শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

চীন থেকে ১৭১ জনকে না ফেরানোর পরামর্শ চীনা রাষ্ট্রদূতের

বাংলাদেশে কোনো করোনা আক্রান্ত রোগী নেই

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ৭:৪১ পিএম

## গুজব থেকে বিরত থাকার আহবান আইইডিসিআর’র

## চীন-সিঙ্গাপুর থেকে ফিরলেই করোনাভাইরাস আক্রান্ত নন

## কার্যক্রম ও প্রস্তুতি নিয়ে সন্তুষ্টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির


কেউ চীন কিংবা সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে আসা মানেই তিনি করোনাভাইরাস আক্রান্ত, এমন ভাবা ঠিক নয়। যারা আসছেন তারা বিভিন্ন স্থানে স্ক্রিনিং হয়ে আসছেন। অতিরিক্ত সতর্কতা হিসাবে তারা ‘সেলফ কোয়ারেন্টাইনে’ থাকবেন। সবধরনের নিয়ম মেনে চলবেন এবং জনসমাগম স্থলে যাওয়া থেকে বিরত থাকবেন। তাদের জোর করে হাসপাতলে নেয়ার প্রয়োজন নেই। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) নতুন করোনাভাইরাস সংক্রান্ত নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউ (আইইডিসিআর)’র পরিচালক প্রফেসর ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এসব কথা বলেন। রাজধানীর মহাখালীতে আইইডিসিআর ভবনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রফেসর সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, বিদেশ থেকে ফিরেছে এমন সংবাদ পেয়ে অতি উৎসাহী হয়ে কাউকে বাড়ি থেকে ধরে আনার প্রয়োজন নেই। স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শ ছাড়া কাউকে ধরে নেয়া, হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন নেই। এতে তারা অনেক অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিভাগের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। চীনের সব প্রদেশে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়নি। সুতরাং চীন থেকে এলেই যে তারা করোনা আক্রান্ত রোগী হবে, এমন কোনও বিষয় নেই। এখন যেহেতু চীনের সঙ্গে সিঙ্গাপুর যুক্ত হয়েছে এবং সেখানে পাঁচ জন বাংলাদেশী আক্রান্ত হয়েছেন, তাই সিঙ্গাপুর ফেরতদের নিয়েও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা ৬৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করেছি, কারও শরীরেই এই ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। এক্ষেত্রে বলা যায়, বাংলাদেশে এখন কোনো করোনা আক্রান্ত রোগী নেই। তাই গুজব ছড়ানো থেকে সবাইকে বিরত থাকার অনুরোধ জানান তিনি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভা : সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শেখ ফজলুল করিম সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় কমিটির সদস্য স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কার্যক্রম ও সংক্রমণ মোকাবেলার প্রস্তুতি তুলে ধরেন স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, আইইডিসিআর-এর পরিচালক ও রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক। সংসদীয় কমিটির সদস্যবৃন্দ চলমান কার্যক্রম ও প্রস্তুতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন ও সকল প্রকার সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

ফের বেড়েছে নতুন রোগী, মৃত্যু ১৭৭৫ জন : নতুন করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে চীনের হুবেই প্রদেশে নতুন রোগীর সংখ্যা তিন দিন কমার পর ফের বাড়তে শুরু করেছে। সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭৭৫ জনে। এ পরিস্থিতিতে ভাইরাসের বিস্তার কমাতে হুবেই প্রদেশে চলাফেরার ওপর নতুন করে কড়াকড়ি আরোপ করেছে চীন সরকার। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির মূল ভূখন্ডে গতকাল রোববার আরও ২ হাজার ৪৮ জনের শরীরে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আগের দিন নতুন রোগীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৯ জন। সব মিলিয়ে চীনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার ৫৪৮ জনে। আর অন্তত ২৬টি দেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ৭১ হাজার ছাড়িয়েছে। রোববার চীনে মোট ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে হুবেই প্রদেশেই মারা গেছেন ১০০ জন। এতে চীনের মূল ভূখন্ডে নতুন করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ১৭৭০ জনে। তাইওয়ানে রোববার প্রথম এ ভাইরাসে আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে। চীনের মূল ভূখন্ডের বাইরে এর আগে ফ্রান্স, হংকং, ফিলিপিন্স ও জাপানে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ১৭৭৫ জনে। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত ১০ হাজার ৮৪৪ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

চীনের বাইরে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ইতোমধ্যে পাঁচশ ছাড়িয়েছে। তাদের বেশিরভাগই চীন থেকে সংক্রমিত হয়ে অন্য দেশে গেছেন। ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে উহানসহ কয়েকটি শহর গত জানুয়ারি থেকেই কার্যত অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। রোববার হুবেই প্রদেশে যানবাহন চলাচলের ওপর নতুন করে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। জরুরি সেবার গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো ধরনের যানবাহন রাস্তায় না বের করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কলকারাখানা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

চীন থেকে ১৭১ জনকে না ফেরাতে পরামর্শ : চীনের হুবেই প্রদেশে অবস্থানরত ১৭১ বাংলাদেশীকে এখনই দেশে না ফেরানোর পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। ‘ঝুঁকি’ বিবেচনায় নিয়ে দেশের এবং জনগণের স্বার্থ চিন্তা করেই বাংলাদেশকে এমনটি ভাবার কথা বলেছেন তিনি। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিকাব আয়োজিত ‘ডিকাব টকে’ রাষ্ট্রদূত এ কথা বলেন। করোনাভাইরাস ছড়ানোর পর গত ১ ফেব্রুয়ারি হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ৩১২ জন বাংলাদেশীকে বিশেষ একটি ফ্লাইটে ঢাকায় ফেরত আনা হয়। তাদের আশকোনার হজ ক্যাম্পে ১৪ দিনের জন্য বিচ্ছিন্ন অবস্থায় (কোয়ারেন্টাইন) রেখে সুস্থতা নিশ্চিত হওয়ার পর ছাড়া হয়েছে। হুবেই প্রদেশ থেকে ফিরতে আগ্রহী আরও ১৭১ বাংলাদেশী। রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, ১৭১ জনকে এখনই ফেরত আনার প্রয়োজন নেই। তারা যেখানে আছেন, সেখানে সুরক্ষিতই আছেন।

বরগুনায় চীন ফেরত এক শিক্ষার্থী হাসপাতলে : বরগুনায় চীন ফেরত এক শিক্ষার্থীকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পটুয়াখালীর স্বাস্থ্য বিভাগের দুই কর্মকর্তা সোমবার রোগীর নমুনা সংগ্রহ করেন। দুপুরে সিভিল সার্জন অফিসে এক সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান সিভিল সার্জন। এই শিক্ষার্থী গত ১৫ ফেব্রুয়ারি চীন থেকে দেশে ফিরেন। গতকাল রোববার সকালে বরগুনা পৌছালে তার শরীরে জ্বর অনুভু হয়। এ সময় স্বজনরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করান। চিকিৎসকরা জানান, এই শিক্ষার্থী চীন থেকে ৩৬ ঘন্টা যাত্রা করে দেশে ফিরেছেন। এতে জ্বর হতে পারে। আতঙ্ক হওয়ার কিছু নেই।

হবিগঞ্জে চীন ফেরত শিক্ষার্থী তালাবদ্ধ : হবিগঞ্জে চীন ফেরত এক শিক্ষার্থীকে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। দু’দফায় তিনি হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেলেও পুলিশের মাধ্যমে তাকে খুজে আনা হয়। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, রায়হান চীনের জিয়াংসুতে একটি মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থী। গত ৮ ফেব্রুয়ারী তিনি দেশে আসেন। ১৪ ফেব্রুয়ারী তিনি জ্বর, কাশি ও ঘাড় ব্যথা অনুভব করলে পরিবারের সদস্যরা সদর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। এতে আতঙ্কিত হয়ে তিনি বাড়ি চলে যান। গত রোববার পরিবারের সদস্যদের বুঝিয়ে তাকে আবার হাসপাতালে নিয়ে আসলে তিনি হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান। পরবর্তীতে পুলিশের মাধ্যমে তাকে ধরে এনে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন