রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা হতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ৬ ভুয়া ডিবি পুলিশকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
র্যাব বলছে, গ্রেপ্তার চক্রের সদস্যরা ডিবি পুলিশের জ্যাকেট সদৃশ্য পোষাক পড়া অবস্থায়, হাতে ওয়াকিটকি সেট ও হ্যান্ডকাপ নিয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, গুলিস্থান, মতিঝিল, বাইতুল মোকারমসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাংক থেকে মোটা অংকের টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তি ও বিভিন্ন প্রয়োজনে টাকা নিয়ে চলাচলকারী ব্যক্তিদের টাকা ও অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ ডাকাতি করত।
সোমবার রাতে রাজধানী যাত্রাবাড়ী থানার ধলপুর কমিউনিটি সেন্টারের এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করে র্যান-১০।
ভুয়া ডিবি পরিচয় দেয়া গ্রেপ্তারদের নাম হলো- মো. সবুজ খাঁন (৪৬), মো. মিন্টু পাটোয়ারী (৪০), মো রাসেল মোল্লা (৪৫), মো. ইকবাল মিয়া (৩৯), মো. মনিরুল ইসলাম (৪০) ও মো. খোকন মিয়া (৪৫)।
এসময় তাদের কাছ থেকে ৩ টি ভুয়া ডিবি পুলিশের জ্যাকেট, ২ টি ওয়াকিটকি সেট, ১ টি হাতকড়া, ১ টি খেলনা পিস্তল, ১টি হ্যান্ড ফ্লাশ লাইট, ১টি পুলিশ মনোগ্রাম সম্বলিত স্টিকার, ৭ টি মোবাইল ফোন ও ১০ হাজার ৯৫০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র্যাব-১০ এর অধিনায়ক
এ্যাডিশনাল ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।
সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব জানায়, তারা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সদস্য। তারা নিজেদেরকে ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, গুলিস্থান, মতিঝিল, বাইতুল মোকারমসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাংক থেকে মোটা অংকের টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তি ও বিভিন্ন প্রয়োজনে টাকা নিয়ে চলাচলকারী ব্যক্তিদের টাকা ও অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ ডাকাতি করে আসছিল। সে ভিকটিমকে অনুসরন করত এবং ভিকটিমের বর্ণনা ও অবস্থান সম্পর্কে তাদের সমন্বয়ক মিন্টুকে জানায়।
র্যাবের এ্যাডিশনাল ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ বলেন, মিন্টু পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী সে ও তার অন্যান্য সহযোগীরা ডিবি পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিত। ভিকটিম কিছু বুঝে উঠার আগেই তাকে মাদক কারবারি বা মামলার আসামীসহ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তাদের সাথে থাকা মাইক্রোবাসে উঠিয়ে মারধর করত এবং দ্রুত ওই স্থান ছেড়ে অন্য স্থানে চলে যেত।
পরবর্তীতে ভিকটিমের কাছে থাকা টাকা, মোবাইল ও স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান সকল জিনিসপত্র নিয়ে ভিকটিমকে সুবিধাজনক স্থানে মাইক্রোবাস থেকে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যেত।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার সবুজ খাঁন উক্ত ভুয়া ডিবি পুলিশ চক্রের মূলহোতা। সে ডাকাতি কাজ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি (ডিবি পুলিশের জ্যাকেট, ওয়াকিটকি, হাতকড়া, খেলনা পিস্তল ইত্যাদি) সরবারহকারী হিসেবে কাজ করত। ডাকাত দল তার সরবারহ করা সরঞ্জামাদি ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি করত। তার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী ও পল্টন থানায় একই অপরাধে ৩ টি মামলা রয়েছে।
র্যাব-১০ এর অধিনায়ক বলেন, গ্রেপ্তার মিন্টু পাটোয়ারী পেশায় একজন ছদ্মবেশী সিএনজি ও অটো-রিক্সা চালক। এই পেশার আড়ালে সে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে ডাকাতির জন্য তথ্য সংগ্রহ করত। পরবর্তীতে তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী সুবিধাজনক সময় উক্ত বাড়ী/ দোকান/ ব্যাংক/ ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তিদের পথরোধ করে তাদের সর্বস্ব লুটে নিত।
তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তার রাসেল মোল্লা (৪৫) পেশায় একজন গাড়ী চালক। সে তার এই পেশার আড়ালে ডাকাত দলের গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করত। সে ডাকাত সরদার সবুজের আদেশ অনুযায়ী বিভিন্ন ব্যাংক ও জনবহুল এলাকায় অবস্থান করে ব্যাংক থেকে মোটা অংকের টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তিদেরকে নির্দিষ্ট করে ভিকটিমকে অনুসরন করে ভিকটিমের বর্ণনা ও অবস্থান সম্পর্কে তাদের সমন্বয়ক মিন্টুকে জানায়।
র্যাব কর্মকর্তা ফরিদ উদ্দিন বলেন, মিন্টু রাসেলের দেয়া তথ্য মতে ভিকটিমের কাছে উপস্থিত হয়ে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাকে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে তাদের সর্বস্ব লুটে নিত। রাসেলের বিরুদ্ধে ফরিদপুরের বোয়ালমারী ও গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার ইকবাল মিয়া ডাকাতির জন্য সবুজ এর অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করত। সে প্রায় ৩ বছর ধরে নিজ বাড়ী মাদারীপুর জেলা শিবচর থেকে ঢাকায় এসে উক্ত দলের সাথে যুক্ত হয়ে ডিবি পুলিশ সেজে ডাকাতি করে আবার শিবচর চলে যেত। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বগুড়া শেরপুর থানায় ১টি দস্যুতার মামলা রয়েছে।
গ্রেপ্তার মনিরুল ইসলাম পেশায় একজন দর্জি। গত ১ বছর ধরে সে তার দর্জি পেশা ছেড়ে ডাকাত দলের সাথে যুক্ত হয়ে মিন্টুর অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছিল বলেও জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন