বহু প্রতীক্ষিত ই-পাসপোর্ট পেতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ গ্রাহকদের। পাসপোর্ট আবেদনকারীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়লেও অনলাইনে আবেদন করতে গিয়েও বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে আবেদনকারীদের। উদ্বোধনের পর গত ২৮ দিনে ঢাকায় অনলাইনে ২২ হাজারের অধিক আবেদন পড়েছে।
আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা ও ছবি তোলার জন্য লম্বা লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে গ্রাহকদের। আবেদন যাচাইয়ের বারকোড রিডার মেশিন ঠিকমতো রিড করতে পারছে না। আবেদনকারীর ছবি, ১০ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের মণির ছবি নিতে সময় লাগছে বেশি। একই সাথে অনেকের ঠিকানাও মিলছে না। উল্লেখ্য গত ২২ জানুয়ারি বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম।
ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট বিভাগের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, আবেদনকারীর ছবি, আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের মণির ছবি নিতে বেশি সময় লাগছে। কারও কারও চোখের মনি ও আঙ্গুলের ছাপ মিলছে না। এতে বেশি সময় লাগছে। এরই মধ্যে প্রায় দেড় হাজার ই-পাসপোর্ট গ্রাহকের হাতে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে।
তিনি আরও জানান, উদ্বোধনের পর এখন পর্যন্ত ঢাকা শহরে প্রায় ২২ হাজার আবেদন পড়েছে। ওই আবেদনগুলো আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে ডেলিভারি দেয়ার চেষ্টা করছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃৃপক্ষ বলছেন, ইতোমধ্যে দ্রুত প্রিন্টের জন্য মেশিন কেনার জন্য টেন্ডার দেয়া হয়েছে। এছাড়াও জনবলও বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। প্রিন্ট মেশিন কেনা হলে ও জনবল বাড়ালে এই সঙ্কট দ্রুত সমাধান হবে।
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিন আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, ই-পাসপোর্টের আবেদন জমা দেয়ার জন্য অনেক লোক অপেক্ষমাণ রয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ এক তলা থেকে অন্য তলায় ছুটাছুটি করছেন। আবার কেউ কেউ ওই রুম থেকে ওই রুমে যাচ্ছেন। কিন্তু তাদের সমস্যার সমাধান খুঁজে পাচ্ছেন না।
পাসপোর্ট অফিসের ছয়তলায় পরিচালকের রুমে পাশে রনি আহমেদ নামের কাছে তার সমস্যার কথা জানতে চাওয়া হয়।
তিনি দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, তার বাসা রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়। তার ভাই, ভাবী ও ভাতিজার জন্য ই-পাসপোর্টের আবেদন করেছেন। আবেদন জমা দেয়ার সময় গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পাসপোর্ট ডেলিভারি দেয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু ওই দিন শুক্রবার ছিল। তাই ওই দিন পাসপোর্ট নিতে আসেন নাই তারা। পরবর্তীতে গত রোববার পাসপোর্ট নিতে আসা হলে তার ভাইয়ের পাসপোর্টের সমস্যা ধরা পড়ে।
তিনি আরো জানান, জমা দেয়ার সময় পাসপোর্ট অফিসের কর্তৃপক্ষ কিছু বলে নাই। কিন্তু গত রোববারে পাসপোর্ট নিতে এসে জানতে পারেন ব্যাংকে ঠিক মত টাকা জমা দেয়া হয়নি। ই-পাসপোর্টের টাকা জমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন এটা এমআরপি পাসপোর্টের টাকা জমা দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে গত সোমবার রাতে ফের ই-পাসপোর্টের টাকা জমা দেন। পরে মঙ্গলবার সকালে রনি তার ভাইকে নিয়ে ফের আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে আসেন এবং টাকা জমা দেওয়ার রশিদ জমা দেন। কিন্তু কর্মকর্তারা কখনো তিন তলায়, কখনো ৪ তলায়, কখনো ৫ তলায়, আবার কখনো ছয় তলায় যেতে বলেন। এভাবে সকাল ১০টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত বিভিন্ন রুমে ও তলায় যাতায়াত করছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
রনি আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ই-পাসপোর্ট চালু করার আগে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ভালো করে প্রশিক্ষণ দেয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজেও অনেক কিছু বুঝেন না, তাই পাসপোর্ট করতে আসা সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা উজ্জ্বল এ গোমেজ নামের অপর এক ব্যক্তি জানান, তার এমআরপি পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়াতে ই-পাসপোর্ট করতে আসেন। কিন্তু সেখানে ভোগান্তি দেখে তিনি আবেদন জমা না দিয়েই বাসায় ফিরে যাচ্ছেন। আরো কিছু দিন পর তিনি আবেদন জমা দিবেন বলে জানান।
পাসপোর্ট অফিসের ভেতরে গিয়ে দেখা গেছে, ই-পাসপোর্টের জন্য আলাদা বিভাগ খোলা হয়েছে। সেখানেও লম্বা লাইন রয়েছে। সব কিছুই করতে হচ্ছে অনলাইনে। অনলাইনে আবেদন করার পর কারও পাসপোর্ট যদি প্রস্তুত হয়ে যায় তাহলে ফিরতি বার্তা দিয়ে তা আবেদনকারীকে জানিয়ে দেয়া হয়। এ জন্য কেউ কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
পাসপোর্ট অফিসের বাহিরে দেখা গেছে অন্য চিত্র। সেখানে দেখা যায়, ই-পাসপোর্টের আবেদন ফরম পূরণ করে দেয়ার জন্য রাস্তার ফুটপাতে বেশ কয়েকটি ভাসমান দোকান বসানো হয়েছে। একটি টেবিল ও একটি চেয়ার দিয়ে বসানো দোকানগুলো পাসপোর্ট করে আসা লোকজন বসে অনলাইনে আবেদন করছেন। তবে আবেদনকারীদের কাছ থেকে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা করে নিচ্ছেন দোকানীরা।
আল আমিন নামের এক দোকানদার দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, অনেকেরই ই-পাসপোর্টের নতুন প্রযুক্তিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা তেমন নেই। একারণে তারা বাহিরে বসে অনলাইনে আবেদন করে দিচ্ছেন। তবে অনলাইনে আবেদন করার আগে ব্যাংকে টাকা জমা দিলে অনেক সময় সমস্যা হচ্ছেন। কি ধরনের সমস্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যাংক কর্মকর্তারা এমআরপি পাসপোর্টের টাকা জমা নিচ্ছেন এখনো। তাই যখন ই-পাসপোর্টের আবেদন করতে আসেন তখন ওই টাকা আর কাজে লাগে না। পরে আবার ব্যাংকে টাকা জমা দিতে হয়। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন অনেকেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন