে নির্জন স্থানে নিয়ে সর্বস্ব কেড়ে নেয়। তবে এই চক্রটি মহাসড়কের চৌদ্দগ্রাম অংশে সক্রিয়। এরই মধ্যে চৌদ্দগ্রাম থানা পুলিশ ও পুলিশ ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (পিআইবি) এই চক্রের অধিকাংশকেই গ্রেফতার করে। উদ্ধার করা হয়েছে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দেশিয় অস্ত্র। সংঘবদ্ধ চক্রটির হাতে খুন হচ্ছে জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ।
সম্প্রতি মহাসড়কে কুমিল্লার অংশে যাত্রী পরিবহনের নামে সশস্ত্র ডাকাত দলের হাতে কয়েকটি নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মহাসড়কের চান্দিনায় পিকআপে যাত্রী পরিবহনের নামে কথিত চালক ও হেলপারের হাতে খুন হন কাপড় ব্যবসায়ী তোফাজ্জল হোসেন। এছাড়াও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামে ডাকাত দলের হাতে মোক্তার হোসেন সৈকত নামে এক যুবক খুন হওয়ার বিষয়টি গত শনিবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
এর আগে গত ৯ জানুয়ারি ঢাকা থেকে গাড়িযোগে কুমিল্লায় আসা যুবলীগ নেতা খায়রুল আলম সাধনের লাশ উদ্ধার করা হয় মহাসড়কের সদর দক্ষিণ এলাকা থেকে। এ ঘটনার প্রায় এক মাস অতিবাহিত হলেও মামলার তদন্ত সংস্থা ডিবি পুলিশ হত্যাকান্ডের রহস্য বের করতে পারেনি। তবে সম্প্রতি জেলা পুলিশ মহাসড়কের কয়েকটি স্থানে অভিযান চলিয়ে রাতে ডাকাতি ও ছিনতাইকালে একাধিক সশস্ত্র ডাকাত ও ছিনতাইকারী চক্রকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে বলে জানিয়েছেন কুমিল্লার পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম।
তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘটনার ১৬ দিনের মধ্যে সৈকতের ঘাতক ছিনতাইকারী ফেনীর সদরের নোয়াবাদ গ্রামের আবুল হাসনাত ওরফে তারেক, দক্ষিণ শর্শদি গ্রামের সৈয়দ হাফিজুর রহমান সাইফুল ও কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার বাতাখালী গ্রামের মো. রাসেলকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ওসমান গনি জানান, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে তারা মহাসড়কে সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য। গত ২০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় তারা একটি প্রাইভেটকার (ঢাকা-মেট্রো গ-২৯-৩৫৯৪) ভাড়া নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে বের হয়। ওই রাতে তারা ফেনী থেকে কুমিল্লার পদুয়ার বাজার পর্যন্ত মহাড়কের কয়েকটি স্থানে টাকা ও মোবাইল ছিনতাই করে। পরে ফেনী ফেরার পথে রাত দেড়টার দিকে চৌদ্দগ্রামের মিরশ্বানী বাজার এলাকায় সড়কের পাশে সৈকতকে হাঁটতে দেখে তাকে টানাহেচড়া করে প্রাইভেটকারে তুলে নেয় এবং মারধর করে মোবাইল ও টাকা কেড়ে নিয়ে লাথি মেরে তাকে সড়কে ফেলে দিয়ে গাড়ি চাপায় হত্যা করে।
এ দিকে গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জেলার চান্দিনা উপজেলার গোবিন্দপুর এলাকায় ছুরিকাঘাতে তোফাজ্জল হোসেন নামে এক কাপড় ব্যবসায়ী নিহত হন। এ সময় আহত হন নিহতের শ্যালক ফয়সাল রহমান। এ ঘটনায় ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত পিকআপ ও ছিনতাইকারী চক্রের দুই সদস্য গাড়ি চালক ও সহযোগী চালককে আটক করে পুলিশ। গত ৩ ফেব্রুয়ারি নারিকেল ব্যবসায়ী চারু মিয়ার লাশ কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পাশ থেকে অজ্ঞাত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। বুড়িচং থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক জানান, বুড়িচংয়ের পারুয়ারা এলাকার কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পাশ থেকে আজ্ঞাত অবস্থায় এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয় এবং অজ্ঞাত অবস্থায় লাশটি দাফন করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে বুড়িচং থানায় হত্যা মামলা করে।
গত ১৯ জানুয়ারি রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাবুর্চি নামক এলাকায় পুলিশ এ অভিযান চালিয়ে এক নারীসহ ডাকাত দলের ১১ সদস্যকে গ্রেফতার করে।
এর আগে গত ১৭ জানয়ারি রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসড়কের বুড়িচং উপজেলার কবিলা মনিপুর এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে একটি বিদেশি পিস্তল, গুলি ও দেশিয় অস্ত্রসহ ৫ ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে বুড়িচং থানা ও দেবপুর ফাঁড়ি পুলিশ। কুমিল্লা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, মহাসড়কে ছিনতাই ও ডাকাতি প্রতিরোধে পুলিশ তৎপর রয়েছে। ইতোমধ্যে পুলিশ বেশ সফলতাও রয়েছে। অধিকাংশ ঘটনারই রহস্য বের করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন